কাঁধে কাঁধ রেখে, গায়ে গায়ে লেগে, চাপাচাপি করে বসি,
ধিক! ধিক! ধিক! ধিধিক! শব্দে প্রাণের রাজ্যে আসি।
সবুজ, শ্যামল, সজীব প্রকৃতি, প্রাণ কচি তরতাজা,
একুশ'শ একরের রাজ্যখানিতে সবাই আমরা রাজা।
ষ্টেশন হতে পায়ে হেটে কভু, কভু রিক্সায় চড়ি,
পাঁচজনের এক মোটর গাড়ীতে ছয় সাতজন করি।
কেউ আসে সেথা ঘুমে ঢুলুঢুলু, কেউ পেট ভরে খেয়ে,
কেউ এসে যায় তড়িঘড়ি করে বাসি পেটখানা লয়ে।
কেউ ক্লাসে যায় কেউ ঝুপড়িতে, খেতে হবে আগে চা,
তা ছাড়া ক্লাসে মাথা ঝিমঝিম, ম্যাচ ম্যাচ করে গা।
ক্লাসে গেলে কেউ তারে ডেকে কই হাজিরাটা দিস মোর,
এসে কল দিস, আলীর দোকানে ভাউচার আছে তোর।
কত ভাউচার খেয়ে যায় তারা, কাড়িয়া প্লেটের খানা,
হাজিরা না দিয়া দিছি! দিছি! বলে সাত আট দিন টানা।
একে অপরের সহপাঠী যত তার চেয়ে আরো বেশী
ভাই বোন মত চলাফেরা সবে লাগেনা কে কোন দেশী।
একসাথে মিলে খেতে যায় কভু, কেউ একা চুপিচুপি,
কে কার সিঙারা খেয়ে যায় কবে, না দেখে মতন লুপি।
খেতে বসা যেন আড্ডা মাতানো, হাসি হৈ খিল খিল,
খেয়ে আসা সে যে আরো খেয়ে যায়, পরের চড়ায়ে বিল।
পাঁচ টাকার এক চায়ের কাপেতে, এক চুমু করে নিই,
এক এক করে টাকা তুলে পাঁচে পাঁচটাকা দাম দিই।
ডিম খিচুড়ির সুবাস ছড়ানো সারাটা সকাল জুড়ি,
কেউ নুডলস ছোলায় মেশায়ে, কেউ চা'য়ে ডালপুরি।
পেঁয়াজু, বেগুনি, রোল, সমুচার পসরা সাজানো সারি,
পাস্তা, চিকেন-আলু-ডিম চপ, ডিম চিকেনের কারি।
সারি সারি এত নাস্তা বানানো, তেলে ভাজা সব বুঝি,
এসিডিটি ভয়ে মুখ ফিরে কভু, কলা বন কই খুজি।
খাবারের কিছু বাসি পড়ে যদি, লঙ্কা কান্ড কত,
"চিনোস আমারে! দোকান ভাঙিব!" শাসায় আপন মত।
"দোকান করিবি, না করিবি না বল!" দোকানীও কহে ডাকি,
"ভুল আজিকে হইয়াছে তবে রোজ হইবে নাকি?"
ক্ষণেক পেরুতে সব মিটমাট, যে যার আপন কাজে,
দুপুর বেলার ঝুপড়ি দোকান সেজে নেয় নয়া সাজে।
মুরগীর রানে, ভরতার ঘ্রাণে, পেটে পেট পোকা ডাকে,
উদর ভর্তি করিবার লাগি, ছুটে যাই একে একে।
এক টেবিলেতে মুখোমুখি কভু দুই টেবিলেরে এক,
পরের টেবিলে কভু কাটে কেউ জন্মদিনের কেক।
আচার, শুটকি ও মাছের ভরতা, ভাজা কত মাছ আরো,
কেউ খেতে চায় সালাদ-খিচুড়ি ডিম ভাজা লাগে কারো।
এক ভর্তায় চার জন খেয়ে, ঢেকুর তুলিয়া যাই,
মুরগীর পিস চারভাগ করি চারজনে মিলে খাই।
ভাগ বড় ছোট, কত কাড়াকাড়ি! কে কার বাসন টানে,
ঝগড়াঝাটিও মারামারি সম, কে বা কার কথা শুনে।
কেউ পাঁচ টাকা বেশী নাহি দিবে, যে যার টাকাই দেয়,
একটাকা যদি ফিরে আসে কভূ, তাতে কেউ ঝাঁপ দেয়।
তারপর কারো তাড়াহুড়া কতো, এই বুঝি ট্রেন ছুটে,
একসাথে যেতে নাহি পারে তাতে কত বন্ধন টুটে।
দেড়টার ট্রেন, ট্রেন নয় যেন হাজার প্রাণের মেলা,
কেউ আড়াই আর তিনটায় কেউ বসে রয় সারা বেলা।
লালচে-সোনালি রোদ নেমে আসে বিকেল বেলার ক্ষণে,
প্রিয়হারা কেউ সেন্ট্রালে এসে বসে রয় আপন মনে।
খেলাধুলা সেথা করে অনেকেই এড়ায় স্বাস্থ্য ঝুঁকি,
কেউ এসে যায় আড্ডা মাতাতে কোনো দোকানেতে ঢুকি।
বিকালের রোদ ঘুমায়ে পড়িলে আলো জ্বলে একে একে,
মন ভরে যায় আলোয় মাতানো ক্যাম্পাস খানা দেখে।
লাল হলুদের আলো মেশা আরো গোলাপি সবুজ ওরে!
রঙিন আলোর চাদরে ঢাকা পুরো ক্যাম্পাস জুড়ে।
রাতে ফিরে যায় শহুরে সকলে মন ভরে গান করে,
স্মৃতিতে পুরোনো গান যত আছে, গেয়ে যায় সূরে সূরে।
এক নিমিষেই স্মৃতির পাতায় দিয়ে যাই যবে ডুব,
সারাদিনের এই ক্যাম্পাসখানা মনে পড়ে যায় খুব।
আদর-সোহাগ, রাগ মাখামাখি বন্ধন যত ছিলো,
ধরণীর এই অরাজকে তাহা বহু দূরে চলে গেলো।
একে অপরের দেখা নাহি হয়, দিন কাটে তাই ভেবে,
জানিনা আবার এক হবো কিনা, কখনো কি দেখা হবে?
এক সাথে মিলে হাটাচলা যত, যত ছিলো ঘোরাঘুরি,
জানিনা আবার ক্যাম্পাসে কবে সেদিন আসিবে ফিরি।