আলোচনা  ১৭৪


কবিতটি পড়তে পড়তে কিছু প্রশ্নের জন্ম হলো মনে এবং সে কারনেই এই কবিতাটি আলোচনায় নিয়ে আসা। আমি এর সঠিক উত্তর জানি না বা এর উত্তর জানা আদৌ প্রয়োজন কি না তাও জানি না। কেন এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হবে, কি ই বা দরকার, এসব কিছুই জানি না। একেক জনের কাছে একেক রকম উত্তর হতে পারে, কিন্ত প্রশ্নগুলো সবার কাছে একই হবে হয়তো। সত্যি করে বলছি, কবি বা কবিতার প্রতি কোন প্রকার বিদ্বেষ না রাখেই আলোচনাটা এভাবেই শুরু করেছি।


১। কবি এবং কবিতা মানেই কি পূর্ন স্বাধীনতা?
২। একজন কবি কি যে কোন বিষয়ে কবিতা লিখতে পারে?
৩। দেশ, সংস্কৃতি, সমাজ, ধর্ম, আচার আচরন, নৈতিকতা  এসব কি কবিতার বাইরের কিছু, নাকি এসব বিষয়ের প্রতি সম্মান রেখেই কবিতা লেখা
৪। কবিতা কি শুধুই মনের অনুভূতি, কাব্যরস, উপমার সমাহার, সমসাময়িক ঘটনার চিত্রায়ন, সচেতনা স্রষ্টির প্রয়াস নাকি এর চেয়েও বেশি কিছু?


আলোচ্য কবিতার বিষয়বস্তুর সাথে বাস্তবতা আছে সেটা অস্বীকার করার উপায় নেই। সমাজ, সংস্কৃতি কিংবা ধর্ম সম্মিত দেয় না এমন অনেক কাজই সমাজে ঘটে থাকা, আমরা করে থাকি। আমরা প্রতিনিয়ত সে কাজগুলো করি মানেই সেগুলো গ্রহনযোগ্যতা পেয়ে যায় না। আবার এমন কিছু আছে, সমাজের গ্রহনযোগ্যতা না থাকার কারনে, সেগুলো হরহামেশাই ঘটছে কিন্তু দৃশ্যমান হচ্ছে না। মানব প্রকৃতির এক অনাবিষ্কৃত প্রাকৃতিক রহস্য, আমরা যা পেয়ে যাই তার প্রতি আকর্ষন কমে যায়, যা এখনো পাওয়া হয়নি তাই পেতে চাই অবিরাম। কিংবা, আকাঙ্খিত বস্তু বা মানুষও যখন নিজের হয়ে যায় তখন তার মূল্য কমে যায় আমাদের মানষিকতায়, ভিন্ন কিছুর প্রতি আবার আকর্ষন তৈরি হয়। প্রকৃতির এই স্বাভাবিকতা নারী পুরুষের ক্ষেত্রে কিছু ভিন্ন হতে পারে কিংবা আমরা আমাদের শিক্ষা, সচেতনতা, সমাজ, সংস্কার ইত্যাদির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত করে রাখি কিন্তু ইচ্ছেগুলো মনের মধ্যে থাকেই।


কবি এস এ ইমন, সে রকম একটি আপাত দৃষ্টিতে অদৃশ্যমান   (কিন্তু এটাই বাস্তবতা ) একটি বিষয় “প্রিয়ার চেয়ে শালী সুন্দর” নিয়ে কাব্য রচনা করেছেন। নিজের স্ত্রি কিংবা প্রিয়ার চেয়ে শালী সুন্দর তারচেয়ে বেশী সুন্দর শালার বউ...... এভাবেই নানা উপমার সাহায্য নিয়ে মজার ছলে কবিতাটি শেষ করেছেন। ইস্যুটিকে আমরা হাস্যছলে নিতে পারে কিন্তু ভীষন ভয়ংকর একটি বাস্তবতা, অহরহ সমাজে বিরাজ করছে। কেউ কেউ বিষয়টিকে মানষিকভাবে একেবারেই মেনে পারছি না আবার কেউ, নিজের জীবনে ঘটছে না বলে নির্বিকার থাকছি।


ঘটনা যখন মানুষকে নিয়ে ঘটে অর্থাৎ নিজের প্রিয়ার চেয়ে অন্যকে বেশি সুন্দর মনে হয়, তখন সেটাকে আমরা অনৈতিক তকমা দিতে পারি কিন্তু এখানে কবি অন্যান্য বস্তুকে কেদ্রে করেও মানুষের এই চরিত্রের চিত্র এঁকেছেন যেমন-

জবার চেয়ে জুই সুন্দর তারি চেয়ে শাপলা,
কোন ফুলে ভরবে মালী তোমার কাঁখের ডালা।
বাগিচার পরে বাগিচা, সুন্দরের চেয়ে সুন্দর,
কোন বাগিচার মধু খাবে ভেবে না পায় ভোমর।


মূল বিষয় হলো, মানুষের কোন এক বিষয়ের প্রতি আত্মা তৃপ্তি থাকে না, সে সার্বক্ষনিকভাবেই ভিন্নতা চায়, নুতন কিছু চায়, কিছু সময়ের পর একই বিষয় আর ভালো লাগে, এক বিষয়ে, এক বস্তুতে, এক মানুষে তুপ্ত থাকতে পারে না ইত্যাদি। যদিও এটাকে আমরা প্রকৃতির এক রহস্য বলেছি কিন্তু সবার ক্ষেত্রে একই রকম ঘটে না, কেউ কেউ তো এ চরিত্রকে নিয়ন্ত্রন করতে, তাহলে অন্যরা কেন পারে না ?


আজ হাতে যে মোবাইল সেট আছে, কিছুদিন পরেই আবার নুতন মডেল এর প্রতি ঝোক বাড়ে ফলে নিজের সেটা কেনার সামর্থ থাক বা না থাক, সেটা আমার চাই ই চাই। যে কোন উপায়েই আমার অর্থ উপার্জন করতেই হবে। নিজের প্রিয়াকে আর ভালো লাগে না, ফলে অন্যের সাথে যে কোন উপায়েই হউক, সম্পর্ক তৈরি করতেই হবে......এভাবেই সমাজে অরাজকতা বাড়ে।


কবি, ভিন্ন একটি ইস্যু নিয়ে দারুন এক কাব্য রচনা করেছেন, কিন্তু এতো দৃশ্যমান করে কাব্য রচনা করা কতোটা কাব্যমানকে শ্রদ্ধা করা হয়, সে প্রশ্ন রয়েই গেলো।


কবির জন্য রইলো শুভেচ্ছা