আলোচনা ৭৭


যে কোন অর্থেই হিংসা মানব চরিত্রের একটি নেগেটিভ দিক, একটি অন্ধকার দিক। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে এটা যেমন নিন্দনীয় তেমনি আধুনিক মনোবিজ্ঞান নানা গবেষণার মাধ্যমে সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে ‘হিংসা’ মানব মনকে কুলসিত করে, প্রাত্যহিক জীবনকে বাঁধাগ্রস্ত করে এমনকি সুকুমার বৃত্তিকে বিকশিত হতে বাঁধা দেয়, অন্যদিকে ধর্মীয় বিধান বার বার মানুষকে ‘হিংসা’ থেকে দূরে থাকার উপদেশ দেয়া হয়েছে।


কবি সাইদুল ইসলাম তার “হিংসার দাবানল” কাব্যে সে বিষয়টি নিয়েই আলকপাত করেছেন যদিও কবি ক্ষুদ্র পরিসরে অর্থাৎ মানব প্রেম, সম্পর্ক এবং পারিবারিক সুখকে কেন্দ্র করেই ‘হিংসা’র দাবানলের পুরো চিত্র আঁকার চেষ্টা করেছেন কিন্তু মুল বিষয়টি আরও বৃহৎ পরিসরে না দেখলে এর ভয়াবহতা পুরোপুরি বোঝা মুশকিল।


একে অপরের কাছে হার মানবো না, একে অপরের কাছে নিচু হবো না, এই যে অহংবোধ সেটা তৈরি হয় হিংসা এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের অভাব থেকে। কোন কিছু মেনে নেয়া মানেই নিচু হয়ে যাওয়া নয় কিংবা হেরে যাওয়া নয়। জীবন দর্শন থেকে অনেক দূরে থেকে, সম্পূর্ণ ভুল ধারনার বশবর্তী হয়ে মানুষ এরকম ধারনা পোষণ করে মনে মনে এবং দাউ দাউ করে জ্বলে, নিজে যেমন জ্বলে অন্যকেও তেমনি জ্বালিয়ে পুরিয়ে ছারখার করে দেয়। হিংসা’র মধ্যে ভাল কোন উপাদান নেই, বলা যায় পুরোটাই নেগেটিভ উপাদানে ভরপুর এবং যা মানব জীবনকে অস্থির করে তোলে।


একে অপরের কাছে যেতে মন চাইছে, রুগ্ন শরীরে  একে অপরের সান্নিধ্য পেতে চাইছে, সুখের সন্ধানে একে অপরে মিলে সংগ্রাম করতে মন চাইছে, সম্পর্কের সকল প্রকার টানাপোড়ন দূর করতে চাইছে মন কিন্তু বাঁধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে কেবল ‘হিংসা’। কেন মানব মনে তৈরি হয় ‘হিংসা’, পেছনের প্রাক্ষাপট কি, কিভাবে তা দূর করা যায় ইত্যাদি ব্যাখা করা যায় সমাজ বিজ্ঞান, নৃবিজ্ঞান, মনোবিজ্ঞান এবং সমান মনোবিজ্ঞান দ্বারা যা আমাদের আজকের আলোচ্য বিষয় নয়। কবি কেবল ‘হিংসা’ এর ভয়াবহতা তুলে ধরেছেন খুব সুনিপুন ভাবে, পাঠককে সাহায্য করেছেন যেন এর প্রতিকার করার জন্য, এর থেকে মুক্তি পাবার জন্য উদ্যোগী হতে পারেন।


কবির জন্য রইলো অভিনন্দন, খুব সুন্দর একটি বিষয় নির্বাচন করার জন্য।