কবি পরিচিতিঃ কবি ফারহাত আহমে জন্মগ্রহন করেছেন ঢাকা জেলা, বাংলাদেশ, ২৪ মে, ১৯৭১ সালে। তিনি ১৭ বছর ঘরে লেখালেখি করছেন, বাংলা কবিতার আসরের সাথে যংযুক্ত আছেন ৬ বছর ১ মাস হলো, এরই মধ্যে আসরের পাতায় ২২০৭ টি কবিতা প্রকাশ করেছেন এবং এ পর্যন্ত ১৫টি একক কাব্য গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে।


প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থের নাম ও প্রকাশকাল :
১. অর্ধসত্য-ফেব্রুয়ারি ২০০৫
২. বিশ-এপ্রিল ২০০৭
৩. কৃষ্ণকাব্য-সেপ্টেম্বর ২০০৭
৪. বাঘ বাঙালি-ফেব্রুয়ারি ২০১৬
৫. মানুষ-ফেব্রুয়ারি ২০১৭
৬. ক্যানভাস-ফেব্রুয়ারি ২০১৮
৭. মোমেন্টাম-ফেব্রুয়ারি ২০১৮
৮. ষড়যন্ত্র-এপ্রিল ২০১৮
৯. হাঁটুজল নদী- ফেব্রুয়ারি ২০১৯
১০. ডাহুকী-ফেব্রুয়ারি ২০১৯
১১. অম্লজান-ফেব্রুয়ারী ২০২০
১২. দাবায়ে রাখতে পারবা না-মার্চ ২০২০
১৩. চা‌হিবামাত্র - ফেব্রুয়া‌রি ২০২১
১৪. চার লাইন/৭১-ডি‌সেম্বর ২০২১
১৫. দুঃখপুর-ফেব্রুয়া‌রি ২০২২।


তার একক কাব্যগ্রন্থভ “হাঁটুজল নদী’ নিয়ে রিভিউ লিখছি। এই কাব্যগ্রন্থটি  অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৯ সালে প্রকাশ করেছে শব্দ শিল্প ঘর প্রকাশনী সংস্থা , ঢাকা, বাংলাদেশ থেকে। প্রচ্ছদ একেছেন কবি নিজে, ফারিহা শামস আহমেদ এবং শাহদাৎ লিটন যৌথ ভাবনায়। কাব্যগ্রন্থটিতে মোট ৯০টি কবিতা স্থান পেয়েছে।


হাটুজল নদী একক কাব্যগ্রন্থঃ
কবি ফারহাত আহমেদ তার কবিতায় একটা নিজস্ব স্টাইল দাড় করিয়েছেন, প্রতিনিয়ত (প্রতিদিন) কবিতা লিখছেন, ভিন্ন ভিন্ন ইস্যু তার কবিতায় স্থান পাচ্ছে কিন্তু একই  স্টাইল, একই ধারা বজায় রাখছেন। কবিতার ইস্যু যাই হউক, তিনি নিজের স্টাইল সব সময় বজায় রাখছেন। একটা স্বতন্ত্র ধারা তৈরি করা আসলেই কঠিন কাজ। কবি’র অন্য একটি কবিতার আলোচনায় লিখেছিলাম তার কবিতায় আমি ভিন্ন ধারার স্ট্যাইল খুজে পাই (পূর্বের আলোচনার কিছু অংশ এখানে আবার সংযুক্ত করলাম)


তার লেখা এবং ভাবনাগুলো একটু ভিন্ন ধারার, সচরাচর যে ধরনের কবিতা পাতায় দেখি, তারচেয়ে ভিন্ন ধারার ভাবনা দ্বারা প্রভাবিত তিনি। তার কবিতা বরাবরই আকারে খুব ছোট মাপের কিন্ত প্রত্যেক কবিতাতেই কিছু না কিছু ম্যাসেজ থাকে, খোঁচা থাকে, প্রতিবাদের সুর থাকে। শুধু “কবিতা লেখার জন্যই কবিতা লেখা” এরকমটা তার ক্ষেত্রে ঘটে না। প্রত্যেকটা কবিতাতেই তিনি কিছু বলতে চান, কিন্তু ইঙ্গিত করতে চান। আমার কাছে বরাবরই তার কবিতা “রিয়ালিজম” এবং  “অ্যাফোরিজম” এর সংমিশ্রন মনে হয়।


* রিয়ালিজম (বাস্তববাদ) এ মতানুসারে, সাহিত্যে ঘটবে বাস্তবের প্রতিফলন।।কাজেই ভাষা হবে সহজ সরল, সাধারন মানুষের মুখের কাছাকাছি। মূলত মানুষের বাস্তব জীবন নিয়ে, সমাজ ও জীবনযাপনের সমস্যা নিয়ে। কবি হবেন সোশ্যালি কমিটেড এবং তিনি বাস্তবতার ছবি আঁকতে পারবেন। এখানে সৌন্দর্যের সন্ধান চলে ভাষা অপেক্ষা বিষয়ের উপর বেশী। জর্জ ক্র্যাবল, রবার্ট ফ্রষ্ট্রের কবিতায় বহুল পরিমাণে বাস্তবের উপাদান খুঁজে পাওয়া যায়। কবি’র এই গ্রন্থ থেকেই একটা উদাহরন দেয়া যায় (কবিতার কিছু অংশ)-


বিশ্বাস করে
আশ্বাস পেয়ে
অন্ধের মতো খুব মাতি
কষ্টের টাকা
হাওয়ায় মিলায়
ব্যবসায় জ্বলে বাতি


**অ্যাফোরিজম একটি সংক্ষিপ্ত বক্তব্য যা সত্যকে একটি স্মরণীয় উপায়ে প্রকাশ করে। সত্য বা মতামতকে মজাদার পদ্ধতিতে বর্ণনা করতে এটি সত্যের বিষয়টিকে নিয়োগ করে। নীতি, সাহিত্যিক এবং দার্শনিক নীতিগুলিতে প্রায়শই অ্যাফোরিজম প্রয়োগ হয়। যেহেতু এফোরিজমে সত্য থাকে তাই সেগুলি সর্বজনস্বীকৃত। আলেকজান্ডার পোপ ১৮ তম শতাব্দীতে এফোরিস্টের একজন দুর্দান্ত স্রষ্টা ছিলেন। অ্যাফোরিজমের উদাহরণ গ্রন্থের দুটি কবিতার কিছু অংশ-


“তের বছরের শিশুটিকে তারা
খাম্বার সাথে বাঁধল
লাঠির বাড়িতে বেদম পিটুনি
শিশুটি “ও মাগো” কাঁদল”


“নীতি কাঁপানো নেতাকে যখন চোরের সঙ্গে দেখি
ফলোয়ার হয়ে মারবে টেক্কা তখন বলবে “সেকি”!!


কবি ফারহাত আহমেদ, কবিতাকে পরিবর্তনের হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছেন,।সমাজে বহমান অন্যায়, অবিচা্র, নীতিহীনতা, কুসংস্কার, শোষন… কে তিনি পরিবর্তন করতে চান কবিতার মাধ্যমে, গনসচেতনতা ছাড়া কোন কিছুতে সাময়িক পরিবর্তন হলেও তার স্থায়িত্ব থাকে না, তাই তিনি গনসচেতনাকে সর্বাগ্রে প্রাধান্য দিতে চান। সে কারনে কবিতার সাথে গনযোগাযোগ স্থাপন একটি জরুরী বিষয়। কবিতা সম্পর্কে বিজ্ঞ জনের যে দৃষ্টিভঙ্গি, সেখান থেকে বেরিয়ে নিজের একটি স্বতন্ত্র স্টাইলের মাধ্যমে কবিতা এবং কবিতার মাধ্যমে পাঠকের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন। কবিতার শিরোনাম থেকে কবিতার শরীর সবজায়গাতেই, সহজবোধ্যতার, সহজগম্যতার একটি ভাবনা কাজ করে তার মাথায়, যেমন কিছু কবিতার শিরোনাম-ভেজাল, ঋণ, যুদ্ধ, ডাক, দুই টাকা, ইমেজ, ব্যবসা, বেহুলা, চিরকাল ইত্যাদি (বলা যায় কবি’র সব কবিতার শিরোনামই এরকম)


তার কবিতায়, এক ধরনের তীর্যক কটাক্ষ করে সমাজকে রক্তাক্ত করার তীব্র বাসনা দেখা যায়, পরকালের ভাবনাকে আশ্রয়, পরকালের লোভে,  অন্ধত্বের মাধ্যেমে ইহকালের সর্বনাশ দেখতে পান তিনি, ইহকালের বৈচিত্র্য ছেড়ে, পরকালের লোভকে তিনি বলেছেন- “ফটোকপি রাত,  ফটোকপি দিন “, অথচ আমরা চাইলেই মানবতার পতাকার নীচে ইহকালেই পরকালের চাওয়াগুলো পূরন করতে পারি সেই সাথে পরকালের পাওয়ানাকেও অর্জন করতে পারি।


শেষ করছি একটু পুরো কবিতা তুলে দিয়ে, পাঠক (যারা তার কবিতা এখনো পড়েননি) বুঝতে পারবেন তার কবিতার ভিন্ন স্টাইল, ভিন্ন ঘরানা-


ফালতু-কথন
-ফারহাত আহমেদ


“মুড়ি খাও” বলে”
টিটকারি দিয়ে
নিজের ললিপপ চোষে
“মারামারি করা
ভালো নয়” বলে
থাপ্পর দেয় কষে।

ভালো মানুষের
ভাব নিয়ে তারা
পিলোপাস গেম খেলে
দেশ প্রেমের
প্রমাণ শুধু
মুরগী কেনায় মেলে।


পত্রিকা পড়ে
চায়ের কাপে
বৈশাখী ঝড় তোলে
ঘটনার পরে
ঘটনার কথা
জেলিফিস হয়ে ভোলে।


কবি’র জন্য রইলো শুভেচ্ছা।