আলোচনা  ২২৫


ক্ষুধা শব্দটি ডাইভার্স প্রেক্ষিত ধারন করে যদিও কবি একটি মাত্র প্রেক্ষিতকে নিয়ে কাব্য রচনা করেছেন। মানুষের যতো রকমের ক্ষুধা আছে, তার মধ্যে খাদ্যের ক্ষুধা এবং যৌন ক্ষুধা, কেন্দ্রবিন্দুতে স্থান দখল করে আছে। অন্যান্যগুলোও ক্ষুধা কিন্তু আমরা সেগুলো ক্ষুধা শব্দ দিয়ে প্রকাশ করি না যেমন-অর্থ-বিত্তের ক্ষুধা, ক্ষমতার ক্ষুধা, জ্ঞানের ক্ষুধা, সম্মান-স্বীকৃতির ক্ষুধা। এগুলো এক ধরনের ক্ষধা কিন্তু অন্য শব্দ দিয়ে প্রকাশ করি যেমন- অর্থ লিপ্সা, ক্ষমতালিপ্সা। ক্ষুধা শব্দটি খাদ্যের প্রয়োজন বা চাহিদা এবং যৌন চাহিদা পুরন করার ক্ষেত্রেই ব্যবহার হয়ে থাকে। আবার অন্যদিকে, প্রয়োজন বা বাহিদার প্রবলতার মাত্রা হিসেবে ক্ষুধা শব্দ ব্যবহার হয়ে থাকে যা অন্যান্য ক্ষুধার ক্ষেত্রে প্রজোয্য হয় না।


মাসলোর তত্ত্ব অনুযায়ী, মানুষের প্রথম চাহিদা থাকে “খাদ্যের ক্ষুধা”, তারপর যৌন চাহিদা বা যৌন ক্ষুধা। বলাবাহুল্য, খাদ্যের মাধ্যমে শরীরের সজীবতা থাকার পরই যৌনাঙ্গ রেসপন্সিভ হয়ে ওঠে এবং যৌন চাহিদা্ তৈরি হয়। যে কারনে, খাদ্যে নিয়ন্ত্রনের মাধ্যমে যৌন ক্ষুধার নিয়ন্ত্রন ও দেখা যায়। সাধকদের মধ্যে এ চর্চা দেখা যায় আবার ধর্মে উপদেশ দেয়া হয় (ইসলাম ধর্মের কথা বলছি, অন্য ধর্ম সম্পর্কে জানা নেই), কেউ যদি বিধি সম্মত উপায়ে যৌন ক্ষুধা পূরন করতে সামর্থ্য না হয় অর্থাৎ বিয়ের মাধ্যমে, তবে যেন সে রোজা রাখে অর্থাৎ খাদ্য নিয়ন্ত্রের মাধ্যমে যৌন ক্ষুধার নিয়ন্ত্রন।


মাসলোর তত্ত্ব অনুযায়ী, খাদ্য এবং যৌন ক্ষুধা নিবৃত্ত হলে, পরের চাহিদা তৈরি হয়, স্থায়ীত্বের বা ভবিষ্যত নিশ্চয়তার চাহিদা অর্থাৎ আগামী এক মাস/এক বছর বা তারও বেশি সময়ের জন্য খাদ্যের নিরাপত্তা, অর্থাৎ খাদ্য মজদু অর্থাৎ অর্থ বিত্তের সর্বোচ্চা অর্জন। সেই সাথে বাসস্থানের নিরাপত্তা। এসব প্রয়োজন পূরন হলে, মানুষ মরিয়া হয়ে ওঠে, পজিশন,খ্যাতি, বিত্তের পাহাড় তৈরি করা, তারও পরে আসে, সম্মান, স্বীকৃতি...এসবও ক্ষুধা (যদিও এসব ক্ষেত্রে ক্ষুধা শব্দ ব্যবহার হয় না কিন্তু মূলত এগুলোও এক ধরনের ক্ষুধা)। ওইদিকে, জ্ঞানের ক্ষুধা মানুষকে তাড়িয়ে বেড়ায় সব সময় (কিছু মানুষের)।


আলোচ্য কাব্যে কবি নৃপেন নাথ অধিকারী, ক্ষুধা নিয়ে বিশাল এক ক্যানভাসের, ছোট্ট একটা পরিসর কিন্তু বিস্তারিত চিত্রায়ন করা হয়েছে। মানুষের সকল কর্মকান্ডের কেন্দ্রবিন্দুতে যদি “ক্ষুধা অর্থাৎ খাদ্যের ক্ষুধা”কে রাখি, তাহলে ক্ষুধাকে কেন্দ্র করে মানুষের সার্বিক ব্যস্ততা, পরিভ্রমন, উৎসাহ, উদ্দীপনা, প্রেরণা, হতাশা, ক্ষোভ, ঝগড়া বিবাদ, যুদ্ধ, হানাহানি, মারামারি, অন্যায়-অত্যাচার, অভিযোজন, মাইগ্রেসন... এসবই ঘুরপাক খাচ্ছে। মানুষ খাদ্যের ক্ষুধা দ্বারা আক্রান্ত এবং পরিশ্রান্ত অথচ একজন মানুষের বেঁচে থাকার জন্য খুব বেশি খাদ্যের প্রয়োজন হয় না কিন্তু খাদ্যের ক্ষুধার সাথে যখন অন্যান্য ক্ষুধাগুলো যোগ হয় একের পর এক (মাসলোর তাত্ত্বিক কাঠামো অনুযায়ী), তখন মানুষ ব্যাতিব্যস্ত হয়ে পড়ে বেশি অন্যথায় শুধুমাত্র খাদ্যের চাহিদা পূরনে এতো পরিশ্রান্ত হতে হয় না।


কবির জন্য রইলো শুভেচ্ছা।