আলোচনা  ১৩৫


অল্প কথায় অনেক বেশী বলা হয়েছে কবিতাটিতে। অনেক কিছুই আছে এখানে, স্বাধীনতা, অধিকার, লড়াই, সংগ্রাম, নির্লজ্জতা, বাংলা ভাষার প্রতি দরদ, বাস্তবতা এবং স্বপ্ন, দাসত্ব ইত্যাদি। এই বাংলার, এই বাংলাদেশের কথাই ধরা যাক, বাংলা ভাষার জন্য রক্ত দিলাম, সংগ্রাম করলাম, শহীদ হলাম কিন্তু নিজ দেশেই এখন আর বাংলা ভাষার কদর নেই। অফিসে, আদালতে, ঘরে বাইরে, স্কুলে-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে... কোথাও বাংলা ভাষার কদর নেই। বিদেশী ভাষা বিশেষ করে ইংরেজি ভাষার দাপটে বাংলা ভাষা নিঃশ্বাসই নিতে পারছে না। পরীক্ষার খাতায়, চাকরীর পরীক্ষায়, ভাইভা বোর্ডে কোথাও বাংলা চলে না, ইংরেজী ভাষা ভালো না জানলে চাকরী পর্যন্ত হয় না, ভাবা যায়!!! অথচ এই ভাষার জন্যই লড়াই করেছিলাম আমরা।


অন্য ভাষা জানার প্রতি কোনরূপ বিদ্বেষ নেই কিন্তু বাংলা ভাষার অগ্রাধিকার তো হবে আগে, সেটাই হারাতে বসেছি, রীতিমত হারিয়েই গেছে। অফিস আদালতের কথা বাদই দিলাম, এখনতো একটা দোকানের সাইনবোর্ড পর্যন্ত বাংলায় হয় না। ভাষার এই দৈন্যদশা আমরা নিজেরাই করেছি, আমাদের মানষিক দীনতা থেকে, কবি সেই আক্ষেপ থেকেই কবিতাটি রচনা করেছেন, বেশ বোঝা যাচ্ছে।


আমারা ভাষার লড়াইয়ে জয় লাভ করেছিলাম, স্বাধীনতার যুদ্ধেও জয়লাভ করেছিলাম। আমাদের সংগ্রামের ইতিহাস অনেক দীর্ঘ। আমরা একটা ভূগন্ড জয় করেছিলাম কিন্তু আমাদের মানষিক স্বাধীনতা হয়েছিল কি না, আমাদের মানষিক দাসত্ব দূর হয়েছিল কিনা, সে প্রশ্ন তোলাই যায়। যারা ভাষায় যুদ্ধে এবং স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাপিয়ে পরেছিলেন, তারা কেন অবহেলিত হবে, তাদের কেন নিজের অধিকার আদায়ের জন্য আবার সংগ্রাম করতে হবে, তাদের কেন বিদেশী ভাষা না জানার কারনে পিছিয়ে থাকতে হবে? তবে শুধু ভূখন্ড দিয়ে কি লাভ হবে যতক্ষন পর্যন্ত আমরা মানষিক স্বাধীনতা লাভ না করছি। আমাদের মানষিক দৈন্যতা দূর করা প্রয়োজন সবার আগে।


যে ভাষার কোন প্রায়োগিকতা নেই, তা নিজে নিজেই হারিয়ে যাবে, ইতিহাস তাই বলে। আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বাংলা ভাষার কদর দেখি না, অফিসিয়াল কার্যক্ষেত্রে কোন কদর দেখি না ফলে তা আপনা থেকেই পেছনে চলে যাচ্ছে। এখন যতটুকু আছে, পরের প্রজন্মের কাছে তাও থাকবে না, বাংলা নামক একটা ভাষা ছিল, ইতিহাস থেকে তারা তা জানবে।


মূলত একটি আক্ষেপ কিংবা দ্রোহের যন্ত্রনা থেকেই খুব অল্প পরিসরে কবি তার মনের কথা ব্যক্ত করতে চেয়েছেন। খুব ভালো লেগেছে কবিতাটি। কিন্তু কবিতার শিরোনাম, শব্দ-৩ কেন, সেটা বুঝতে পারলাম না।


কবির জন্য রইলো শুভেচ্ছা।