আফগানিস্থানের কবিতা (প্রথম পর্ব)
শংকর ব্রহ্ম


১). প্রথম পর্ব

             আফগানিস্তানের রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে নতুন প্রজন্মের কবিদের একটা বড় অংশ দেশের বাইরে চলে যেতে বাধ্য হয়েছে।  
           আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট, মৌর্য সাম্রাজ্য, মুসলিম আরব, মোগল, ইংরেজ, সোভিয়েত রাশিয়া এবং সবশেষে আমেরিকা এবং ‘ন্যাটো’র দেশগুলো এরা প্রত্যেকেই একে একে আফগানিস্তানে এসেছে। যুদ্ধ করেছে। হত্যা করেছে। একটি সমৃদ্ধ দেশকে নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থে ছিবড়ে করে দিয়েছে। আর এই হিংস্র বাতাবরণে জন্ম নিয়েছে প্রথমে ‘মুজাহিদিন’ এবং পরে ’তালিবান’-এর মত গোঁড়া ইসলামিক সংগঠনগুলি। যাদের একমাত্র ভাষা ছিল সন্ত্রাসবাদ। অদ্ভুত ব্যাপার আমেরিকা ‘সোভিয়েত’ বিরোধিতার অজুহাতে এই সন্ত্রাসবাদী দলগুলিকে অর্থ এবং মারণাস্ত্র দিয়ে সংগঠিত করেছে পাকিস্তান ও সৌদি আরবের সঙ্গে হাত মিলিয়ে।
             ‘ওসামা-বিন-লাদেন’ এই প্রক্রিয়ারই বাই-প্রোডাক্ট। এ'ভাবেই বারেবারে  ক্ষত বিক্ষত হয়েও আফগানিস্তান কিন্তু বেঁচে থেকেছে। কবিরাও, মরতে মরতে লড়তে লড়তে বেঁচে থেকেছে। আর তাই তাদের লেখা কবিতাও মরেনি।  
               আফগান কবিরা সাধারণত ‘পুস্তু’ এবং ‘দারি’(ফার্সি) ভাষায় কবিতা লেখেন।
  
            কবিতার মৌখিক এবং লৈখিক রূপান্তর শিখরে পৌঁছায় ত্রয়োদশ শতাব্দীতে ‘জালালুদ্দীন রুমি বাল্‌খি’র কবিতায়। ‘বাল্‌খ’ আফগানিস্তানের একটি অঞ্চল, এখানেই ‘রুমি’র জন্ম হয় ১২০৭ সালের, ৩০ সেপ্টেম্বর।  
     পাঠকমাত্রই জানেন যে, ধার্মিকতা (ইসলামিক সুফিয়ানা) আর দর্শন এক অপূর্ব ‘মিস্টিক’ আবহ সৃষ্টি করে চলে ‘রুমি’র কবিতায়। যা এখনও মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখে। রুমি’র জন্ম আফগানিস্তানে হলেও, ভ্রাম্যমান এই দরবেশ নানা জায়গায় ঘুরে শেষ বয়সে ‘আনাতোলিয়া’তে স্থায়ী হন। ফার্সি ভাষায় রচিত তাঁর গজল এবং অন্যান্য সৃষ্টি এখন বিশ্ব সাহিত্যের সম্পদ। রুমি’র অফুরন্ত সৃষ্টির সমুদ্র থেকে একটি বিন্দু সুধারস -

জালালুদ্দীন রুমি’র একটি কবিতা

আমি মাঝে মাঝে ভুলে যাই, বন্ধুত্ব কাকে বলে?
অজ্ঞান এবং পাগল আমি
সব জায়গায় দুঃখ ছড়াতে থাকি,
আমার গল্পটাকে নানাভাবে বলা যায়,
প্রেমে ঢেলে, নোংরা রসিকতা দিয়ে বানিয়ে
একটা যুদ্ধ লাগিয়ে, এমনকি ফাঁকাতেও

আমার ক্ষমাকে ভাগ করে নাও
যে কোন সংখ্যা দিয়ে
ক্ষমা ঘুরে বেড়াবে
এই অন্ধকার উপদেশগুলো,
যা আমি অনুসরণ করি
তারা কি কোনও পরিকল্পনার অংশ
বন্ধুরা, সাবধান
চরম ঔৎসুক্য বা সমবেদনা নিয়ে
আমার কাছে এসো না।

            রুমি’র পরে আফগানিস্তানের আর এক কিংবদন্তি কবি হলেন, ‘কুশাল খান খট্টক’।
খট্টক, সপ্তদশ শতাব্দীর কবি এবং আফগানিস্তানের জাতীয় কবিও বটে। খট্টকের কবিতায় দেশপ্রেম, বীরগাথা, প্রেম ইত্যাদির প্রাধান্য ছিল। রুমির রহস্যময়তার আবরণ ছিঁড়ে খট্টক কিছুটা কথ্য ভাষার আঙ্গিকে লিখে আফগান কবিতাকে সমৃদ্ধ করে তোলেন।
পড়ে দেখা যাক তাঁর একটি কবিতাঃ

      ‘ আমার বাষট্টি বছর বয়ে গেছে
আনন্দ ছিল, দুঃখও, মসৃণও ছিল
আর এখন আমার চুল আর কালো নয় ধবধবে শাদা,
তবে মনে মনে আমি এখনো তরুণ
পেরিয়ে এসেছি শোক, সংগ্রাম, বরফ, তুষার
আর এখনো দাঁড়িয়ে আছি,
দেখছি চারদিকে সোনালি গ্রীষ্ম হেসেখেলে বেড়াচ্ছে।’

            আফগানিস্তানের মহিলা কবিদের (ফার্সি ভাষায়) মধ্যে প্রাচীনতমা হলেন রাবিয়া বাল্‌খি।
সম্ভবত ৯১৪-৯৪৩ খৃষ্টাব্দে তিনি সক্রিয় ছিলেন। তখন সামানিন্দ এমির নাসের-২ এর রাজত্বকালে। রুদাকি ছিলেন ওই সময়কার রাজ-কবি। রাবিয়াও ওই সময়েই ফার্সি ভাষায় কবিতা লিখেছেন। অসামান্যা রূপসী ছিলেন রাবিয়া। সম্ভ্রান্ত পরিবারের মহিলা। তাঁর বাবা 'কা-আল-কুজদারি' ছিলেন সামানিন্দ রাজসভার সম্মানিত গোষ্ঠিপতি। যাইহোক, রাবিয়া কবিতা লেখার সূত্রেই, বাখতাস নামের এক তুর্কি দাসের সঙ্গে রোমান্টিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। বাখতাসও কবিতা লিখতেন। হ্যারিস, রাবিয়ার ভাই। বাবা  'কা-আল-কুজদারি’র মৃত্যুর পরে হ্যারিস গোষ্ঠিপতি হয়। গোপনসূত্রে সে জানতে পারে বোনের প্রণয় সম্পর্কের কথা। ক্ষিপ্ত হ্যারিস বোন রাবিয়ার হাতের শিরা ছিন্ন করে তাকে স্নানাগারে আটকে রেখে দেয়। পরে রক্তক্ষরণ হতে হতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন রাবিয়া, ফার্সি কবিতার প্রথম মহিলা কবি! হ্যারিস একইসঙ্গে বাখতাসকে বন্দী করে একটি কুয়োয় ফেলে দেয়। বাখতাস কোনওমতে নিজের শক্তি আর বুদ্ধির প্রয়োগ করে কুয়ো থেকে উঠে আসে এবং হ্যারিসকে হত্যা করে। এরপর রাবেয়া’র খোঁজে বেরিয়ে পড়ে বাখতাস এবং জানতে পারে রাবেয়ার মর্মান্তিক মৃত্যুর কথা। তীব্র শোক আর হতাশায় আত্মহত্যা করে বাখতাস।
চূড়ান্ত এই ‘রোমান্টিক ট্র্যাজেডি’ ফার্সি ভাষার প্রভাবাধীন অঞ্চলে বহু শতাব্দী ধরে ‘মিথ’ হয়ে ছড়িয়ে পড়ে। আজ এতদিন পরেও চোখ জল এনে দেয় এমন মৃত্যুঞ্জয়ী প্রেম। কবিতা বেঁচে থাকে শুধু, আর বেঁচে ওঠে এমনভাবেই।
কবিতা তাই প্রবাহমান ।
রাবিয়ার কবিতা এমনিতে দুষ্প্রাপ্য। একটি কবিতার ভাবানুবাদ পাঠকদের জন্য -

প্রেম
…….

ভালবাসার এক মিথ্যে জালে জড়িয়ে আছি
ব্যর্থ আমি, সবকিছুতেই ব্যর্থ ভীষণ
প্রেম-জরজর রক্তচাপে বিদ্ধ আমি
দেখতে পাচ্ছি যা কিছু  আমার খুব প্রিয় ছিল, হারিয়ে গেছে কোথায় কখন
ভালবাসা এক সমুদ্র
তার বিশাল ঢেউয়ে কেইবা পারবে সাঁতার দিতে, পারবে কি ঠিকানাবিদ্ধ হতে প্রেমিক?
সে তো চির বিশ্বস্ত ,
তার অনিত্য হাতের বেড়ে ধরে রাখবে উথালপাথাল,
ধরে রাখবে শপথ করেই
যা কিছু ভুল ছলনা বিভোর,
মুছে দেবে সব নিভৃত কালো
প্রেমিক যদি, বিষ খেতে খেতে বলে উঠবে,
কী যে মিষ্টি, কী-ই যে ভাল।

             আফগান কবিতা’র সমসাময়িকতা ওই দেশের আর্থ-সামাজিক বাস্তবতার নিরিখে গড়ে উঠেছে। দেশের টালমাটাল অবস্থা এবং ‘বারবাক কারমাল’কে হত্যা করার পরে ধীরে ধীরে জেঁকে বসা ধর্মীয় গোঁড়ামি এবং সন্ত্রাস প্রায় অধিকাংশ সৃষ্টিশীল কবি, সাহিত্যিক, চিত্রকর, চলচ্চিত্র পরিচালককে দেশান্তরী হতে বাধ্য করেছে।
    যে কোনও স্বৈরাচারী শাসনেই এটা ঘটে থাকে। ‘পারতো নাদেরি’ আফগানিস্তানের অত্যন্ত সম্মানিত কবি। সোভিয়েত হস্তক্ষেপের সময় এঁকে তিন বছর ‘জেল-এ থাকতে হয়।
       ১৯৫৩ সালে আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলের ‘বড়কশান’-এ ‘নাদেরি’র জন্ম। কাবুল ইউনিভার্সিটির স্নাতক হন ১৯৭৬ সালে।
জেল ইত্যাদি খাটার পরেও তাঁকে দেশান্তরী হতে হয়ে ছিল। ‘নাদেরি’ জেল থেকে বেরিয়ে কবিতা লিখতে শুরু করেন। মূলতঃ রোমান্টিক এবং ফ্রি-ভার্সে দক্ষ ‘নাদেরি’ এখন আফগানিস্তানের ‘পেন’  শাখার সভাপতি। ‘পারতো নাদেরি’র একটি কবিতা’র অনুবাদ -

নির্জনতা
…………

তোমার হাতের রেখায়
তারা লিখে রেখেছে সূর্যের ভাগ্য
ওঠো, হাত তোলো
এই দীর্ঘ রাত আমার শ্বাসরোধ করে রেখেছে।


      শাকিলা আজিজ্জাদা’র জন্ম কাবুলে, ১৯৬৪ সালে। ফার্সিতে লেখেন। স্কুলে পড়ার সময় থেকেই লেখালিখি শুরু। শাকিলাও আফগানিস্তানের যুদ্ধাক্রান্ত সময়ের কবি। তবে অপ্রত্যক্ষভাবে। কারণ কাবুল থেকেই আইনে স্নাতক হয়ে শাকিলা ‘নেদারল্যান্ডস’-এ চলে যান ‘ওরিয়েন্টাল ল্যাংগুয়েজ অ্যাণ্ড কালচার’ নিয়ে পড়াশোনার জন্য। এখন তিনি ওখানেই থাকেন। ‘নেদারল্যান্ডস’-এ থাকার ফলে শাকিলা উন্মুক্ত মনে তাঁর অনুভূতি কবিতায় প্রকাশ করতে পেরেছেন। শাকিলার কবিতায়, নারীর শারীরিক এবং মানসিক অবস্থাকে উদারমনস্ক খোলামেলা দৃষ্টি-ভঙ্গিতে লিপিবদ্ধ করেছেন তিনি।
           প্রায় দু-দশক ধরে চলতে থাকা চরম রক্ষণশীল এবং মারমুখি ধর্মীয় গোঁড়াদের শাসনে যা সম্ভবপর ছিল না।
শাকিলা ‘প্রলিফিক রাইটার’। দুটি কবিতার বই আছে তাঁর।
প্রথম বইটি দ্বিভাষিক, ডাচ এবং ফার্সি ভাষায় লেখা। নাম, স্মৃতিকথা, শূন্যতার।
২০১২ সালে প্রকাশিত আরেকটি সংকলন শাকিলার- ‘আজিজ্জাদার কবিতা’ প্রকাশিত হয়, ফার্সিতে লিখিত এবং সঙ্গে ইংরেজি অনুবাদ। শাকিলার একটি কবিতার ভাবানুবাদ -

একটি পালক
…………………..

আমার স্বপ্ন ঠিক যেভাবে
তোমার পায়ের শব্দ শোনে,
সেই যে তুমি যখন পা টিপে টিপে ভেতরে আসো

তুমি বেড়ালছানার মত ঢুকে যাও চাদরের নীচে
তোমার চোখ আমায় গ্রহণ করতে থাকে
জেগে অথবা ঘুমিয়ে
তুমি আমার ঘুমের রেশমগুলো কোলে তুলে নাও

আর সেই মুহূর্তে যখন তোমার হাতদুটো
আমার কাঁধে জড়িয়ে যাওয়ার কথা
তুমি ঘুমিয়ে পড়ো বিছানায়

আর আধোঘুমে আধো জাগরণে
যখন আমার স্বপ্নরা প্রায় শেষ
আমি তখন তুমিময় হতে থাকি
পূর্ণ হতে থাকি আবার।

             ‘মোহম্মদ বাঘহের কোলাহি আহারি’ জন্ম ১৯৫০ সালে খোরাশানের মাশশানে। তাঁর প্রথম ’অ্যাবভ দ্য ফোর এলিমেন্টস’ কবিতার বই ১৯৭৭ সালে প্রকাশিত হয়। ওই সময়ে আফগানিস্তানের পট পরিবর্তনের ভূমিকা লেখা হচ্ছে। পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টি ১৯৭৮ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের সাহায্যে দাউদ খানকে ক্ষমতাচ্যুত করে।  দাউদ খান ১৯৭৩ সালে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়েই আফগানিস্তানের শেষ সম্রাট জাহির শাহ’র অবর্তমানে ক্ষমতাসীন হন। দাউদ খানের জনবিরোধী শাসনের অবসান ঘটিয়ে ভূমি সংস্কার এবং ‘সিভিল ম্যারেজ অ্যাক্ট’-এ সংস্কার করতে গেলে গিয়ে গোঁড়া মুসলিম মোল্লাতন্ত্র ক্ষেপে যায়।
        দীর্ঘ গৃহযুদ্ধ শুরু হয় এরপরে। ‘আহারি’ এই গৃহযুদ্ধ প্রজন্মের কবি। ‘আহারি’র কবিতায় আফগানি লোকগাথার আভাস থাকে, অসীম দক্ষতায় তিনি গল্পগুলোকে কবিতাময় করে তুলতে থাকেন। এখনো অবধি  ‘আহারি’র ছ’টি কবিতা’র বই প্রকাশিত হয়েছে। আহারি, যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগান সমাজকে কবিতার শুশ্রূষা দিতে পেরেছেন। তাঁর কবিতায় পরাবাস্তবতার সঙ্গে মিশে গেছে সাধারণের কথ্য ভাষার চাল। তার একটি কবিতা পড়া যাক -

আবার ভ্রমণকারী হব
……………

আমি আবার ভ্রমণকারী হব
বুটের লেস যথাযথ ঝুলবে
নখগুলো কাটব না
গালে দাড়ির বহর বাড়বে
এই গভীর ভোরের মত
যা আমার এবং একটি সুন্দর মৃত্যুর মাঝে
দাঁড়িয়ে রয়েছে

আর এই সুন্দর মৃত্যুর কাছে যেতে যেতে
আমি ঘুরে বেড়াব সেই মুখগুলোর মাঝে
ঘরকুনো তীর্থযাত্রী’র মত
আমি তখন সেই পাখিটা
যে পৃথিবীর গাছ থেকে পড়ে যাচ্ছে
ভোরের শেষ তারা অস্ত যাচ্ছে যখন
পাখিটা পড়ে যাচ্ছে আপেলের বাক্সে,
একদিন একটি ভোরবেলায়।

       বয়সে অনেকটাই তরুণ ‘রেজা মোহাম্মেদি’র জন্ম ১৯৭৯ সালে, কান্দাহারে। ইরান এবং লণ্ডনে পড়াশোনা করা রেজা’র কবিতা আলোড়ন ফেলে দিয়েছে ফার্সি কবিতার অন্দরমহলে এটা বলা যায়। পুরস্কারও পেয়েছেন। তাঁর কবিতার বই তিনটি। তিনি ‘দ্য গার্ডিয়ান’ পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত। রেজা’র কবিতায় সাধারণতঃ  প্রায় অবধারিত ভাবেই নিস্তরঙ্গ জীবনযাপনের নৈর্বক্তিক ছবি পাওয়া যায়। তিনি জোর করে কিছু শোনাতে চান না। নীরবতার অসীম খেলায় রেজা মোহাম্মেদি একজন পটু খেলোয়াড়ের মতো খেলে যান। ভাবানুবাদে রেজা’র একটি কবিতা -

ভালবাসাকে
……………

ঘুম ভাঙেনি একসঙ্গে
তাই আগেই এসেছি এই খালি ঘরটায় একলাই
সমুদ্র এই ঘরের সামনে
অনেক পরে তুমি উঠেছিলে, স্নান করেছিলে, খুলে দিয়েছিলে জানলা
প্রসাধন সেরে তুমি, ঘর ছেড়ে দিয়ে বাইরে এলে রাস্তায়

এইতো তোমার দিন শুরু হলো রাস্তা দিয়েই ঠিকানা খোঁজার
যা একখানি ঘর ছুঁয়ে আসে
একফালি স্ট্রিটে ঘুরন্ত হয়, বারবার,
এই দিনগুলো নিয়ে যায় তোমাকে
শহরের লোভী সীমানায়

আমার কিন্ত দিনগুলো যেন করিডোর,
তারা শিরায় শিরায় বাহিত এবং বন্ধ
তাতে বোতাম লাগানো পেতলের,
আমি আর তুমি আলাদাই
ফিরে আসি ফের, পথ খুঁজে নিয়ে নিজেদের

তুমি গাঢ় বেগুনী পোষাক পরেছ,
ঘড়ি’র রঙে মিলিয়ে,
আর আমি পরে আছি সান্ধ্য পোষাক
আর শুয়ে আছি বেশ হালকা মেজাজে,
এই তো সময়,
এবারে চা হয়ে যাক, একটু?

এবার আমাদের এক হতে হয়, চায়ের স্বার্থে, টিভির বাটনে কিংবা
রাত্রির খাওয়া দাওয়ার কারণে এক হতে থাকি আমরা
আমি খুবই ভালবাসি, আগুন হয়ে হে চুল্লি তোমাকে
আর তুমি ভালবাসো আগুনকে
যেভাবে ভালবাসা দেয় চুল্লি

এরপরে আর কী হতে পারে পরস্পরকে জড়িয়ে আমরা স্বপ্নই দেখি,
আমাদের আলাদা আলাদা স্বপ্ন .......।