জানো   তুমি, আজ  আমি  এলাম  চল্লিশে,
সময়  পেয়েছি  তোমায়  লেখার ,
শেষবার  যখন  লিখি  তোমায়  , ছিলেম  আমি  একুশে ।
দামি  রঙ্গীন  দেয়ালে  আমার  
সাজানো  সংসার  ঝোলে  ,
লিখলাম  তাই ,সুখে  আছি  খুব
সব  পেয়েছি  বলে  ।


অন্তহীন  বিলাসিতায় , কোনো  কাজ  নেই
নিস্তরঙ্গ  শান্ত   অনন্ত  সময়  ; কার  প্রতীক্ষায়  একা ?
জীবনের  মানে  যদি  মাগো  এমনি  বসে  থাকা  ?
শুধু  বসে  থাকা  কেন  শেখালে  না
কেন  এতো  সব  শেখা ?


মা , তুমি  কেমন  আছো  ?
লিখতে  কেন  চোখ  হয়ে  এলো  ভারী -
মনে  পড়ে? ছোট  বেলায় , পালাতাম  আমি  তাড়াতাড়ি ,
আমায়  কোলে  নেবার  দাদাদের  সেই  কাড়াকাড়ি ?
"রু এদিকে  আয়  আমার  সোনা  বোন
এই নে  লজেন্স  , চকলেট  টফি  - আমার  কথা  শোন  ।"
শুনিনি  আমি  তাই  নুপুর  পড়ালে
সেদিনই   আমার  ডানা  কেটেছিল  
উড়ে  যাবো  বলে ।


আগরবাতি , পুজোর  ঘন্টা , রবীন্দ্র -নুজরুল
আমার  মনে  কেন  বেঁধে  ছিলে  ?
বলেছিলে" মেয়ে  তুমি, মেয়ে  হয়েই  রও ।"
সংস্কারের  ঝুলি  আমায়  জড়িয়ে  দিলে ।
মাগো , বড়ো  হওয়ার  স্বপ্ন  কেন  দেখালে
সাইন্স , জিওগ্রাফি  হিস্ট্রি  কত  কী  শেখালে  ?
জানো  তুমি  সব , সবার  হিসেবে  যখন  চলতে  হবে ,  
পরীক্ষার  দিন  এতো  ঘুমহীন  রাত  কেন  কাটালে  ?


তোমার  দেয়া  সংস্কার  আজ  আমার মাথার  দিব্যি  নিয়ে  যাওয়া
আমার  চলার  পথে  আমায়  বেড়ি  পড়ায়  খালি
আমায়  বলে  যায়  - " তোমার  কেন এই  অন্য মনের  চাওয়া ?"
মুছে  ফেলো  তোমার  পথের  ধূলি ,
আমার   পথে  পথে  তোমার  পথ  পাওয়া ।"


সকাল  হলে  কি  সেথায়  আজও  শিশির  ঘাসে  পড়ে ?
হেমন্ত  এলে  আজও  ঘরের  পেছনে  শিমুল গাছের  সব  পাতা  ঝরে ?
এখনো  কি  দুপুর  বেলা  হলে
ঘুমের  ছলে  আসা  তোমার  আস-পাশে  ?
ছাদের  উপর  আমের  আঁচার  
আর  কি  কেউ  চুরি  করতে  আসে  ?


শীতের  বেলায়  সন্ধ্যা  হলে  সবাই  ফিরে  যায় ,
লুকিয়ে  থাকা  আমার  তখন  তোমার  আঁচল পায় ,  
যদি কেউ ভয় দেখাতে আসে
বলো না মা, তাল গাছের পেছনে কি আজও শাক -চিল্লিরা বসে  ?


আজও কি নীল পরীরা ডানায় করে স্বপ্ন নিয়ে আসে?
কোন মেয়েটি ঘুরে বেড়ায় তাদের দেশে দেশে ?
আমার জন্যে একটু রেখো,
আমিও শান্ত শোব মাগো তোমায় ঘেসে ঘেসে ।
বড়ো হতে চাই না মা আর , আর কত বড়ো হবো  ?
হাতের মুঠোয় আজও লজেন্স টফির গন্ধ আসে  ,
কথা দিই মা বড়ো হওয়ার , তোমার কোলে যেদিন আবার জন্ম নেবো ।