আলোচনা  ২০৪


লিমেরিক কবিতা/ছড়া নিয়ে আলোচনার পাতায় কবি শহীদ উদ্দীন আহমেদ লিখেছেন বিস্তারিত। আলোচনাটি পড়ে আমি সমৃদ্ধ হয়েছিলাম। আজকের আলোচ্য কবিতাটি একটি লিমেরিক, পাঠকের সুবিধার্থে, “লিমেরিক” নিয়ে অল্প কিছু কথা এখানে সংযুক্ত করলাম শহীদ উদ্দীন আহমেদ এর লেখা থেকে।


লিমেরিক সাধারণত হালকা বা মজার কোনো বিষয় নিয়ে লেখা হয়। অথবা আপাত গম্ভীর কোনো ঘটনা কৌতুক সহকারে পরিবেশিত হয় লিমেরিকে। মোদ্দাকথা লিমেরিক হল এক ধরনের রম্য কবিতা যার মাধ্যমে সমাজের ,ব্যক্তিজীবন , রাষ্ট্রের কিংবা সমগ্র বিশ্বের যে কোন অসঙ্গতির কথা অথবা যে কোন অসংগলগ্ন ভাবনা অতি সংক্ষেপে প্রকাশ করা হয় । পদ্যের এই ধরনের উৎপত্তি আঠারো শতকের প্রারম্ভে ইংল্যান্ডে, তবে এর মূল উৎপত্তি স্থল আয়ারল্যান্ডের লিমেরিক শহরে । লিমেরিক বা আইরিশ ক্ষুদ্র গান ( ditties ) এর অস্তিত্ব  ইংল্যান্ড ও  আয়ারল্যান্ডের প্রাচীন সাহিত্যে পাওয়া যায় , অ্যারিস্টোফেনিসের নাটক তার প্রমাণ। প্রাচীনকাল থেকে লিমেরিক শহরে এক ধরনের ছড়া কবিতার প্রচলন ছিল যা ফরাসী সৈন্যদলের আইরিশ ব্রীগিডিয়াররা আনন্দ করে গানের মত গাইতো । গানের শেষে ধূয়ো দেয়ার মত let us come up limerick বলে শেষ করতো ।


মনের দুঃখ কষ্ট ভুলে থাকার জন্য তারা কোরাসের মত করে পাঁচ লাইনে লেখা এই গানগুলো গাইত , ঐ অঞ্চলের কোন এক অজানা কবির হাতেই এ ধরনের ছড়া নির্ভর গানের প্রচলন ঘটে। পরে সৈন্যদের মুখে মুখে এই ধরনের ছড়া নির্ভর গান বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে , আর লিমেরিক ছড়া নামে পরিচিতি লাভ করে । লিমেরিক পাঁচ লাইনের কবিতা/ছড়া যার প্রথম, দ্বিতীয় ও পঞ্চম লাইনে অন্ত্যমিল থাকে । তৃতীয় ও চতুর্থ লাইন দুটিতে থাকে অন্ত্যমিল। প্রথম, দ্বিতীয় ও পঞ্চম লাইন গুলোতে আট থেকে নয়টি শব্দাংশ (syllable) থাকে। তৃতীয় ও চতুর্থ লাইনে শব্দাংশ সংখ্যা চার থেকে পাঁচ হয়।


যেহেতু, লিমেরিক এর একটা বৈশিষ্ট্য হলো-গম্ভীর কোনো ঘটনা কৌতুক সহকারে পরিবেশিত হয়, এক ধরনের রম্য কবিতা যার মাধ্যমে সমাজের ,ব্যক্তিজীবন , রাষ্ট্রের কিংবা সমগ্র বিশ্বের যে কোন অসঙ্গতির কথা অথবা যে কোন অসংগলগ্ন ভাবনা অতি সংক্ষেপে প্রকাশ করা হয় । ফলে আলোচ্য কবিতাটি সে অর্থে ভালো-মন্দ, সত্য-মিথ্যের দ্বন্দ্বকে সমাজে কিভাবে অবস্থান করে, কিভাবে ব্যক্তির ভাবনা চিন্তাকে প্রভাবিত করে তারই এক রম্য উপস্থাপনা।


“হরহামেশা দ্বন্দ্ব বাড়ে বললে কিছু মন্দ”,কেন দ্বন্দ্ব বাড়বে? কারন আমরা মন্দকে মেনে নিতে পারি না, মেনে নিতে শিখিনি, এটা চর্চার বিষয়, রাতারাতি এ অভ্যেস তৈরী হয় না। কেউ কেউ বলে থাকে, ভালো-মন্দ আপেক্ষিক শব্দ, এর কোন সার্ব্জনীনতা নেই। কথাটা আংশিক সত্য তবে ভালো-মন্দ মাপার অবশ্যি কিছু মানদন্ড আছে, ধর্মীয় অনুশাসনে, রাষ্ট্রিয় নীতিমালায় কিংবা মানবাধিকারের মানদন্ডে। ততোটুকু চর্চা করলেই, দ্বন্দ্ব অনেকাংশে কমে।


“ এ কারনে সত্য লিখি নরম সুরে”,  সত্যের এ ধরনের পরাজয় কেন? কেনই বা সত্যকে নরম সুরে লিখতে হয়? এটা কি ব্যক্তি সমস্যা নাকি সামষ্টিক সমস্যা? সত্যের পথে মানুষের সংখ্যা খুব কম? সত্যের পক্ষ নিলে কি কোনঠাসা হতে হয়? লিখিত দলিলে এর উত্তর এক রকম আবার বাস্তবতায় এর উত্তর ভিন্ন। আমাদের প্রত্যেকেরই দুটো সত্ত্বা একই সাথে নিয়ে বসবাস করতে হয়, একটি লিখিত দলিল ভিত্তিক স্বত্বা অন্যটি বাস্তব অভিজ্ঞতা ভিত্তিক সত্ত্বা। একটি অপরটির ওপর আধিপত্য বিস্তার করে ভিন্ন ভিন্ন প্রেক্ষিতে।


ভালো-মন্দ, সত্য-মিথ্যের দ্বন্দ্বে আমাদের জীবন হয়ে ওঠে নাভিশ্বাস , আমাদের ভাবনা হয় সংকুচিত, আমাদের চলার পথ হয়ে যায় বিতর্কিত। সব শেষে নিজের উপর নিয়ন্ত্রন হারিয়ে কঠিন এক মেজাজে নিজেই নিজের চারপাশ আবারো দুর্গন্ধময় করে তুলি। শেষে আবার নিজের ভাগ্যকেই দায়ী করে থাকি।


সবচেয়ে ভালো হতো, যদি চারপাশের অবস্থা বিবেচনা না এনে, নিজের কিছু ক্ষতি হলেও, সত্য-মিথ্যেকে আলাদা করতে পারতাম, ভালো-মন্দের বিবেচনাবোধ নিয়ে চলতে পারতাম। কবি লিমেরিক ধারায়, জীবনের চরম দ্বন্দ্ব নিয়ে সহজ উপস্থাপন করেছেন।


কবির জন্য রইলো শুভেচ্ছা।