সম্প্রতি শেষ হলো বাংলা কবিতা ডট কম এর ব্যানারে আন্তর্জাতিক কবি সম্মেলন, শিরোনাম “বাংলা কবিতা আন্তর্জাতিক কাব্য বাসর ও কবি সম্মেলন-২০২৩”। মূল অনুষ্ঠান ছিল দুদিন, আগষ্ট ১৩ এবং ১৪ তারিখ, তাছাড়া আগে ও পরে অতিথিদের জন্য নানা আয়োজন তো ছিলই।  সামগ্রিকভাবে পুরো আয়োজনের নেতৃত্বে ছিলেন কবি পরিতোষ ভৌমিক, তার সাথে ছিলেন সহযোগী টিম, উপদেষ্টা পরিষদ, এছাড়াও নানাভাবে ভারতের এডমিন, বাংলাদেশের এডমিন সহ আমরা অনেকেই নানা সময়ে ভিন্ন ভিন্নভাবে সহযোগীতায় ছিলাম (আইডিয়া  দিয়ে কিংবা অন্য কোনভাবে)। অনেকের লেখায় ইতোমধ্যে আমরা অনুষ্ঠানের বিস্তারিত বিবরন পেয়েছি (যারা উপস্থিত থাকতে পারিনি, তারা বিবরনগুলো পড়ে দুদিনের কর্মকান্ড অনেকটাই দৃশ্যমান করতে পারবেন বলে আমার ধারনা), আমি সেদিকে আর মনোযোগ দিচ্ছি না বরং আমার নিজের অনুভূতিটুকু ব্যক্ত করছি।


প্রথমেই আয়োজকদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করছি, অনিচ্ছাকৃত এবং সম্পুর্ন আমার সক্ষমতার বাইরে এক ঘটনার কারনে প্রথম দিন উপস্থিত থাকতে পারিনি যদিও কমিটমেন্ট ছিল এবং আমার নিজের চেষ্টার কোন ক্রুটি ছিল না। তবে, অনেক প্রতিকুলতা অতিক্রম করে, দ্বিতীয় দিন থেকে উপস্থিত থাকতে পেরেছি।


যে কোন বড় অনুষ্ঠানের মূলত চারটি অংশ থাকে-


১। আয়োজন অর্থাৎ ব্যবস্থাপনা
২। অনুষ্ঠানের কনটেন্ট (অনুষ্ঠান সূচী, সার্বিক দিক বিবেচনায় রেখে অনুষ্ঠান সাজানো)
৩। অতিথি ব্যবস্থাপনা (আসা যাওয়া, থাকার ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি)
৪। আপ্যায়ন (খাওয়া দাওয়া, ম্যানু ইত্যাদি)


এছাড়া আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠান হলে, সাইট সিইং তো থাকেই।


উপরে উল্লেখিত, সবগুলো বিষয়ের মধ্যেই একটা বিষয় সম্পৃক্ত কিন্তু অদৃশ্যমান থাকে (যদিও নানা ফর্মে তা দৃশ্যমান হয়ে ওঠে), সেটা হলো, আন্তরিকতা, সঠিক নেতৃত্ব এবং সর্বোপরি, সঠিক সময়ে সঠিক কাজটি করা। তার জন্য দরকার হয়, যিনি নেতৃত্ব দিচ্ছেন তার Commitment, Dedication and Patience। তিনটি গুনের সমন্বয়ে তৈরি হয় সঠিক নেতৃত্ব, অন্যরা তখন নেতৃত্বের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে ওঠে এবং নিজ নিজ দায়িত্ব পালনে সর্বোচ্চটা দিয়ে থাকে।


ত্রিপুরার উক্ত অনুষ্ঠানে আমার সর্বপ্রথম চোখে পড়লো, নেতৃত্বের বিষয়টি। অনেকেই অনেক অনুষ্ঠানের নেতৃত্ব দিয়ে থাকে, অনুষ্ঠান সম্মপন্নও হয়ে থাকে কিন্তু সঠিক নেতৃত্বের গুনে যে অনুষ্ঠান হয় তা গতানুগতিকতার বাইরে গিয়ে অংশগ্রহনকারীদের মনে একটা চিরস্থায়ী ভালো লাগার ইমেজ তৈরি হয়। ত্রিপুরার অনুষ্ঠানটি সেই সূচকে উত্তীর্ণ, আমরা যারা অংশগ্রহনকারী ছিলাম, দীর্ঘদিন ত্রিপুরার দুদিনের এই অনুষ্ঠান চাইলেও ভুলতে পারবো না। হয়তো ভবিষ্যতের আরো অনুষ্ঠান হবে, তখনো ত্রিপুরার এই অনুষ্ঠানের গল্প মুখে মুখে প্রচারিত হবে (মুশকিল হলো, অনেকেই পরের কোন অনুষ্ঠানকে মাপবে ত্রিপুরার অনুষ্ঠানের সূচকে এবং পরের নেতৃত্বের জন্য একটা চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়ে গেলো)। সার্বিক অর্থেই ত্রিপুরায় অনুষ্ঠানের নেতৃত্ব, অনুষ্ঠানের সার্বিক আয়োজন একটা মাইলফলক হয়ে রইলো।


অনুষ্ঠানের প্রথমদিন যেহেতু থাকতে পারিনি ফলে তার কনটেন্ট নিয়ে কোন মন্তব্য বা অনুভূতি ব্যক্ত করতে পারছি না কিন্তু দ্বিতীয় দিনে পুরো সময়টাই ছিলাম বলে, কাছে থেকে দেখা অনুষ্ঠানের সার্বিক আয়োজন। যিনি অনুষ্ঠান এংকরিং করছিলেন, তিনি বিশেষভাবে ধন্যবাদ পাবার যোগ্যতা অর্জন করেছেন, অসাধারন সুচারু ছিল তার এংকরনিং (অনুষ্ঠান পরিচালনা), এতো এতো কন্টেন্ট নিয়ে একটা অনুষ্ঠান পরিচালনা করা খুব সহজ কোন কাজ নয়, বেশ ঘাম ঝড়াতে হয়েছে এবং মেধার পরিচয় দিতে হয়েছে।


তারচেয়ে এক ধাপ উপরে যিনি অনুষ্ঠানের সার্বিক পরিকল্পনা এবং বিন্যাস করেছেন। নিঃসন্দেহে এখানে কবি পরিতোষ ভৌমিক তার নান্দনিকতার পরিচয় দিয়েছেন, খেয়াল রেখেছেন পুরো ত্রিপুরার বৈচিত্র্যতা ( ক্লাসিকাল গান, গণসংগীত, ঐতিহ্যবাহী নাচ, বিভিন্ন আদিবাসি সংস্কৃতি ইত্যাদি ) তুলে ধরা, অংশগ্রহনকারীদের মন মানুষিকতা এবং তাদের চাহিদা, সেই সাথে ঘড়ির কাটা…সব কিছুর সমন্বয় করা  একটি জটিল প্রক্রিয়া যা পরিতোষ ভৌমিক এবং তার টিম সম্পন্ন করেছেন বিন্দুমাত্র ঝামেলা ছাড়াই (হয়তো ভেতরে ভেতরে অনেক কাঠ খড় পোড়াতে হয়েছে কিন্তু আমরা অংশগ্রহনকারীরা কিছুই টের পাইনি)।


একটা অনুষ্ঠানে এতো কন্টেন্ট ছিল যে, শুধুমাত্র যদি পারফরমারদের সংখ্যাই কাউন্ট করি তাহলেও প্রায় শতাধিক মানুষের কর্মকান্ড, সঠিক সময়ে একের পর এক পারফর্ম করা, সত্যিই অসাধারন এবং এমেজিং (অন্তত আমার কাছে)। সেখানে বসেই ভাবছিলাম, যদি আমি এই অনুষ্ঠানের নেতৃত্বে থাকতাম, তাহলে কতোটা সফলতার সাথে আয়োজন করতে পারতাম !!!!!


আরো একটি বিষয় ছিল চোখে পড়ার মতো, শব্দ চয়ন। অনুষ্ঠানের ব্যানারে “সংস্কৃতিক অনুষ্ঠান” লিখা হয়নি, লিখা ছিল “ সংস্কৃতিক সমারোহ”, পুরো অনুষ্ঠানটি আক্ষরিক অর্থেই ছিল “সমারোহ”, বৈচিত্র্যতায় ভরপুর। ব্যানারে লিখা ছিল, “আন্তর্জাতিক” শব্দটিও। যে কোন অর্থেই এটাকে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন অনুষ্ঠান বলা যায়, কোটি টাকার খরচ করে আয়োজিত যে কোন রাষ্ট্রিয় অনুষ্ঠানের  সাথে তুলনীয়, সমমর্যাদায়, সমহিমায় অনুষ্ঠানটি আয়োজিত হয়েছে।


পরের দিন, সাইট সিইং, নীর মহল, ঐতিহাসিক মন্দির ভিজিট এবং  পরিতোষ দাদার বাসার চা আপ্যায়ন পর্ব, পুরোটা ছিল সুচারু আয়োজন (সকালের নাস্তা থেকে শুরু করে দুপুরের লাঞ্চ ইত্যাদি)


এখানে বেশ কিছু মজার ঘটনাও ঘটলো, দুপুরে লাঞ্চ খাবার সময় বললাম, “ত্রিপুরা থেকে বাঁশ খেয়ে গেলাম”, আয়োজকগন প্রথমে একটু থমমত খেয়ে গেলেন, আমাদের সংস্কৃতিতে একটা প্রবাদ আছে “বাঁশ খাওয়া” মানে, ভয়াবহ খারাপ কিছু, সে অর্থেই সবাই থতমত খেয়েছিলেন, এটা আমি আবার কি বললাম!!!


বাঁশের তরকারীটা অসাধারন ছিল। বাঁশের তরকারী, বাশের- সবজি ইত্যাদি বাংলাদেশেও হয়, বিশেষত চট্রগ্রাম আদিবাদী এলাকায়, বাঁশ বেশ সুস্বাদু খাবার। আমার কখনোই বাঁশ খাবার সুযোগ হয়নি, ত্রিপুরায় এসে প্রথম বাঁশ খেলাম। পরিতোষ দা’র নেতৃত্বে ত্রিপুরার বাঁশ খেলাম, অসাধারন লাগলো, আবার ত্রিপুরায় আসবো বাঁশ খেতে ইত্যাদি। এবার সবাই বিষয়টা বুঝে নিলো এবং হাসির হুল্লোর তৈরি হলো। কেউ একজন, সবার অনুভূতি ভিডিও ক্লিপ করছিলো, একেক জন একেক ধরনের অনুভূতি ব্যক্ত করছিলো, এর মধ্যে কেউ কেউ “ত্রিপুরায় এসে জীবনে প্রথম বাঁশ খাওয়ার” অনুভূতিও ব্যক্ত করলো।


সবশেষে। একটা কথা না বললেই নয়, “ভারসাম্য” বজার রাখা। অনেক সময় দেখা যায়, কোন অনুষ্ঠানের একটা পর্ব খুব ভালো হয় অন্য কোন পর্বে সেটা হয় না ফলে ভারসাম্য নষ্ট হয় এবং অংশগ্রহনকারীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। পরিতোষ দা’ তার নেতৃত্বের গুনে সেটা হতে দেননি। পুরো আয়োজন, শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ছিল  “ভারসাম্যপুর্ণ”, তিনি খুব সজাগ ছিলেন ভারসাম্য রক্ষার ক্ষেত্রে।


আপাদত এটুকু অনুভূতি ব্যক্ত করলাম।
সবার সাথে আবার দেখা হবে অন্য কোন জায়গায়, অন্য কোন অনুষ্ঠানে, ভালো থাকবেন।


আগষ্ট ১৯, ২০২৩ রাত ১১টা
মিরপুর, ঢাকা, বাংলাদেশ