একাকী দাঁড়িয়ে থাকা বাঁশটির মাথায় নিঃসঙ্গ ফিঙে
লম্বা লেজ ঝুলিয়ে দার্শনিক ভাবনায় যেন রত
লাউ মাচার ছায়ায় ক্লান্ত ছাগল-ছানাগুলো যেন
একটু খানি বিশ্রাম নিতে দাঁড়িয়েছে খেলা ফেলে
ঘটাং ঘট ঘটাং ঘট.........।


সবুজ ঘাসের ঢেউয়ের ফাঁকে একলা একচালার
কুটিরের বেড়ায় শুকোতে দেয়া পল্লীবধূর লাল শাড়ীটাকে
লাগছে যেন নৌকোর পালের মতোই--বেড়ার ওপাশ থেকে
বুনকো বুনকো সাদা ধোঁয়া --পিছনের ছবিটাকে লুকিয়ে ফেলছে
বোধহয় রান্নার আয়োজন চলছে দুপুরের ।
ঘটাং ঘট ঘটাং ঘট.........।


অসম্পূর্ণ ব্রীজটার ওপর থেকে দুঃসাহসী ছেলেপিলের দল
ঝপাঝপ লাফিয়ে পড়ছে নীচের বিলে ,আনন্দ স্নান ।
বিলের পাড়ে নির্বিকার দু’চারটে গরু একমনে মুখে টানছে ঘাস
পিঠের ওপর তাদের বসে আছে রাজসিক ভঙ্গীতে ছোট ছোট পাখী
রাখাল গোছের একজন আছে ধারেকাছে , হাতে বাঁশী নেই তার,
নিবিষ্ট মনে মাছধরার জাল বুনে চলেছে সে ।
ঘটাং ঘট ঘটাং ঘট.........।


হলুদ সবুজ ফসলের বিস্তৃত কার্পেটের শেষ মাথায়
গম্ভীর হয়ে দাঁড়িয়ে আছে কালচে-সবুজ পাহাড়সাড়ি
মেঘের ছায়া পাহাড়ের গায়ে গা ছমছমে নক্সা এঁকেছে
ছবির মতো দু’চার ঘরের গ্রাম পাহাড়ের কোলে
তালগাছের সাড়ি প্রকৃতির বুকে মানুষের পরিকল্পনার স্বাক্ষর হয়ে দাঁড়িয়ে।
ঘটাং ঘট ঘটাং ঘট.........।


শেষ বিকেলের নরম আলোয় অদ্ভূত মায়াময় লাগছে সব
হাট ভেঙ্গেছে একটু আগে,সবার হাতেই কিছু না কিছু
বোঝা যাচ্ছে না কে ক্রেতা কে বিক্রেতা ,শিশুদের হাতে
মাটির খেলনা, রঙিন ঘুড়ি , মোয়া -নাড়ু, হাওয়াই মিঠাই
মাঠের মাঝে চরকিটা এখনো ঘুরছে , বেশ ভিড় সেখানে।
ঘটাং ঘট ঘটাং ঘট.........।


সন্ধ্যার আঁধার ধীরে ধীরে গিলে নিচ্ছে বাইরের দৃশ্যপট
অন্ধকারের পটভূমিতে জোনাকির আলো, প্রকৃতির আলোকসজ্জা
আলো জ্বলতে শুরু করেছে ঘরে ঘরে, টিমটিম করে, মিটমিট করে
আলোগুলো কখনো সংঘবদ্ধ ,কখনো দূরে দূরে ছিটিয়ে
চাঁদটাকে দেখা যাচ্ছে না, তবে নদী-বিলের স্রোতে তার প্রতিফলিত
রূপোলী আলোর নাচ বলছে ,সে ওপরে আছে ঠিকই।
হঠাতই অন্ধকার ফুঁড়ে এগিয়ে আসছে আলোর সাড়ি-----
শহরে ঢুকছে ট্রেন -----
ঘটাং ঘট ঘটাং ঘট.........।
ঘট ঘটাং ঘট ঘটাং ঘট........ঘট ঘট ঘ্যাঁচ.............।
রূপসী বাংলার ছবিগুলো মনের  এ্যালবামে সাজিয়ে নিয়ে
আমি পা রাখলাম কোলাহলের শহুরে রাস্তায় ।