আলোচনা  ১৭৬


যখন একটি পুরো সমাজ ব্যবস্থাই ভেঙে পরে, নৈতিকতা বিসর্জিত জীবন যাপন পদ্ধতি চলে, তখন সমাজের প্রত্যেকে সেক্টের এর প্রভাব পরে। ধর্ম এক ধরনের অনুশাসন, যে কো্ন ধর্ম হউক, সকল ধর্মের নূন্যতম কিছু মূল্যবোধের চর্চা, কিছু নৈতিকতা্র চর্চা, কিছু মানবতাবোধের চর্চা হয়ে থাকে। ধর্মে ধর্মে কিছুটা ভিন্নতা থাকলেও, মূল জায়গায় সব ধর্মের প্রায় একই সুর। আমরা আধুনিক সভ্য সমাজ, আধুনিকতার দোহাই দিয়ে, অসাম্প্রদায়িকতা নামে ধর্মকে বর্জন করেছি, অন্যদিকে পারিবারিক শিক্ষায়, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় নৈতিকতার চর্চা খুব বেশী বাস্তবায়ন করতে পারিনি। আবার সামাজিকভাবে সব রকম অনৈতিকতাকে বর্জন করতেও পারিনি। যার প্রভাবে সব জায়গাতেই দেখতে পাওয়া যায় ।


ফলে আর এককভাবে “পুলিশ” কে দায়ী করা কেন? পুলিশকে শুধু শুধু রাক্ষুসে তকমা দেয়ার কি মানে আছে? এটা একটা ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ নিঃসন্দেহে কিন্তু একই অব্যবস্থাপনা তো আমরা স্বাস্থ্য সেবা অর্থাৎ ডাক্তারদের মধ্যেও দেখতে পাই। কোথায় দেখতে পাই না, সেটাই প্রশ্ন, উকিল, ইঞ্জিনিয়ার, ব্যবসায়ী, শিক্ষক, সাংবাদিক……  কোথায় নেই। অনৈতিকতার চর্চা আমাদের প্রতিদিনের চেনা বিষয়।


কিন্ত এ কথাও সত্য, প্রতি সেক্টরে যেমন খারাপ মানুষ আছে , ভালো মানুষও আছে, তা না হলে দেশ চলছে কিভাবে, সমাজ চলছে কিভাবে, আমরা বেঁচেই বা আছি কিভাবে? পরিসংখ্যানিক তথ্যের ভিত্তিতে সেটা কম বেশি হতে পারে। উল্টোভাবে চিন্তা করলে, এটাও সত্যি, যাদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করা হচ্ছে, তারা সবাই আমাদেরই স্বামী, স্ত্রি, ভাই, বোন, মামা, খালু, চাচা ইত্যাদি। তারা কোন না কোন পরিবারের সদস্য, তাদের অপকর্মের ফলাফল সবাইতো ভোগ করে, আমরা কি সামাজিকভাবে কাউকে বয়কট করতে পারছি? এক অর্থে আমরা সবাই “সুযোগের অভাবে সৎ”,  আমরা যারা এসব অনৈতিক কাজের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ঢেলে দিচ্ছি, আমরাই আবার এসব ব্যক্তিদের থেকেই নিজের প্রয়োজনের সময় সুবিধে নিই। একটা হিসেব দেখা যাক- অন্তত ৫% মানুষ হলেও পাওয়া যাবে যারা জীবনে কখনো ঘুষ নেয়নি কিন্তু ০.৯৯% মানুষ কি পাওয়া যাবে, যারা কোনদিন ঘুষ দেয়নি? তাহলে বিষয়টা ঘুরে ফিরে সেই একই হলো, একই মানুষ একবার খারাপ আবার সে খুব ভালো।


রাক্ষুসে পুলিশ (পুরুষ অথবা নারী), তার ছেলেমেয়েরা কি তাদের অপকর্মের ফলাফল ভোগ করে না? আজ পর্যন্ত কোন ছেলে মেয়ের মুখে তো শুনিনি, তার বাবা মা এর অপকর্মের বিরুদ্ধে কথা বলতে বা তাদের বয়কট করতে? তাহলে আর শুধু শুধু একপাক্ষিকভাবে “রাক্ষসে পুলিশ” নামে কাব্য লিখার খুব বেশী যৌক্তিকতা থাকে না। তার অর্থ এই না যে, আমি অনৈতিকতার পক্ষে কলম ধরেছি। আমি কোন ব্যক্তিকে দায়ী করার আগে সিস্টেমকে দায়ী করতে চাই।


আলোচ্য কবিতায় পুরোটা জুড়েই নানাভাবে পুলিশ থেকে মানুষের প্রত্যাশা এবং পুলিশের দায়িত্ব-কর্তব্যের বিপরীতে বাস্তবে যা ঘটছে তার বর্ননা দেয়া হয়েছে যেমন- (কয়েকটি উদাহরন দেয়া যাক)


লেখায় আছে সেবাই পুলিশের ধর্ম
আর বাস্তবে ঘুষ খাওয়া পুলিশের কর্ম।


পুলিশ তুমি হওয়ার কথা আস্থাভাজন
আজ তোমায় দেখে ভয় পায় নিরীহ জনগন।


এবার আলোচনার আরো একটু গভীরে যাওয়া যাক, পুলিশ ডিপার্ট্মেন্ট এর সর্বোচ্চ কর্মকর্তার জবাবদিহিতা কার কাছে? তিনি আবার কার কাছে জবাবদিহি করেন? তিনি কার কাছে? এভাবে নীচ থেকে উপরে আবার উপর থেকে নীচে নামলে সর্বত্রই একই চিত্র। এককভাবে কোন ব্যক্তি বা কোন একটি নির্দিষ্ট ডিপার্ট্মেন্টকে কিভাবে, কি পদ্ধতিতে দায়ী করা যায়? তবে আমরা ক্ষোভ প্রকাশ করতেই পারি।


কবির জন্য রইলো শুভেচ্ছা