কবি রশিদ হারুন পরিচিতিঃ জি এম হারুন অর রশিদ (রশিদ হারুন) এর জন্ম ১ আগষ্ট। তিনি দুই ভাই, দুই বোনের মধ্যে সবার জ্যৈষ্ঠ। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে পড়াশুনা করেছেন। ছাত্র জীবনে রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। তিনি দুসন্তানের জনক। বর্তমানে পেশা হিসেবে ব্যবসা করছেন, সেই সাথে নিয়মিত কাব্য চর্চা করছেন।


প্রকাশিত গ্রন্থসমূহঃ তার বেশ কয়েকটি একককাব্য গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে, উল্লেখযোগ্য একক কাব্যগ্রন্থের মধ্যেই, “সময়ে ভেসে যায় বৃষ্টির জ্বলে”, “ভালো থেকো মনোলীনা” ইত্যাদি। কবি রশিদ হারুন ৯ বছর ৬ মাস হলো বাংলা কবিতার আসরের সাথে সদস্য হিসেব সংযুক্ত আছেন। এ পর্যন্ত  বাংলা কবিতা আসরের পাতায় তার ৫৬৩টি কবিতা এবং আলোচনার পাতায় ২টি লেখা প্রকাশিত হয়েছে।


রিভিউ: সময় ভেসে যায় বৃষ্টির জ্বলে


কবি রশিদ হারুন এর কবিতা আমায় ভীষন টানে। আসরে তার প্রকাশিত কবিতার ৬০-৭০% কবিতাই আমার পড়া হয়েছে। এমনকি তার দুটো কবিতার উপর আমার লিখা আলোচনাও আসরে প্রকাশিত হয়েছে। তার কবিতাগুলোকে আমার “কথা কাব্য” মনে হয়। আমাদের প্রতিদিনের জীবনের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অনুভব, জীবন বোধ, হতাশা, প্রেম, কান্না বেদনা … ইত্যাদিই তার কাব্যের উপপাদ্য। মাঝে মাঝে তার কবিতা, মনে হয় যেন নিজের সাথেই কথা বলছি। তার কবিতার কথাগুলো নিজের মনে হয়, কবিতায় ব্যবহৃত শব্দগুলো, লাইনগুলো খুব আপন মনে হয়, একান্ত নিজের মনে হয়। কবিতাগুলো খুব জীবন্ত, প্রান আছে মনে হয়। নিজের ভেতর থেকে উঠে আসা কথাগুলোই যেন বা কবি গোপনে জেনে গেছেন এবং তার কবিতায় তুলে ধরেছেন। বেশির ভাগ কবিতাই, নিজের না বলা কথাগুলোর প্রতিচ্ছবি দেখতে পাই আমি। সে কারনেই তার কবিতা  আমার খুব প্রিয়, আমায় ভীষন টানে।


কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশ করেছে অন্বয় প্রকাশনী, ঢাকা থাকে ফেব্রুয়ারী, ২০১৯ সালে, এখানে ৯৫টি কাব্য স্থান পেয়েছে। কবি বইটি উৎসর্গ করেছেন, মা এবং বাবাকে, উৎসর্গ পত্রে লিখেছেন, যাদের স্মৃতি বয়ে বেড়াচ্ছি ২০০৪ সাল থেকে। এখানে দুটি কবিতা আছে বাবা মাকে নিয়ে, শিরোনাম-মা আর আমার বিষন্নতা এবং বাবার শেষ চিঠি। কবিতা দুটি গভীর এক বিষন্নতা এবং কষ্টের, ভেতরে ভেতরে দহনের চূড়ান্ত রূপ ফুটে উঠেছে।


আমরা সাধারনত সকল উপন্যাস এবং ছোট গল্পে একটা কেন্দ্রীয় চরিত্র দেখতে পাই এবং কেন্দ্রীয় চরিত্রকে ঘিরে পুরো উপন্যাস বা ছোট গল্প আবর্তিত হয়। কাব্যগ্রন্থে সাধারনত এরকমটা দেখা যায় না। কিন্তু কবি রশিদ হারুন, “মনোলীনা” নামক একটি বিশেষ চরিত্র সৃষ্টি করেছেন যাকে ঘিরে কবি’র অনেক, অনেক কাব্য রচিত হয়েছে। মনোলীনা চরিত্রকে কবি এমনভাবে কাব্যরূপ দিয়ে থাকেন, মনে হয় যেন ঢাকা শহরে র্বাস্তায় বের হলেই কোথাও না কোথাও মনোলীনাকে দেখতে পাওয়া যাবে, কোন রেলস্টেশনে কিংবা বাড়ির ছাদে মোনলীনা দাঁড়িয়ে আছে। পাঠকের মনে মনোলীনাকে দেখতে পাবার এক দারুন আকুতি তৈরি হয়, কবিতা পড়ার  পরে। মনে ভীষন ইচ্ছে জাগে, একবার যদি মনোলীনাকে দেখতে পেতাম!! এরকম একটা আক্ষেপ কাজ করে সব সময়, পাঠকের মনে। আমার যেমন বনলতা সেনকে দেখতে ইচ্ছে করে, তেমনি মনোলীনাকেও দেখতে ইচ্ছে করে।


এমনকি কবি, দেশের বাইরে গিয়েও মনোলীনাকে ভুলে যাননি। একবার মন্ট্রিল শহর, কানাডা তে গিয়ে লিখলেন-


মনোলীনা
এ কোন শহরে তুমি আমাকে ডেকেছো
যেখানে অভিমান আর আবেগ
বাতাসে ভেসে বেড়ায় তুষারধবল হয়ে
বুকের সব আক্ষেপ বরফের মতো
জমাট বেঁধে পাহাড় হয়ে যায় গোপনে…


কবি, রশিদ হারুন এর প্রায় সকল কবিতায় একটি বিষাদের সুর শোনা যায় খুব গোপনে, জীবনের পরতে পরতে যেন দহন আর বিষাদ লুকিয়ে থাকে সব সময়। কবিতা পড়ার সময় তাৎক্ষনিকভাবে পাঠক বিষাদে আক্রান্ত হয়ে পরেন। বিষাদ যেনো একটি সংক্রামক রোগ, পাঠক কে সংক্রামিত করে খুব দ্রুত।


কিছু কিছু কাব্যের শিরোনাম তো অসাধারন, যেমন-


• আমি একটা অসুখ কিনেছিলাম
• চব্বিশ ক্যারেটের ভালোবাসা
• মানুষটার ক্রশফায়ার হয়েছে
• একটি বেওয়ারিশ লাশের অপেক্ষা
• বাবাকে ধার দেবেন প্রভু
• হলুদ শার্ট ও একজন নারী
• ঈশ্বর মানুষকে একটি মুখ দিয়েছিলেন
• আজ ঈশ্বরের নামে মামলা করে দিবো…......


তার কাব্যে আরেকটি অনবদ্য চরিত্র”শাহেদ” এর সাথে পাঠক খুব পরিচিত, তার বিশ্ববিদ্যালয় সময়ের ক্লাসমেট এবং রুমমেট, শাহেদ তার সার্বক্ষনিক সঙ্গী, ছায়ার মতো তার সাথে জড়িয়ে থাকে সব সময়্। তার সুখে দুঃখে, বিপদে শাহেদ এসে হাজির হয়, বেশ কয়েকটি কাব্য রচিত হয়েছে শাহেদকে নিয়ে। মনোলীনা এবং শাহেদ চরিত্র কবি’র অনবদ্য সৃষ্টি, সচরাচর কবিতায় এরকম একক কোন চরিত্রের আধিপত্য দেখাঁ যায় না কিন্তু করি রশিদ, মনোলীনা এবং শাহেদকে ছাড়া যেন তার কাব্য জীবন ভাবতেই পারে না।


আসরের পাতায় আমি কবি রশিদ হারুন এর ভক্ত, আজ সুযোগ হয়ে গেলো তার একটি একক কাব্য গ্রন্থের রিভিউ লিখতে গিয়ে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করার।


কবি’র আরেকটি একক কাব্য গ্রন্থ আছে “ভালো থেকো মনোলীনা”, সংগ্রহ করে পড়ার  আগ্রহ রইলো।


কবি’র জন্য রইলো অফুরান শুভেচ্ছা


(নোটঃ কিছুদিন আগে, ঢাকা নিলক্ষেত এলাকায় একটা কাজে গিয়ে, হাতে সময় থাকাতে বই পাড়ায় ঢু মারলাম। কবিতার বই, কবিতার উপর প্রবন্ধের বই ঘাটতে ঘাটতে, “সময় ভেসে যায় বৃষ্টির জ্বলে” বইটি চোখে পড়লো, বইয়ের টাইটেল খুব পছন্দ হলো, ভেতরে দুয়েকটি কবিতা পড়ে দেখার চেষ্টা করলাম পাতা উলটে উলটে, কবিতার কথাগুলো খুব পরিচিত মনে হলো, খুব চেনা চেনা লাগছিলো, পরে, কবি’র পরিচয় অংশে গিয়ে তার পরিচয় পেলাম। আর কাল বিলম্ব না করে বইটি কিনেই ফেললাম, তার কবিতার সাথে আমার আগেই পরিচয় আছে, ফলে আর কিছুই ভাবতে হলো না। উল্লেখ্য, এটাই কবি’র একমাত্র কাব্যগ্রন্থ আমার ব্যক্তিগত লাইব্রেরীতে সংগৃহীত রইলো।)