ল্যাটিন আমেরিকান কবিতার রূপরেখা  (পর্ব এক).
শংকর ব্রহ্ম


           তারাই আজকের ল্যাটিন আমেরিকানদের পূর্বপুরুষ, যারা আজ থেকে বিশ হাজার বছর আগে মঙ্গোলীয় বংশোদ্ভূত যে-জনগোষ্ঠী সাইবেরিয়া থেকে আলাস্কা, উত্তর ও মধ্য আমেরিকা, পরে পানামা খাল পার হয়ে দক্ষিণ আমেরিকা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছিল।
             বিশেষজ্ঞদের ধারণা, তারা দক্ষিণ আমেরিকার শেষ অবধি পৌঁছায় আজ থেকে প্রায় চার-পাঁচ হাজার বছর আগে। আর ১৪৯২-১৫০৩ খ্রীষ্টাব্দের মধ্যে কলম্বাসের চার বার স্পেন-আমেরিকা যাতায়াতের মধ্য দিয়ে  ল্যাটিন আমেরিকার শুরু হয় ঔপনিবেশিকায়ন।
          আজ ল্যাটিন আমেরিকা বলতে যে বিশাল ভূখন্ডকে বোঝায় তার মধ্যে রয়েছে দক্ষিণ ও মধ্য আমেরিকার দেশগুলো, মেক্সিকো, ক্যারিবীয়ান দ্বীপপুঞ্জের দেশগুলো, পর্তুগিীজ-ভাষী ব্রাজিল ও স্প্যেনিশ আমেরিকা। স্প্যানীয় ও পর্তুগীজদের তিনশো বছরের শাসন এখানে মহৎ কোন সাহিত্যর সৃষ্টি হয়নি।

         প্রথম ছাপার যন্ত্র চালু হয় ল্যাটিন আমেরিকায় ১৫৩৯ খ্রিষ্টাব্দে মেক্সিকো-সিটিতে। একজন ব্রাজিলীয়র লেখা প্রথম বই প্রকাশিত হয় ১৬০১ খ্রিষ্টাব্দে।
    তিনশো বছরে সেখানে কোনো যথার্থ উপন্যাস লেখা হয়নি। নাটকের অবস্থাও সে'রকম ছিল। তবে সাদামাঠা গদ্য-কাহিনী প্রচলিত ছিল।
           কবিতার অবস্থা ছিল তুলনামূলকভাবে ভালো। মেক্সিকো শহরে এক কবিতা প্রতিযোগিতায় তিনশোর মতো কবি অংশগ্রহণ করেছিলেন।
          ১৮২৬ থেকে ’৭০ পর্যন্ত রোমান্টিক ধারা, এরপর বাস্তববাদী ও প্রকৃতিবাদী ধারার মধ্য দিয়ে ১৮৮৮ থেকে ১৯১০-এর দিকে ল্যাটিন আমেরিকার সাহিত্য আধুনিকতায় পৌঁছায়।
         ১৮৮৫ সালে নিকারাগুয়ার রুবেন দারিও, কিউবার হোসে মার্তি প্রমুখ কবির নেতৃত্বে ফরাসি শিল্প-সাহিত্যপ্রভাবিত ‘মদের্নিসমো’ নামের এক আধুনিক কাব্য-ধারার গোড়াপত্তন ঘটে। আবার এ-ধারার বিপরীতে একটি শক্তিশালী সংরক্ষণবাদী ধারারও আবির্ভাব ঘটে, যারা স্বদেশ, দেশের মানুষ ও ঐতিহ্যকে কবিতার বিষয় করেছিলেন। কবিতার ব্যাপকার্থে সাহিত্যের এই আন্তর্জাতিকতাবাদী ও জাতীয়তাবাদী ধারার বিপরীতমুখী অবস্থানের মধ্যে, বাস্তবতায় আবার জন্ম নিল এক প্রগাঢ় নিরীক্ষাভিত্তিক 'avant grade' বা 'অগ্রগামী সাহিত্য', যা পূর্বোক্ত দু'ধারার সংশ্লেষণও বটে।
           ‘মদের্নিসমো’-পরবর্তী বিশ শতকের পাঁচ বিখ্যাত কবি হলেন গ্যাব্রিয়েলা মিস্ত্রাল, হোর্হে লুইস বোর্হেস, কার্লোস দ্রামন্দ দে আন্দ্রাদে, পাবলো নেরুদা এবং অক্টাভিও পাস। তাঁদের মধ্যে মিস্ত্রাল, নেরুদা ও অক্টাভিও পাস নোবেল পেয়েছেন। তাঁদের পাশাপাশি আরও অনেকের কবিতা আজ বিশ্ব-কবিতার অংশ।