আলোচনা ৭৩


“আর কেউ যদি সত্যিই ধর্ষীত হয়ে থাকো, তবে মনে করো সেটা তোমার একাত্তর না দেখার শাস্তি, আপাততঃ এসব গুজব বলেই উড়িয়ে দাও..” সাবলীল মনির এক তির্যক দৃষ্টিকোণ থেকে সমসাময়িক বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে “গুজব’ কাব্য রচনা করেছেন।


গুজব শব্দটির ব্যবহারিক বা প্রায়োগিক উপযোগিতা নানাভাবে দেখা যায়, কখনো সত্যকে মিথ্যে প্রমাণিত করার জন্য আবার কখনো মিথ্যেকে সত্যে রূপ দেয়ার জন্য ‘গুজব’ পদ্ধতিকে ব্যবহার করা হয়। ভিন্ন ভিন্ন অবস্থানে থেকে, ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তিবর্গ কিংবা গোষ্ঠী ‘গুজব’কে নানাভাবে ব্যবহার করে থাকে।  মুলত গুজব জবরদস্তী করে বিস্তার ঘটানো যায় না, গুজব এর বিস্তার ঘটে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে, মুখে মুখে কিংবা প্রচলিত মাধ্যমে (আজকাল ফেবু, টুইটার ইত্যাদি যোগ হয়েছে)। কে বা কারা এবং কিভাবে গুজব ছড়াচ্ছে সেটা অনেক সময়ই সনাক্ত করা মুশকিল হয়ে পরে তবে গুজব ছড়ানোর কারন খুব সহজেই  উদ্ঘাটন করা যায় ।


এ প্রসঙ্গে আমার সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতা শেয়ার করি, আমি কাজ করছিলাম কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। সেখানে আমরা যখন ডিপথেরিয়া টিকা দেয়ার জন্য ক্যাম্প করি, দেখা যায় তার ২/১ দিন আগে ‘গুজব’ ছড়িয়ে পরে, বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গাদের মেরে ফেলার জন্য টিকা দিচ্ছে, জন্ম নিয়ন্ত্রন করার জন্য টিকা দিচ্ছে ইত্যাদি, ফলে শত শত কোটি টাকা খরচ করে এবং নানা আয়োজন করেও রোহিঙ্গাদের টিকা ক্যাম্পে নিয়ে আসা যায় না। তার জন্য আবার আমাদের ‘গুজবের কাউন্তার কৌশল’ তৈরি করতে হয়।


সাধারণত  গুজব ছড়ায়, যদি কোন ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠান/গোষ্ঠীর উপর সামগ্রিক জনগোষ্ঠীর আস্থা কিংবা বিশ্বাস হীনতা তৈরি হয় তবে গুজব খুব দ্রুত ছড়িয়ে পরে, গুজব আকারে বলা কথাগুলো সত্য/ মিথ্যে যাচাই করার প্রয়োজন মনে করে না কেউ।  আবার অন্যপক্ষ প্রতিষ্ঠিত সত্যকে নিজেদের সুবিধার্থে ‘গুজব’ বলে চালিয়ে দিয়ে সত্য থেকে জনগণকে দূরে সরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে, বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে।


আলোচ্য কবিতায় কবি, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া ঘটনার প্রেক্ষিতে ব্যঙ্গ করে লিখেছেন “গুজবে লাল রক্তও নিছক রঙ হয়ে গেল”, “দূর্ভাগ্য, আমাদের শিক্ষার্থীরা এখনো রঙ আর রক্তের পার্থক্য বুঝতে শিখেনি, তাই কপাল ও চোখ ফাটিয়ে ওদেরকে বাংলাদেশ চিনতে হয়...”


এখানে জনগণের বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে নানা ভাবে, সত্যগুলো কি গুজব নাকি গুজব গুলোই গুজব, নাকি মিথ্যেগুলো  প্রতিষ্ঠিত করার জন্য গুজবের প্রতিষ্ঠা। গুজব ব্যবস্থাপনা নিয়ে একডেমিক প্রতিষ্ঠানে নানা গবেষণা চলছে, মুলত ‘গুজব ব্যবস্থাপনা’ সত্যিই খুব কমপ্লেস বিষয়, এর সাথে জড়িয়ে থাকে, পক্ষ- বিপক্ষ গোষ্ঠী, বিশ্বাস, মূল্যবোধ, আস্থা, সংস্কৃতি, ইতিহাস অভিজ্ঞতা ... অনেক বিষয়।


কবির জন্য রইলো অভিনন্দন, খুব সুন্দর একটি বিষয় নির্বাচন করার জন্য।