কবিতা-১২ এর পেছনের গল্প


একান্তই নিজের একটা অনুভূতির তাপে পোড়া গল্প। এ গল্পের ন্যায্য কিংবা সঠিকতা নিরূপন করা যায় কেবলই একটা অনুভূতি, এর সাথে সত্য মিথ্যা, বাস্তব, অবাস্তবের কোন মিল নেই, থাকার কথাও না। একই রকম অনুভূতি সবার হবে না আবার একই অনুভূতি হলেও সবাইকে একই রকমভাবে পোড়াবেও না। কেই ইচ্ছে করে পুড়তে চায়ও না, আবার কেউ ইচ্ছে করে কেউ কাউকে পোড়াও না, এটা সত্যি এক ভিন্ন মাত্রার অনুভূতি।


প্রতি বছর দু’বার অর্থাৎ দুই ঈদের(মুসলমানদের ধর্মীয় উৎসব) ঠিক আগে আগে আমার খুব যন্ত্রণা হয়। আমার সামর্থ্য থাকার কারনে, আমার ছেলে মেয়ে, ভাই বোন বাবা, মা সবাইকে নিয়ে খুব ভালভাবেই ঈদ করতে পারি, কোরবানি দিতে পারি, রমজান ঈদে সবাইকে নুতন জামাকাপড় দিতে পারি কিন্তু কেন জানি আমার মধ্যে একধরনের অপরাধবোধ কাজ করে,আফসোস হয়, নিজের অক্ষমতার উপর ঘেন্না হয়, নিজেকে ক্ষমা করতে পারি না কিছুতেই, নিজেকে বেহিসেবি মনে হয় কিন্তু কারো কাছেই নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে পারি না। এমনকি নিজের স্ত্রীর কাছেও না। লুকিয়ে লুকিয়ে ছিন্নমূলদের জন্য(যাদের আমরা নাম দিয়েছি টোকাই) কিছু করার চেষ্টা করি,তাদের সুখী করে তোলার চেষ্টা করি কিন্তু মনের মত করে পারি না, চাহিদার তুলনায় কিছুই করতে পারি না। নিজের ছেলেমেয়ের জন্য পারি কিন্তু ওদের জন্য পারি না। কেন পারি না, সে ব্যাখাই নিজেকে দিতে পারি না। ফলে ঈদকে কেন্দ্র করে চারদিকে যত উৎসব চলে আমি তাতে অংশগ্রহণ করতে পারি না আবার নিজেকে বিচ্ছিন্ন করেও রাখতে পারি না, এক অসহ্য যন্ত্রণা নিয়ে বছরে দুবার ঈদ উদযাপন করি, মনে মনে ভাবি, ঈদ না আসলে কি ক্ষতি হত আমাদের? চাওয়া-পাওয়ার  এই ব্যবধান সব জায়গাতেই আছে, সবার ক্ষেত্রেই সেটা প্রযোজ্য, শুধু শুধু নিজেই নিজের যন্ত্রনা নিজেই ডেকা আনারও কোন মানে হয় না। কিন্তু তবূ এসে যায়, আটকানোর সাধ্যও থেকে না।  


কবিতা লিখতে পারি (কবিতা হয় কিনা সে প্রশ্ন থেকেই যায়) বলে নিজের সাথে কথা বলি, লিখি, নিজের মনকে হালকা করি। নিজের প্রয়োজনেই কবিতা লিখি। নিজের যন্ত্রনাগুলো কবিতার শব্দে শব্দে লিখে রাখি। কাউকে প্রভাবিত করার জন্য সব কবিতা লিখি না কিংবা কাউকে আঘাত করা, নিজেকে বড় করে তোলা, এসবের জন্যও সব কবিতা লিখ হয় না। এভাবে জন্ম হয় একটি কবিতার। অনেকটা ডায়েরী লিখার মতো। এরকম কিছু কবিতার জন্ম নিজের অজান্তেই।


এ ঘটনা থেকেই জন্ম  হলো এই কবিতার


দু’বার আতঙ্কে কাটে দিন
- সরদার আরিফ উদ্দিন


বছরে দু’বার
আমি খুব আতংকে থাকি;
কত কি বাকী থাকে করবার
ইচ্ছে থাকে সবার মুখে হাঁসি ফোটাবার ।


সামর্থ্য আর ইচ্ছে মেলে না
যদিও স্বার্থপর হতে দেরী করি না;
কেবল কয়েকজনকে পূর্ণ করি
সারাদিন নিঃশ্বাস ফেলি, নিজেকে অপরাধী ভাবি।


কেবল নিজেরটা কাটছাঁট করতে পারি
সমাজের ভয়ে, লুকিয়ে পরি;
এর ওর কাছে জবাবদিহিতায় থাকি
সব কথা বলতে পারি না, হতাশার চিত্র আঁকি।


মাথায় হাত বুলাই, কিছু একটা দিই, কাছে বসি
শান্তি পাই,  কি যে অকৃত্তিম হাঁসি;
হতাশাগুলো গোপন রেখে দিন পার করি
মিথ্যে মানবিকতার গর্বে জ্বলে পুড়ে মরি।


আমার মা নয়, তার মা’ও নয়
কেবল একজন বুড়ি মা রয়;
তাদের সন্তান নয়, আমাদের সন্তানও নয়
ছিন্নমূল কিংবা টোকাই তার পরিচয় হয় ।


এভাবে আর কতদিন চলবে
প্রশ্ন নিয়ে ঘুরি, পরিবর্তন হবে?
বছরে দু’বার আতংকে কাটে দিন
উত্তরহীন প্রশ্নের চাপে কেটে যাচ্ছে প্রতিটি দিন।


অগাস্ট ১৪, ২০১৮
মিরপুর, ঢাকা