ছয় কাঠা জমি স্বামীসুত্রে পাওয়া।
ওই জমি টুকুই তার প্রাণ।
জমির সমস্ত মাটি তার হাতে যেন মায়ের স্পর্শ পায়,
স্নেহ পায়,ভালোবাসা পায়।
এই জমিতে লাঙল ধরা,
বীজবোনা,চাষ-আবাদ সমস্ত কিছু
শিখেছিল সে তার স্বামীর কাছে-
সাদা বিধবার শাড়ী পরনে-
আজ ওই ছয় কাঠা জমির সাথেই তার প্রেম-
যে মাটিকে আমরা মা বলে ডাকি,
সেই নারীর কাছে ওই মাটিই তার পুরুষ।
তার পাড় হীন সাদা থান কখনো হল সবুজ ধানের ক্ষেত-
কখনো হল মাটির রঙে রাঙ্গা-
কখনো বা ধান শিষের গন্ধ লেগে থাকে তার গায়ে –
সে শাড়ির রঙ বদলায় আউশে-আমনে
যেন, অতি সে যত্নে মাটির আলপনা এঁকেছে পৃথিবী-
তার সাদা শাড়ীর আঁচলে-কোচলে।
দিনের বেলা কোনদিন তাকে কেউ ঘরে থাকতে দেখেনি-
ভোর চার টার থেকে সন্ধ্যা-
পড়ে থাকে মাঠে কোদাল,কাস্তে নিয়ে-
দুটি শিশু সন্তান তার
বছর হয়তো বা ছয়-আট
মাটি, জল, কাদা, ঘাস মেখে
খেলে তারা জমির আলে বসে।
টক পান্তা, মুড়ি-লঙ্কা,দু-কুচি পেঁয়াজ
গামছায় থাকে বাঁধা-
ঘোমটা আড়ালে ঢাকা মুখ-
কোন এক গ্রামবাংলার কুলবধূ।
সোনালী ধানের আশায়
স্বপ্ন বুনে যায় একা একা শুধু -
বছর এর পর এসেছে নতুন বছর
কেটে গেছে মাঝে কত বসন্ত-
হিসাব রাখেনি সে-
সে শুধু মাঠে কাজ করে
লক্ষ্মী পুজোর দিনে মাঠে কাজ করে-
স্বরস্বতী পুজোর দিনে মাঠে কাজ করে-
দূর্গা পুজোর দিনে মাঠে কাজ করে-
তার জ্বর হলেও মাঠে কাজ করে।
যেন সোনালী ধান ফলানোই তার লক্ষ্মীপুজো,স্বরস্বতীপুজো,
দেবী দূর্গার প্রতি অঞ্জলি দান।
এক বুড়ো অশ্বথের গাছ-
সময় সাক্ষ্মী হয়ে বসে থাকে।
এক বাংলার অতি সাধারণ নারী-
মাটির প্রলেপ গায়ে মেখে-
কাজ করে মাঠে, কোদাল কাস্তে হাতে,
সে চাষ করে, চাষ করে এই পৃথিবীর বুকে।
কেউ খোঁজ রেখেছ কি তার-
ঘোমটা আড়ালে ঢাকা মুখ-
জল-কাদা মাখা সেকি বাংলার অপরূপ রূপ।