ঝাপসা আজ স্মৃতি, তবু এক এক করে মনে গাঁথি –


প্রথম পূজোয় আশায় বুক বেঁধে,
শুধু চেয়েছিলে দুটি তাঁতের শাড়ি।
কিন্তু বিধি বাম, পারিনি দিতে তাও,
তবুও ছিলে সদাহাস্য, করনি কখনো আড়ি।
বোনাসের দিন হল কারখানা লকআউট,
সপরিবার হলাম ছন্নছাড়া, ভবঘুরে ঘরছাড়া।
পোড়াকপাল আমার, যৌতূকে পাওয়া শাড়িই,
বিক্রি করে, জুড়ালে মোদের পেটের জ্বালা।


হয়েছে স্মৃতিভ্রম, আর হেসে বলছ মতিভ্রম?

পরিবারের সকলের নানা আবদার, অভিযোগ,
আর অত্যাচারের আবর্জনার স্তুপ।
বিবাহিত জীবনের শুরু থেকে শেষ, শুনে এসেছি,
তোমার আর এক নাম সংসারী কূপমণ্ডূক।
স্মিত মুখে সামলেছ সব, ছিলে সবার ভরসার বল,
তবুওতো ছিল মনে এক ক্ষীন আশা,
চাওনি কিছুই, যা সব কিছু পার্থিব তুচ্ছ, জানি,
শুধু চেয়েছিলে আমার প্রাণের একটুকু ভালবাসা।


আজ নয় গিয়েছে দৃষ্টি,  কিন্তু তখনও ছিল না দূরদৃষ্টি,


বাঁচার সংগ্রামে লিপ্ত আমি, মুখ ফুটে পারিনি,
বলতে বহু আকাঙ্খিত ওই মধুর ভাষা।  
বৃদ্ধ আজ, সংসারের নাগপাশ থেকে মুক্ত,
তাই বলি, আজীবন ছিলে, শুধু তুমিই আমার ভালবাসা।  
জানি তুমিও তা মানতে, তাই নেই কোনও ভাবান্তর,
নেই কোনও খুশি আর তোমার ওই মুখে।
সুখের সময়ে ছিলাম জানি পরিবারের সাথে,  
পেয়েছ কি আমায় পাশে কখনো তোমার দুখে?

তাই যতই ঝাপসা হোক স্মৃতি, তবুও আশার নেই কোনও ইতি –


মৃত্যু পথের পথিক এখন, আছি শুধু শেষের অপেক্ষাতে,
চাই তোমারই সাথে হতে আবার নতুন পথের যাত্রী,
যা কিছু চাওয়া, না পাওয়ার হতাশা, ঘুচে যাবে,
থাকবে হয়ে শুধু আমার ভালবাসার পাত্রী  
তাই দাম্পত্য বৃত্তে পরাজিত আমি মিনতি করি আজ,
প্রিয়ে, নতুন পথে দেখো আর মানব না হার,
তোমারই সুখে দুখে থাকবো পাশে, করব না লাজ।
আবারও দুরু দুরু বু্‌কে লাল চেলিতে সেজে আসবে,
আমার জীবনে, আসবে আবার সেই শুভ রাত্রি।
প্রার্থনা করি তাই ওই পরমপিতার কাছে,  
পরজন্মেও যেন থাকো, তুমি আমারই গরবিনী স্ত্রী ।।