আলোচনা  ২১০


কবিতাটি পড়ার পর আমার মাথায় দুটো ভাবনা এসেছে। কবিতাটি দুভাবেই ব্যাখা করা যায় বলে আমার মনে হয়েছে। আলোচনার আগে কবি’র পেজ ভ্রমন করেছিলাম। কবিতার আসরে উনি আছেন দুবছর হলো, এর মধ্যেই ৩৫৭টি কবিতা প্রকাশ করেছেন, গড়ে প্রতি দুদিনে একটি কবিতা। বেশ লিখে চলেছেন। যদিও দীর্ঘদিন আগে থেকেই লেখালেখি করে থাকেন কিন্তু মাঝে একটা লম্বা সময় লেখালেখিতে বিরতী ছিল (প্রায় ১৩ বছর), আবার লিখতে শুরু করেছেন, বাংলা কবিতার আসরে এসে, অনুপ্রানিত হয়ে। এরকম বেশ কয়েকজনের কথাই জানি, বাংলা কবিতার আসরে আসার পর আবার লেখালেখি শুরু করেছেন, প্রান ফিরে পেয়েছেন। বাংলা কবিতার এটি একটি বড় ধরনের অর্জন।


কবিতার শিরোনাম “কুলী”, একটি শ্রম নির্ভর পেশাকে নির্দেশ করে এবং শব্দটি শোনার সাথে সাথেই একটা পরিপূর্ন চিত্র চোখের সামনে ভেসে ওঠে। শব্দের একটা চিত্রকল্প আছে, যেমন যদি বলি “ডাক্তার” তাহলে একধরনের ছবি চোখের সামনে ভাসে, যদি বলি “চোর”, তাহলে ভিন্নধর্মী ছবি দেখতে পাই। কিংবা যদি বলি “অফিসের বস” তাহলে যে ছবি ভাসে, “দারোয়ান” বললে ভিন্ন চিত্র ভাসে, আবার নাইট গার্ড বললে আরো ভিন্ন ছবি। ফলে একটি বা দুটি শব্দ অনেক সময় পুরো গল্প বলে দেয়। আলোচ্য কবিতার শিরোনাম “কুলী”, শব্দটি নিজেই একটি গল্প, একটি কবিতা, একটি উপন্যাস। তার জন্য আর কিছু বলতে হয় না। কিন্তু এই “কুলী’ শব্দটি একেক জনের ভাবনায় ভিন্নতা হবে কিছুটা। কেউ হয়তো একজন “কুলী’র” হাড় ভাঙা খাটুনি এবং জীবন জোয়ালকে ফোকাস করবেন অন্যকেউ হয়তো বা, শ্রম শোষনকে ফোকাস করবেন, শুধুমাত্র সে কারনে একটু ভেতরে তাকাতে হয়, ফোকাসটা কোন দিকে বুঝতে চেষ্টা করা আরকি অন্যথায়, “কুলী” শব্দটি নিজেই একটি কবিতা।


প্রথম ভাবনাঃ কুলী এখানে সিম্বলিক


একজন কবি তার মনের ভাব প্রকাশ করতে নিরন্তর সংগ্রাম করছেন, কবিতা লিখছেন আবার ফেলে দিচ্ছেন, যুতসই শব্দ খুঁজে পাচ্ছেন না, যা প্রকাশ করতে চাচ্ছেন তা পারছেন না। বারবার চেষ্টা করেই যাচ্ছেন, হার মানছেন না। কবি এবং কবিতার খাতা মুখোমুখি, কেউ হার মানছেন না, সফল হতেই হবে, একটি সফল কবিতার জন্ম হবেই হবে। ক্লান্তি ভর করেছে কিন্তু আবারো চেষ্টার কোন কমতি নেই, ঠিক যেমন একজন কুলী, জীবনের সাথে সংগ্রাম করে থাকেন।


দ্বিতীয় ভাবনাঃ এখানেও কুলী সিম্বলিক, মূল চরিত্র মানুষ এবং জীবন


মানুষ এবং জীবন মুখোমুখি, জীবনকে সফল করে তোলার জন্য মানুষের যে সংগ্রাম, পরাজয়ের কাছে নতী স্বীকার না করার যে অদম্য বাসনা, বার বার পরজিত হয়েও হেরে না যাওয়ার দৃঢ় সংকল্পে থাকা (পরাজয় মানে সাময়িকভাবে কোন কাজে ব্যর্থ হইয়া, হতে পারে পারিপার্শিক কোন কারনে কিন্তু হেরে যাওয়া মানে নিজের কাছেই ব্যর্থ হয়ে যাওয়া, নিজের আত্মবিশ্বাস হারিয়ে চিরকালের জন্য ব্যর্থ হওয়া। পরাজিত হওয়া এবং ব্যর্থ হওয়ার মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য আছে)।


দুটো ভাবনাই আমাকে নানাভাবে কবিতাটির প্রতি আকর্ষন  তৈরী করেছে, আমার ভীষন ভালো লেগেছে। কবি’র হয়তো তৃতীয় কোন ভাবনা ছিল, কবিতাটি লিখার সময়।


কবি’র জন্য রইলো শুভেচ্ছা।