আলোচনা  ১৯৯


আসরের, বেশ পরিচিত কবি এবং শক্তিমান আলোচক, কবি শরীফ এমদাদ হোসেন এর কাব্য “অশ্রু মুছে নেয়া আঁচলের ভাজ”, হৃদয় নিংড়ে উঠে আসা নিঃশ্বাসের বহিঃপ্রকাশ করেছেন শব্দের গাঁথুনিতে। যে কোন স্বজন হারানোই জীবনের জন্য একটা বড় ধরনের বিপর্যয়। প্রকৃতির এই অমোঘ নিয়মের বাইরে যাবার সাধ্য কি মানুষের!!  তবু জীবন চলে, জীবনের নিয়মে।


বাবা মা হারোনোর বেদনা, আরো ভয়ানক, মানুষকে ভেঙ্গে চুড়মার করে দেয়, নিঃস্ব করে দেয়, এক ধরনের শূন্যতা বুকে চাপা দিয়ে রাখে সারাক্ষন। কবি, মা হারানোর কষ্ট নিয়ে স্মৃতি নিংড়ে মাকে অনুভব করেছেন, মায়ের স্পর্শ অনুভব করতে চেয়েছেন পরম মমতায়। অন্যদিকে পাঠক তা পড়তে পড়তে অশ্রুতে ভিজিয়েছেন এন্ড্রোয়েড/মোবাইল স্ক্রিন।


শিরোনামে ব্যবহার করেছেন “আঁচলের ভাজ” শব্দ দ্বয়। মায়ের আঁচল কেবল অশ্রুই মুছে দেয় না, অসাধারন এক ক্ষমতার প্রতীক হয়ে জীবনের সকল আশার আলো জ্বেলে দেয়, নিরাশাকে শক্তিতে রূপান্তরিত করে, হাহাকার গুলো নিমিষেই ফুঁৎকারে উড়িয়ে দেয়, আঁচলের ভাজে ভাজে লুকানো থাকে সন্তানের সকল সাহস, প্রাণশক্তি এবং জীবনীনশক্তি।


“উঠোনে মায়ের মতো রোদ আসে না”, সূর্য্যের চেয়ে বেশী আলোকিত মা, সারা পৃথিবীকে আলোকিত করার সামর্থ্য রাখে যে সূর্য্য, মায়ের অনুপস্থিতিতে সে আলোও হার মানে। মায়ের স্পর্শের অভাবে প্রকৃতি কেমন নিথর থাকে, কোন ফলন হয় না,  বাড়িময় অন্ধকারাচ্ছন্ন থাকে, হালের বলদ, দুধেল গাভী শোকে বন্ধ রাখে তাদের নিজেদের কাজ, এমনকি হাসিতে উচ্ছল থাকা বৃষ্টি বিকেলও থাকে মনমরা। কিছু রূপকের মাধ্যমে মা হারানোর শোককে, কবি প্রান দিয়েছেন, জীবন্ত করে তুলেছেন তার গভীর অনুভবের মাত্রায়।


শুধু মায়ের অভাবে, প্রতিদিনের, প্রতিক্ষনের, সময়কে কবি স্থির করে দিয়েছেন। পড়ার টেবিলে মন বসে না, লেখা হয় না কবিতা, শূন্য জায়নামাজ একাকীত্বে ভোগে, শব্দেরা আর জোটবদ্ধ হয় না কবিতার লাইনে। দুপুরেই মা হারিয়ে গেল অথচ গেল সকালটা কেমন স্মৃতিতে ভিজে উঠলো অনায়াসে, শোক বই ভিজে উঠেছে অশ্রুতে, মায়ের রেখে যাওয়া কাজগুলো আজও অপেক্ষাতে আছে। বুকের ভেতর থেকে উঠে আসা কান্নার এক অসাধারন বহিঃপ্রকাশ!!!


প্রকৃতির নিয়ম কি পরিবর্তন হতে পারে না?? মা কি আবার ফিরে আসতে পারে না? হতে কি পারে না, মায়ের আঁচলের ভাজে আবার আশ্রু মুছে যাবে অনায়াসে, কবি শেষ করেছেন এভাবেই।


আমি নিশ্চিত, কবিতাটি পাঠককে কাঁদিয়েছে বেশ!!


কবি’র জন্য রইলো অফুরান শুভেচ্ছা