আলোচনা ৮৬


পৃথিবীর ইতিহাসে নানা সভ্যতার আবির্ভাব হয়েছে আবার বিলীন হয়েছে, সভ্যতার কোন একক মাপুনি নেই, নানা সময়ে নানাভাবে সভ্যতাকে মাপা হয়। মানব সভ্যতার ইতিহাসকে কখনো সময়ের মাপুনি দিয়ে মাপা হয় যেমন- প্রাচীন সভ্যতা, আধুনিক সভ্যতা, কখনো রাজনৈতিক সীমানা এবং প্রযুক্তির উন্নয়নের সাথে সম্পর্কিত সভ্যতা যেমন- ইউরোপীয় সভ্যতা, মিশরীয় সভ্যতা আবার কখনো ধর্মীয় বিবেচনায় সভ্যতাকে নিরূপণ করা হয়- যেমন খ্রিষ্টীয় সভ্যতা, ইসলামি সভ্যতা । লক্ষ কোটি বছরের পৃথিবীর ইতিহাসে, নানা সভ্যতা এক সময় দাপুটে রাজত্ব করে আবার বিলীন হয়েছে যেমন- ইনকা সভ্যতা, বেবিলিনিয় সভ্যতা।


একটা সমাজ সভ্য কিংবা অসভ্য তা বেশ কিছু সূচকের মাধ্যমে নিরধারন করা হয়, তার মধ্যে অন্যতম হোল সংস্কৃতি, মূল্যবোধ, বিশ্বাস, আঁচার-আচরণ... সূচকগুলো ক্রমাগতই পরিবর্তনশীল, একটা নির্দিষ্ট সময়কাল কিংবা তৎকালীন সমাজের প্রথা অনুযায়ী সূচকগুলো মেনে নেয়া হয়, পরে সমাজ পরিবর্তনের সাথে সূচকগুলোও ধীরে ধীরে পরিবর্তন হতে থাকে। এত ভিন্নতার মাঝেও, কিছু সার্বজনীন সূচক তৈরি করার চেষ্টা মানুষ করেই চলেছে যেন, সার্বজনীন একটা বৈশ্বিক সভ্যতার রূপ দেয়া যায়, যেমন মানবতাবাদী সূচক।


কবি মো. আবু ইউসুফ প্রভাষক সেরকমই এক প্রেক্ষাপটে যুগান্তকারী এক কাব্য “নিলাম সভ্যতা" রচনা করেছেন। তিনি মুলত আমাদের সমাজ, কৃষ্টি, মূল্যবোধকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠা ‘সভ্য’তার যে সংজ্ঞায়ন যেটি আজ বিলুপ্তির পথে এবং সেটিকেই শিরোনাম দ্বারা বলতে চেয়েছেন ‘নিলাম’ হয়ে গেছে অর্থাৎ আমাদের চিরাচরিত সভ্যতা এখন আর আমাদের প্রতিদিনের চর্চায় নেই, সেটা বেচাকেনার হাটে বিক্রি হয়ে গেছে, নিলাম হয়ে গেছে।
-
লুটেরা বাহিনী ভুমি জবরদখল করছে, সাধারণ মানুষ দুষ্কৃতীদের হাতে মুক্তিপণের আশায় বন্দী হচ্ছে, ব্যবসায়ী সমাজ বাচ্চাদের জন্য আমদানিকৃত দুধে মেলামিন মিশিয়ে অধিক মুনাফা অর্জনের নেশায় মেতে উঠেছে  মানুষ দিনে রাতে বদলে যাচ্ছে নিজ নিজ স্বার্থের কারনে, অসভ্য কাজ কর্মে লিপ্ত হচ্ছে প্রতিনিয়তই......... কবি এসব বদলে যাওয়া আচরণকে বলতে চেয়েছেন, আমরা সভ্যতা নিলামে উঠিয়ে দিয়েছি।


প্রযুক্তির কল্যানে আধুনিক সভ্যতা আমাদের অনেক সুখ এবং সুবিধে দিয়েছে, আমরা এখন বোতাম টিপলেই মুহূর্তে দেশ বিদেশের যে  কোন জায়গায় থাকা মানুষের সাথে যোগাযোগ করতে পারি, চাইলেই দূত পৌঁছে যেতে পৃথিবীর যে কোন প্রান্তে কিন্তু এই সব সুবিধেগুলো অপব্যবহার করেই আবার ধবংস করছি আমাদের সভ্যতা, মধ্য রাত অবধি উদ্যম নৃত্যে মেতে উঠছি, এখানে সেখানে যৌবন সমুদ্রে অবগাহন করছি, ধর্ম গ্রন্থ বিক্রি হচ্ছে পর্ণগ্রাফির দোকনে, শাসনের নামে অবিরাম চলছে শোষণ, বিচারের নামে ইচ্ছে মত চলছে অবিচার.......
আমাদের মূল্যবোধগুলো নিলামে চড়িয়ে সুখ খোঁজার চেষ্টা করছি।


এসবই হতাশার চিত্র, কবি তারপরও হতাশে থেকে বেরিয়ে এসে বলতে চেয়েছেন, নিলামি সভ্যতা টিকিয়ে রাখার জন্য সবকিছুকে একসাথে, সবাইকে একসাথে বদলে দেয়া যাবে না, রাতারাতি পরিবর্তন করা যাবে না আইন, নিয়ম কানুন কিংবা দুর্নীতির শেকড় কিন্তু আমরা চাইলেই নিজেকে বদলাতে পারি, চাইলেই নিজের আচরণ সংশোধন করে পরিবর্তনে অংশগ্রহণ করতে পারি। আমরা প্রত্যেকে এক এক করেই সামস্তিক পরিবর্তন করতে পারি, ফিরিয়ে আনতে পারি ‘নিলামি সভ্যতা’কে।


কবির প্রতি অভিনন্দন এবং শুভেচ্ছা রইলো ।