আলোচনা  ২২৩


চার লাইনের খুব ছোট কবিতা, অনেকে অনু কবিতাও বলে থাকেন। কবিতার উপর তিনটে মন্তব্য এসেছে (নীচে যোগ করলাম), কবিতাটি সম্পর্কে আমার ভিন্ন কোন মতামত নেই, উক্ত মন্তব্যগুলোর মতোই হবে হয়তো, খুব বেশি হলে, কিছু শব্দের ভিন্নতা থাকবে। কিন্তু তারপরও কবিতাটি নিয়ে আলোচনা করতে ইচ্ছে হলো, একটি শব্দের কারনে, আর সেটা হলো “ মুহূর্ত”।


“মুহূর্তবাদ” নামে একটা তাত্ত্বিক ধারনা আছে, বইটির লেখক একার্ট টোলে (Eckhart Tolle), দ্যা পাওয়ার অব নাউ (The Power of Now)। কেউ কেউ অনুবাদ করেছে “বর্তমানবাদ”,অন্যরা “মুহূর্তবাদ”। এক অর্থে দুটোই সঠিক, লেখক বলতে চেয়েছেন, অতীতে ফেলে আসা দিন কিংবা ভবিষ্যতের আশংকা নিয়েই আমাদের অধিকাংশ সময় খরচ হয়, অথচ দুটোই আমাদের নিয়ন্ত্রনের বাইরে, বরং আমরা যদি “বর্তমানের চিন্তায়”, “বর্তমানের উপভোগে” নিজেকে নিয়োজিত রাখতে পারি তাহলে জীবন অনেক সুন্দর হয়ে উঠবে, অহেতুক দুঃশ্চিন্তা, ডিপ্রেসন থেকে আমরা মুক্ত থাকতে পারবো। সেই অর্থে “বর্তমান” অনুবাদটি বেশি কার্যকরী।


কিন্তু বর্তমান একটি চলমান সময়ের গতিধারা।বর্তমান প্রতিনিয়ত নিজেকে অতীত করে দিয়ে ভবিষ্যতমুখি হয়ে চলেছে, ফলে বর্তমানকে বুঝতে হলে, বর্তমানের মধ্যে থাকা খন্ড খন্ড মুহূর্তগুলোকেই চিন্তায় এবং কাজে প্রতিফলিত করতে হবে, সে অর্থে বর্তমানের মধ্যে থাকা মুহূর্তগুলোকেই কাজে লাগানো, উপভোগে রাখা অর্থাৎ “মুহুর্তবাদ”। ফলে, The Power of Now এর অনুবাদ বর্তমানবাদ বা মুহুর্তবাদ দুটোই হতে পারে যদি ব্যাখাটা নিজের মধ্যে পরিষ্কার রাখা যায়।


আলোচ্য কবিতা/অনু-কবিতায়, ‘ইচ্ছের মুহুর্তকে” ফোকাস করা হয়েছে, অর্থাৎ “মুহুর্তবাদ”ই জীবনের মূল বিষয়, মুহূর্তবাদের মধ্য দিয়ে ভালোবাসা টিকে থাকতে পারে, ভালোবাসায় নবজোয়ার আনতে পারে। জীবনের একটা নির্দিষ্ট রেখা আছে, জীবনের একটা নির্দিষ্ট আয়ুরেখাও আছে, সেই আয়ু রেখা বা নির্দিষ্ট পথ ধরেই জীবন এগিয়ে যাবে, আমরা চাই বা না চাই। জীবনে ছন্দপতন থাকবে প্রকৃতির স্বাভাবিক মাত্রায়, ছন্দপতনের ইতিহাসও আমাদের জানা আছে। সুতরাং সেটা নিয়ে খুব বেশি চিন্তিত হবার কোন কারন নেই বরং “মুহূর্ত”কে যদি চিনে নিতে পারি, তবেই জীবনকে, জীবনের প্রান হিসেবে খ্যাত ভালোবাসাকে বাচিয়ে রাখতে পারবো, জীবনকে নিয়ন্ত্রনে রাখতে পারবো।


কিন্তু প্রশ্ন জেগেছিলো মনে-“মুহূর্তকে”, কি সময়ের হিসেবে আক্ষরিক অর্থে চিন্তা করবো নাকি একটা সময়ের অনুকণার সিম্বল হিসেবে ভেবে নিবো। সে কারনে, সময়ের কণাকে ভেঙ্গে ভেঙ্গে দেখার জন্য একটি চার্ট সংযুক্ত করলাম।


১ পলক= ২৪ সেকেন্ড
১ ক্ষন = ৪ মিনিট।
১ নিমেষ = ১৬ মিনিট (৪ ক্ষন)
১ দন্ড = ২৪ মিনিট (৬ ক্ষন))
১ মুহূর্ত = ৪৮ মিনিটি (২ দন্ড)
১ প্রহর = ৩ ঘন্টা
১ দিন = ৮ প্রথর (২৪ ঘন্টা)
১ সপ্তাহ = ৭ দিন
১ পক্ষ = ১৫দিন
১ মাস = ২ পক্ষ (৩০ দিন)
১ বছর = ১২ মাস
১ যুগ = ১২ বছর
১ প্রজন্ম = ২৫ বছর
১ শতাব্দী = ১০০বছর


সময়ের সর্বোনিম্ন কণা হলো, পলক তারপর ক্ষণ, নিমেষ, দন্ড হয়ে তারপর মুহূর্ত। ফলে যে অর্থে “মুহুর্তবাদ”, সেক্ষেত্রে “ইচ্ছের পলক”, “ইচ্ছের ক্ষণ”, “ইচ্ছের নিমেষ” কিংবা “ইচ্ছে দন্ড” হতে পারতো আক্ষরিক অর্থে, সময়ের কণার হিসেবে। কিন্তু প্রচলিত ধারায় “ইচ্ছে” শব্দের সাথে মুহূর্ত শব্দ ছাড়া অন্য শব্দগুলো ঠিক খাপ খায় না। হয়তো সে কারনেই কবি ইচ্ছের সাথে মুহূর্ত শব্দ যোগ করেছেন কিন্তু সময়ের ক্ষুদ্রতম কণাকেই বোঝাতে চেয়েছেন।


লেখক, একার্ট টোলে (Eckhart Tolle), দ্যা পাওয়ার অব নাউ (The Power of Now) পুরো বইতে যা বলতে চেয়েছেন, কবি চিন্ময়ী মিত্র মাত্র চার লাইনে সেটা বলেছেন। যে কারনেই কবিতা এতো শক্তিশালী একটি মাধ্যম।  কখনো কখনো খুব ছোট ছোট কবিতাও অনেক বেশি ভাবায়।


কবির জন্য রইলো শুভেচ্ছা।


অন্যান্যদের মন্তব্যঃ


প্রবীর চ্যাটার্জি(ভোরের পাখি)
জীবন গোলাপের বিছানা নয়। জীবনে সুখের চেয়ে দুঃখ বেশি থাকে। আমরা জীবনের তিক্ত সত্যকে উপেক্ষা করতে পারি না এবং নিজেদেরকে সন্তুষ্ট রাখার জন্য কেবল সুখের কিছু মুহুর্ত অনুসন্ধান করতে পারি।
কবিতাতে খুঁজে পেলাম জীবনের পেন্টামিটার।
শুভেচ্ছা।


অনিরুদ্ধ বুলবুল
ইচ্ছাগুলোর শুভ বাস্তবায়ন হোক।
ভালোবাসার প্রীতি সৌরভে জীবন ভরে উঠুক। অভিনন্দন ও শুভ কামনা -


আর ইসলাম
আপনার কবিতা সবসময়ই অল্প কথায় অধিক বলার চেষ্টা! খুব ভালো লাগে এজন্যই। অনেক অনেক অভিনন্দন রইলো সম্মানিত কবি।