আলোচনা  ১৫৫


কবিতার শিরোনাম খটকা লেগেছিল মনে আবার আগ্রহও জন্মেছিল, পুরো কবিতা পড়ার জন্য। প্রতিদিন এতো এতো কবিতা প্রকাশিত হয় আসরের পাতায় যে পড়া হয়ে ওঠে না, তাই আমি সাধারনত কবিতা পড়ার জন্য নির্বাচন করি, কবিতার শিরোনাম দেখে দেখে।


আক্ষরিত অর্থে যদি বিবেচনা করি,”ঘৃণিত বিধাতা”, খুবই দুঃসাহসিক একটু উক্তি, আমরা যে ধর্মেই বিশ্বাস করি না কেন, স্রষ্টাকে এভাবে বলি না, বলতে পারি না। কিন্তু কবি, এক ধরনের আক্ষেপ, হতাশা, জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণা, নানা ধরনের তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকেই বিধাতাকে ঘৃণা করতে শুরু করেছেন।  


কিছুদিন আগে আমারও একটি কবিতা এই আসরেই প্রকাশিত হয়েছিল-


ঈশ্বরকে দায়ী করা যায়
- সরদার আরিফ উদ্দিন


অন্যকে দায়ী করা যায়
খুব সহজেই
প্রমাণের ভিত্তি শক্ত না হলেও চলে


ঈশ্বরকে দায়ী করা যায়
আরো সহজে
বিশ্বাস কিংবা অবিশ্বাস দুটো অবস্থান থেকেই


নিজেকে দায়ী করা
সবচেয়ে কঠিন
দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ার প্রবল সম্ভাবনা থেকেই যায়


এখানে কবি ঠিক সেটাই করেছেন, যে কোন অকল্যানের জন্য বিধাতাকে খুব সহজেই দায়ী করা যায়, ঘৃণা করা যায় এমনকি নিজেদের দোষে ঘটে যাওয়া বিষয়েও আমরা বিধাতাকে দায়ী করে থাকি, কারন ঈশ্বর/বিধাতা/স্রষ্টা নিশ্চুপ, বিধাতা কখনোই তাৎক্ষনিক কোন প্রতিক্রিয়া দেখান না। ফলে আমরা নিজেদের দায় বিধাতার উপর চায়িয়ে নিশ্চিন্ত থাকি।


আলোচ্য কবিতায়, কবি বেশ কিছু ঘটনা উল্লেখ করেছেন, যেখানে মানুষ অসথ্য যন্ত্রনায় ভুগছে, আবেগ পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে, টাকার কাছে মানুষ মনুষ্যত্ব বিক্রি করে দিচ্ছে, নিজের শরীর বিক্রি হয়ে যাচ্ছে টাকার বিনিময়ে, ক্যান্সারের মতো ছড়িয়ে পরেছে পরকীয়া নামক ব্যাধি, সভ্যতার নামে অসভ্যতা বাসা বেধেছে মানুষের মনে......... কয়টা উদাহরন দেবো?? কবি কিছু উদাহরন দিয়েছেন, কিন্তু মূল বিষয় হলো, বিশ্বজগতের স্রষ্টা, মালিক, প্রভু, মহান, দয়ালু ইত্যাদি নানা গুন দ্বারা আমরা যার গুনকীর্তন করে সার্বক্ষনিক ভাবে, সেই বিধাতা এতো কিছু দেখেও কেনো নিশ্চুপ থাকেন, তার তো ক্ষমতা আছে, তিনি ইচ্ছে করলেই সব নিমিষেই বিনাশ করতে পারেন, তাহলে কেন করছেন না!! সেই আক্ষেপ থেকেই কবি’র আর্তনাদ, “ঘৃণিত বিধাতা”,


কবির প্রতি রইলো অফুরন্ত শুভেচ্ছা।