ভাবতে ভীষণ অবাক লাগছে জানো
রান্নাঘের হাঁড়িতে ভাত ফুটছে
মাইক্রোওভেনে গ্রিলড্ হচ্ছে
তান্দুরি চিকেন
আর আমি কেমন বেপরোয়া
ভাবে সাজতে বসেছি আয়নার সামনে !
তা’ও আবার পনের বছর পর
পুরনো প্রেমিকের সঙ্গে দেখা করতে যাব বলে!
চল্লিশের ঘরে পা রাখা
বুড়ি’হতে চলা মহিলার কি
এটা শোভা পায়?
তবু আমি সাজছি অনিন্দ্য
অনেক সুন্দর করে, যত্ন করে,
যতটা যত্ন করে এই সংসারটাকে
আগলে রেখেছি পনের বছর ধরে,
যতটা যত্ন করে তোমাকে লুকিয়ে
রেখেছি মনের অত্যন্ত গোপনে
যতটা যত্ন করে দীপন, রিয়ার
মা হওয়ার দায়িত্ব পালন করেছি
অভিষেককে সব সুখ দেয়ার চেষ্টা করেছি,
তার চেয়ে অনেক বেশি যত্ন করে
আজ তোমার জন্য আবার সাজতে বসেছি।

রান্নাঘের হাঁড়িতে ভাত ফুটছে
মাইক্রোওভেনে গ্রিলড্ হচ্ছে
তান্দুরি চিকেন
আর আমি- পনের বছর পরে
মেয়ের সাজের বক্স থেকে
লিপস্টিক বার করে ঠোটে বোলাচ্ছি
চোখে লাগাচ্ছি কাজল!


আমি বুড়ি হয়ে গেছি অনিন্দ্য
পনের বছরের সংসার জীবেন যতটা বুড়ি হওয়া যায় !
আমার ছেলে এ বছর
মাধ্যমিক দেবে, মেয়ের সেভেন!
আমার সিঁথির লাল সিঁদুরের
পাশে চুলে পাক ধরেছে,
চোখের তলায় ডার্ক সার্কেল-
আশি কেজির একটা মোটা
জীবন্ত স্তূপ বলতে পারো,
একটা সুখী সংসার চালান ছাড়া যার আর কোন আর্থিক মূল্য নেই।


তুমি কেমন আছ?
যৌবনের সেই ফ্রেঞ্চ কাট দাড়ি
ঝাঁকড়া চুল-তুমি নিশ্চই
এখনও সেরকমই আছ!
ছেলেরা বোধহয় বুড়ো হয় না,
আমার বরও হয় নি,
আমার মেয়ের দুনিয়ায় এখনোও সে’ই তার
স্বপ্নের রাজকুমার
ছেলে মাঝে মাঝে কি বলে জানো,
বলে ‘মা, বাবার পাশে তোমাকে
বাবার মা বলে মনে হয়,তুমি
তুমি একটু জিমটিমে যেতে পার না?’
সত্যি কি জিমে যেতে পারি অনিন্দ্য?
রান্নাঘরে গ্যাসে ভাত ফুটছে,
মাইক্রোওভেনে গ্রিলড্ হচ্ছে
তান্দুরি চিকেন!টিক্‌ টিক্‌ করে কানের সামনে
একটানা বাজছে
শয়তান ঘড়িটা-আমি কখন জিমে যাব আমি অনিন্দ্য
মাঝে মাঝে মনে মনে হয়
চিকেন নয়, এই সংসারে
প্রতিনিয়ত আমি গ্রিলড্ হচ্ছি
আমার মতো হাজার হাজারটা
চল্লিশ বছরের ‘বুড়ি’রা গ্রিলড হচ্ছে
আর সেই নির্যাস দিয়ে চলছে
এক একটা সুখি গৃহস্থি!
তবু সব ভুলে যাই অনিন্দ্য
সাড়ে চারটের কলিং বেলটা
বাজলে যখন দুটো কচি মুখ
ছুটে এসে জড়িয়ে ধরে বলে
-‘মা খেতে দাও বড্ড খিদে পেয়েছে’


ভুলে যাই সমস্ত কষ্ট যন্ত্রণা
যখন সারাদিনের নিঃস্বার্থ পরিশ্রম
করে আসা একটা মানুষ
ক্লান্ত মুখে এসে বলে
-‘একটু গরম চা কর তো
সারাদিন যা ধকল গেল’


ভুলে যাই অনিন্দ্য, ভুলে যাই নিজের পরিচয়,
নিজের অস্তিত্বের বাইরে
যে জগৎটা আছে, সেটাও তো আমারই হাতে গড়া!


আমি- পনের বছর পরে
তোমার জন্য আবার সাজতে বসেছি।
চল্লিশ পেরনো বুড়ির কি
আর উচিত তার পুরনো
প্রেমিকের সঙ্গে সেজে গুজে দেখা করতে যাওয়া?
আমার রান্নাঘরে গন্‌গনে আঁচে
সেদ্ধ হচ্ছে ভাত আর মাইক্রোওভেনে গ্রিলড্ হচ্ছে
তান্দুরি চিকেন।
পনের বছর পরে তোমার সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছি অনিন্দ্য!


তুমি আমায় চিনতে পারবে তো?
কি বলে পরিচয় দেব?
তোমার পনের বছরের পুরন প্রেমিকা?
নাকি বাংলায় সবচেয়ে কম নম্বর পাওয়া
ছেলেটির গার্জেন কলের
উত্তর দিতে আসা
একজন রেস্‌পনসেবল মা!


বল অনিন্দ্য এখন কোনটা আমার পরিচয়?
কোন পরিচয়টা বড় অনিন্দ্য