আমার ভীষন কাঁদতে ইচ্ছে করে
একটা কান্না ঘর থাকলে ভালো হতো;
সবার অগোচরে কাঁদতে পারতাম
মন ভরে;
কষ্টগুলো কান্নার জলে ভেসে যেতো।


আর কথা শুনতে হতো না;
কান্নার কারনে কথাগুলোতে
আরো বেশি মন খারাপ হয়;
ভেতরটা ভেঙে চুরমার করে দেয়।


ছোট বেলায় মা শিখিয়েছিলেন
ছেলেদের কাঁদতে নেই
মেয়েরা কাঁদবে, এটা তাদের শোভা পায়
ছেলেদের কান্না মানায় না।


বাবা যেদিন মারা গেলেন
সেদিনও কাঁদতে পারিনি
দাফন করার দায়িত্ব ছিল কাঁধে।
অন্যরা শাষন করেছিলো,
বাবার মৃতদেহের সামনে ছেলেকে কাঁদতে নেই
দ্রুত দাফন কাফনের ব্যবস্থা করতে হবে।
বাবার লাশ যখন কবরে নামিয়ে দিলাম
তখনও কাঁদতে পারিনি।
আমি তবে কাঁদবো কখন??


বড় ভাইকে একদিন লুকিয়ে
মন খারাপ করতে দেখেছিলাম;
হবু ভাবী হারিয়ে গেলেন চিরদিনের জন্য
কিন্তু কাঁদতে পারেনি।


বাবা শক্ত করে বলে দিয়েছিলেন
রোজগার না করা পর্যন্ত,বিয়ের কথা যেন মুখেও না আনে;
বউকে খাওয়াবে কি
এটাই যেন প্রধান চিন্তা হয়।
হৃদয় ছিন্নভিন্ন হয়ে যাক, তবুও পুরুষের কাঁদতে নেই।


আমিও দীর্ঘদিন বেকার ছিলাম
চাকুরী জোটাতে পারিনি, অনেক চেষ্টা করেছিলাম
কাউকে বলতে পারিনি,
পরাজিত মন নিয়ে হেসে হেসে প্রেমিকার সাথে কথা বলেছিলাম
তাকেও বলতে পারিনি
পুরুষের মন খারাপ করতে নেই
কোথাও পরাজিত হতে নেই
তাইতো শিখিয়েছে, স্কুল, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়
সমাজও একই সুরে কথা বলেছে।


সেই যে জন্মের পর,
জীবনের শুরুতেই কেঁদেছিলাম;
আর কাঁদতে পারিনি
সমস্ত জীবনের কান্না কি পুরুষ মানুষ তখন কেঁদে নেয়?


মা যখন মারা গেলেন
কান্নাগুলো সব গিলে ফেলেছি্লাম
গাল বেয়ে পড়া কান্নাগুলো, বা হাতের তালুতে মেখে রেখেছিলাম
তবুও কেউ যেন কান্না দেখতে না পায়
সতর্ক পাহাড়ায় রেখেছিলাম নিজেকে।
সংসারের দায়িত্ব বুঝে নিতে হবে
মায়ের লাশের সামনে বসেই শিখেছিলাম
কাঁদতে ভুলে গিয়েছিলাম।


পুরুষের কান্নার সময় নেই
কাঁদতে নেই
পুরুষ কাঁদতে জানে না
কাঁদতে শিখেনি
শেখানো হয়নি
পুরুষের কান্না গিলে ফেলতে হয়


একটা কান্না ঘর থাকা দরকার
পুরুষের জন্য


সেপ্টেম্বর ৩, ২০২৩ রাত ১১টা
মিরপুর, ঢাকা