সেদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে. 
বসেছি সকালের কাগজটা নিয়ে সবে।
পিছনে শুনি আধো আধো গলার স্বর.
সাথে খেলনা গাড়ির শব্দ ঘড় ঘড়।
কাগজ ফেলে ছেলেকে নিলাম কোলে
অনুযোগের সুরে দুবছরের ছেলে,
বলে-বাব্বাই, টুমি চিড়িকানা গেত বুলে। 
না বুঝে স্ত্রীকে শুধাই, হ্যাঁগো এ কি বলছে ?
উত্তর না পেয়ে দেখি, স্ত্রীও মুখ টিপে হাসছে।

মনে আছে? কি বলেছিলে তুমি আগেরবারে,
চিড়িয়াখানা নিয়ে যাবে ওকে এই রোববারে।  
প্রশ্ন শুনে চোখ কপালে তুলে শুধাই-
সেকি মনে আছে নাকি এইটুকু ছেলের? 
স্ত্রী বলে, ছোট বলে আর,
ভেবো না একটুও বোকা ওদের। 
তুমি তো শুধু পেপার আর অফিস নিয়েই থাকো,
সংসারের কোনও খবর কি কখনো রাখো ?
কি আর করা, স্ত্রীর অভিমান,
আর ছেলেকে দেওয়া কথা রাখতে,
খাওয়া শেষে বেড়িয়ে পড়লাম
আড়াই জনে, দুপুর থাকতে থাকতে। 


চিড়িয়াখানা পৌঁছে দেখি শুধুই,
কালো মাথার সারি, রকমফের নাই বিশেষ
মনে এলো ছেলেবেলায় শেখা সেই,
সরলরেখার সংজ্ঞা, যার নাই কোনও শেষ।
ঝাড়া দুঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে পেলাম,
ভিতরে যাবার অনুমতি।
তাতেও মা – ছেলের উৎসাহে না দেখলাম,
বিশেষ কোনও খামতি। 
ছেলে কোলে আমার ধরে যায় হাঁফ,
কম্পনও প্রায় শুরু হাঁটুতে।
সামনে দাঁড়ানো বয়ফ্রেন্ড দেখি সুরসুঁড়ি দেয়,
প্রেমিকার হাতের ট্যাটুতে। 
সারা বিকেলটা জুড়ে,
চিড়িয়াখানায় ছেলের দাপাদাপি।
মায়ের চোখেও খুশির ঝিলিক,
মনে হল যেন হ্যাপি। 
পরিবারের খুশিতে আমিও হলাম শামিল,
গর্বে ভরে গেলো বুক।
ছেলের অবান্তর প্রশ্নের উত্তর দিলাম ঝটপট,
তা সে আর বুঝুক, না বুঝুক।


বাড়ি ফিরে এসে দেখি, ওইটুকু ছেলে, 
দাদুভাইকে চিড়িকানা বোঝায় বাকি সব ফেলে। 
সব শুনে, দাদুভাই বলে, শোনো আমার সোনা,
যা তুমি দেখেছ সেতো নয় আসল চিড়িকানা।
আসলটি হল তোমাদের একরত্তি ফ্ল্যাটখানা। 
পশু-পাখী যাদের দেখেছ তুমি,
তারাও তো পায় কিছু আলো বাতাস। 
তোমাদের ফ্ল্যাটের নোনাধরা ইটগুলো,
শুধুই ফেলে নীরব দীর্ঘশ্বাস।
তোমরাও আজ ছোট ছোট ফ্ল্যাট খাঁচাতে,
ওই পশু-পাখিদের মতই বন্দী 
দাদুভাই, চল খোলা হাওয়ায় খেলবো মোরা,
যার নেই কোনও আর গণ্ডি।
চমকে দেখি, স্ত্রীরও চোখে জল,
বাঁধছে না মানা, গড়িয়ে পড়ছে গালে। 
আমায় বলে, চলো ফিরে যাই,
নিজের দেশে এবার অন্তত চলে। 
চুপ করে থাকি, নিঃশব্দ আমি,
জানি না কি ভাবে কি বলবো...
বুঝিনি কখনো, গ্রামের ছেলে,
শহরে এসে এইভাবে বোকা বনবো।