আলোচনা  ২২৮


ভারসাম্য একটু গুরুত্বপূর্ন বিষয়, জীবনের জন্য, সমাজে জন্য, দেশের জন্যও কিন্তু আমরা “ভারসাম্য” প্রয়োজনে কিংবা আয়োজনে কোন ক্ষেত্রেই মেনে চলি না। যে কোন একদিকে ঝুকে থাকি ফলে নানা ধরনের বিপর্যয় নেমে আমাদের ব্যক্তি, পারিবারিক এবং সামাজিক জীবনে। প্রকাশ-অপ্রাকাশের মধ্যে ভারসাম্য দরকার, কতটুকু প্রকাশ করবো কতটুকু করবো না, কখন করবো কিংবা কখন করবো না, এই যে ভারসাম্য, ব্যপারটি সর্বক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।


সঠিক সময়ে, সঠিক কাজ না করলে,, সঠিক ভারসাম্য বজায় না রাখলে পরে সেটা নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যায়, তখন সেটা নিয়ন্ত্রনহীন হয়ে নিজেদের জন্যই বিড়ম্বনা তৈরী করে, সেটাকেই কবি বলেছেন “কালি ছড়ায়, গড়ায়, আর মাখায়”।  এক সময় কালি হাত থেকে ফসকে পড়ে, তারপর গড়িয়ে গড়িয়ে ছড়িয়ে যায়, সবশেষে সেটা মাখামাখিতে বিব্রত অবস্থা তৈরি হয়।


বেশ কয়েকটি উদাহরন এসেছে কাব্যে। অনেক সময়ই সত্য প্রকাশ করা হয় না, লুকিয়ে রাখা হয় নানা কারনে, সত্য নীরবে নিভৃতে কাঁদে কিন্তু যখন সত্য প্রকাশ হয়, যখন পর্দা সরে যায় অর্থাৎ সত্য প্রকাশ হয়ে যায় তখন “নাটকের মহড়া দেখা যায়”, অর্থাৎ তখন নাটকীয় ভংগীতে সত্যের রূপ ভয়ংকর আকার ধারন করে।


আজকাল, আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় অত্যাচারের সীমা অতিক্রম করে জনজীবনকে অতীষ্ট করে তুলেছে। সব কিছুরই একটা সহনীয় মাত্রা আছে , সেটা অতিক্রম করে গেলে, মানুষ বিদ্রোহী হয়ে ওঠে, জোটবন্ধ হয়, আন্দোলনে জড় হয়। ভাত রান্না করতে তাপমাত্রার প্রয়োজন হয় ঠিকই কিন্তু সেটা মাত্রা ছাড়িয়ে গেলে আগুনের তাপে পোড়া ভাত বিভীষিকা আকার ধারন করে।


ভারসাম্যের আরো একটি দিক নিয়েও কবিতায় আলোচিত হয়েছে। একটি খুব প্রচলিত প্রবাদ বাক্য হলো  “যাহা রটে তার কিছু তো বটে”, অর্থাৎ কোন কিছুর রটনা এমনি এমনি হয় না, কিছু না কিছু  অর্থাৎ অল্প মাত্রায় হলেও কিছু ঘটে  এবং তার পর সেটা রটে, হয়তো বা রটনাটা একটু বেশি হয় কিন্তু কবি এই প্রবাদ বাক্যকে নাকচ করে দিয়ে ভিন্ন কিছু বলতে চেয়েছেন।


অনেক সময় কোন প্রকার ঘটনা বা বিন্দু মাত্র ঘটনা ছাড়া ও অনেক বেশি রটনা হতে পারে যদি পেশীশক্তি থাকে, যদি অপশাসন এর ব্যবহার্য  বেড়ে যায়, যদি ন্যায় নীতির অনুশাসন না থাকে। আমাদের চারপাশে, অনেক ঘটনার সাক্ষী আমরা নিজেরাই। কোন প্রকার ঘটনা ছাড়াও মিধ্যে মামলায় অন্যকে ফাসানো হয়, অন্যের প্রতি অপবাদ দেয়া হয়, অন্যকে অপমানের মালা পড়ানো হয়। সব সময় ঘটনার জন্য অপেক্ষা করে না, রটনা তার নিজের গতিতেই এগিয়ে যায়। আমাদের চেনা জানা সেই প্রবাদবাক্যটি বাস্তবতায় আমরা সব সময়  সত্য হিসেবে দেখি না।

কবি, কাজী এনামুল হক, প্রচলিত ধ্যান ধারনার বাইরে গিয়ে সমাজ বাস্তবতাকে দেখতে চেয়েছেন তার “কালি ছড়ায়, গড়ায় আর মাখায়” কাব্যে।


কবির জন্য রইলো শুভেচ্ছা