আলোচনা ৮৯


আধুনিক বিজ্ঞানের অন্যতম আবিস্কার ‘দূরবীন’, যা দুরের বস্তুকে কাছে দেখা যায়, পরিস্কার দেখা যায়। কাছাকাছি অন্য একটি আবিস্কার ‘টেলিস্কোপ’, দুরের গ্রহ নক্ষত্র নিয়ে গবেষণায় বিজ্ঞানীদের সহায়তা করে। কিন্তু মানুষকে দেখার জন্য কি ‘দূরবীন’ প্রয়োজন হয়? হলে, কেন প্রয়োজন হয়, এ প্রশ্নকে সামনে রেখেই কবি তামান্না ফেরদৌস তার কাব্য ‘দূরবীনে মানুষ’ লিখেছেন।


প্রিয় মানুষকে আমরা সব সময় দেখি, কাছে থাকি, অনুভব করি, একসাথেই জীবন যাপন করি, আনন্দ বেদনা ভাগাভাগি করি কিন্তু তারপরও মানুষকে দেখতে ‘দূরবীন’ কেন প্রয়োজন? সারাজীবন এক ছাদের নীচে বসবাস করার পরও কাউকে কাউকে বলতে শোনা যায় ‘আমি তোমাকে এখনো চিনতে পারিনি”, ২০-২৫ বছর বন্ধুত্ব থাকার পরও কোন কারনে মনে হয়, ‘তাকে আজও চেনা হয়নি” কিংবা একই বাবা মায়ের সন্তান, ভাইবোন একই সাথে বড় হবার পরও কেন আক্ষেপ থাকে, ‘আমি আজও চিনলাম না”।  একারনেই ‘দূরবীন’, একারনেই দূরবীন এর প্রশ্ন এসেছে। কবি যথার্থই ‘দূরবীন’র প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে কাব্য রচনা করেছেন।


প্রত্যেক মানুষের মধ্যেই দুটো সত্ত্বা কাজ করে, ভেতর এবং বাহির। বাহিরের স্বত্বাকে আমরা চোখ দিয়ে দেখতে পাই, বিচার বিবেচনা করে তার সাথে সম্পর্ক স্থাপন করতে পারি কিন্তু ভেতরের সত্ত্বাকে নিয়ে বিপাকে পড়তে হয়। ভেতর এবং বাহিরের সত্ত্বা একই রেখায় সব সময় নাও থাকতে পারে, তাই প্রয়োজন ‘দূরবীন’, কবি সে প্রসঙ্গেই বলেছেন।


যাকে আমরা খুব আপন ভাবি, ভালবাসি কিন্তু দূরবীনে সে হারায়, দূরবীন দিয়ে ভেতরের সত্ত্বাকে দেখতে গিয়েই বেলা কেটা যায়, হিসেব মেলে না, কাছের মানুষ দূরে চলে যায়, প্রিয় মানুষ অপ্রিয় হয়ে যায়। রূপক অর্থে ‘দূরবীন’ ব্যবহার করে কবি মানুষের ভেতর আর বাহিরের স্বত্বার ব্যবধান বোঝাতে চেয়েছেন, এক চরম সত্যকে পাঠকের উপলব্ধিতে আনার চেষ্টা করেছেন। দূরবীন দিয়ে মানুষকে দেখতে পারলেই তার আসল রূপ চেনা যায় অন্যথায় সারাজীবন মরীচিকায় কেটে যায় ।
কবির প্রতি অভিনন্দন এবং শুভেচ্ছা রইলো ।