জীবনের প্রত্যুষে কবে কখন কিভাবে  সেই কালজয়ী
সুরের সাথে আমার পরিচয় ঘটেছিলো , আজ আর তা মনে নেই।
বিথোভেন থেকে মোৎসার্ট , কখনো আবার শোঁপা
কখনো কনসার্টো, কখনো সোনাটা , কখনো সিম্ফোনী,  কখনো হয়তো সোলো
সুরের ইন্দ্রজালে মোহাচ্ছন্ন আমি হারিয়ে যেতাম
অপার্থিব অক্ষরহীন শব্দ সুরের খেলায়-
হৃদয়ভূমিতে আছড়ে পড়া  সুরের সৃষ্ট কম্পনে
আমি উপলব্ধি করতাম যন্ত্রের ভাষায় অব্যাক্ত কোন যন্ত্রণা
যন্ত্রকে যারা কথা বলাতেন , কাঁদাতেন , আবার হাসাতেন,
তাদের তুঙ্গস্পর্শী মানসিক শক্তি , সংযম আমাকে হতবাক করে ফেলতো ।


ব্যাস্ত জীবন থেকে পালাতে আমি অহরহ ঢুকে
পড়তাম এই শক্তিশালী কথাহীন শব্দ শিল্পের রাজ্যে
চোখ বুজলেই পেতাম-- পেলব ঘাসের কার্পেট মাড়িয়ে
এক স্বচ্ছ ঝরণাধারা, নুড়ি পড়ছে যেন তাতে টুপ টাপ অবিশ্রান্ত,
কোমল রোদের ঝিকি মিকি তরল হীরে হয়ে আমার জলে ডোবা
পা ঘেষে ঘেষে যেন গড়িয়ে চলেছে --
অর্থহীন হয়ে যায় পারিপার্শ্বিকতা,
অর্থবহ হয়ে ওঠে শুধু যেন আমার অস্তিত্ব।


তাদের সুরের মায়ায় আমার জাগরিত স্বপ্নে
মৃত প্রায় নির্জন কোন এক নগরী যেন জেগে উঠতো
উল্লাসে কাঁপা কোলাহল হয়ে -
গ্রান্ড পিয়ানোর ছন্দ কখনো গম্ভীর , কখনো মিষ্টি টুং টাং
কখনো বৃষ্টির মতো টুপ্টাপ ঝরে --
মন নেচে উঠতো কোন এক স্বর্গীয় আনন্দে ।


সেই সুরের মাদকতা আমার  মনের ক্যানভাসে
ফুটিয়ে তুলতো যেন ভ্যান গগের আঁকা ল্যান্ডস্কেপ কোন
কখনো লিওনার্দো দ্যা ভিঞ্চির আঁকা রহস্যময় পোর্ট্রেট
কখনো বা রেমব্রান্টের দূর্দান্ত ডিটেইলে আঁকা ওয়েল পেইন্ট
ভিন্ন মাত্রার সুর লয় যেন রবার্ট মুঙ্কের “দ্যা স্ক্রীম” হয়ে ফুটতো।
মাইনর , মেজরের খেলায় , শার্প কিংবা ফ্ল্যাটের দক্ষতায়
আমি দেখতাম সালভাদর দালির ক্যানভাসে যেন সময় গড়িয়ে পড়ছে ।


ভিনদেশি বাঁশীর মনকাড়া সুর কি প্রচন্ডতায় হৃদয়কে
আন্দোলিত করতে পারে বুঝিনি আমি “ জেমস লাস্ট” শোনার আগে
‘প্যারাডাইস ভোগেল’ আমাকে স্বর্গীয় উদ্যানে উড়িয়ে নিয়ে যায় এক লহমায়
‘ আ মর্নিং ইন দ্যা কর্নওয়াল’ নতুন এক পবিত্র ভোর চেনালো আমায় ।


যে ভায়োলিন করুণ বিলাপে মানুষকে শুধু কাঁদিয়েই এসেছে এতোকাল
তার প্রচন্ড রুদ্রমূর্তী আবির্ভূত ভেনেসা মেইয়ের “স্টর্মে”
অবিশ্বাস্য দ্রুত লয়ের বেহালা বাদন বেহাল করে দেয় মনের
স্নিগ্ধ সুরের “সোলেস” ভায়োলিনের আভিজাত্য চেনাতে ভোলেনা আবার--
মন্ত্রমুগ্ধ আমি স্বপ্ন সাজানোর আগেই সুর আমায় টেনে নিয়ে যায়
যেন বলছে তা ,”আগে শুনে যাও শুধু, যা ভাবার ভেবো পরে”।


আমার জীবন থেকে বিষন্নতার মেঘকে তাড়িয়ে দিয়েছিলো
যেই সুর স্রষ্টারা , নব আনন্দধারায় অবগাহনে হৃদয়- মন
শিহরিত হতো অহরহ যাদের সৃষ্টির কল্যাণে--
আজ কৃতজ্ঞ চিত্তে শ্রদ্ধাঞ্জলী জানাই তাদের।