কবিতা-৭ এর পেছনের গল্প


আমার ধর্মীয় অনুভূতিকে প্রবলভাবে নাড়িয়ে দিয়েছিল ঘটনাটি। করোনা-১৯ এর ভয়াল থাবা চলছিল তখন, স্বাভাবিকভাবেই, মানষিক বিপর্যস্ততা ছিল, শ্রমজীবির মানুষের মতো আমার অর্থে্র অভাব ছিল না, থাকা খাওয়ার অনিশ্চয়তা ছিল না কিন্তু অন্য সবার মতোই মানুষিক কষ্ট ছিল মনে, অস্থির একটা সময় সবার মত আমারও ছিল।


মা দীর্ঘদিন (প্রায় ৩-৪বছর) থেকেই ভুগছিলেন ক্যান্সার রোগে আর বাবা ৫-৬ বছর যাবত এলঝাইমার রোগে। মা ছয় মাস থাকেন আমেরিকায় চিকিৎসার জন্য বাকী সময়টা বাংলাদেশে আর বাবার চিকিৎসা চলছিলো দেশেই। আমরা ভাই বোনের বেশ নাজুক অবস্থায় ছিলাম, সব কিছু ম্যানেজ করা সাধ্যের বাইর চলে যাচ্ছিল, এরই মধ্যে শুরু হলো করোনা-১৯, মা বাংলাদেশে আসলেন, আর যেতে পারলেন না। ২০২০ এর মে মাসে দুজনকেই হারালাম ২১ দিনের ব্যবধানে। প্রথমে বাবাকে পরে মা কে। বাবা চলে যাবার পর সেই ২১ দিনের ব্যবধানের সময়, একদিন মায়ের কাছে বসে ছিলাম, তখন এসব কথা বলছিলেন মা।


আমি তোদের মত এতো লেখাপড়া করিনি কিন্তু আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে যা বুঝেছি, সেভাবেই জীবন চালিয়েছি, ভাল মন্দ যাই হয়েছে, তোদের সবাইকে বড় করে তুলতে পেরেছি, মানুষ করতে পেরেছি কিনা সেটা আল্লাহ ভালো বলতে পারেন তবে আমরা সাধ্যনুযায়ী চেষ্টা করেছি। এই পৃথিবীতে এতো চাওয়া পাওয়ার কি আছে? সেই তো সব ছেড়ে চলে যেতেই হবে, কিছুইতো সাথে নেয়া যাবে না। যাবার সময় সেই তো পকেটহীন কাফনের কাপড়, এই পৃথিবিতে এতো পকেট এর চিন্তা করে কি হবে?  এখানে মানুষের কাজতো মূলত তিনটি-


১। স্রষ্টার জন্য কাজ করা (মানে স্রষ্টা যা করতে বলেছেন আর যা করতে নিষেধ করেছেন, সেগুলো মেনে চলা)
২। স্রষ্টার সৃষ্টির জন্য কাজ করা (সব মানুষ একই স্রষ্টারই সৃষ্টি, যারা একটু পিছিয়ে আছে তাদের জন্য কিছু করা)
৩। উপরের দুটো কাজ করার জন্য নিজেকে এবং নিজেদের টিকিয়ে রাখা (নিজেদের জীবন ও জীবিকার কাজ)


আমার চিন্তার মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল সেই সব কথা। “কাফনে” পকেট থাকে না”, এটা আমরা সবাই জানি, হাতকাটা গেঞ্জিতেও থাকে না, মেয়েদের পোষাকেও থাকে না, কিন্তু রূপকের মাধমে চিন্তার খোরাক তৈরী করা তাও মায়ের মুখে শুনলাম, অসাধারন , তার ব্যাখা, তার চিন্তা শক্তি। এমন কথা মা আগে কখনোই বলেনি, সব সময় বলতো ধর্ম চর্চা করতে, ন্যায়ের পথে থেকে আয় রোজগার করতে, ব্যস ওইটুকুই। কিন্তু এবার বললেন ভিন্ন কথা।


যে কোন একটা পক্ষ অবলম্বন করো, ধার্মিক কিংবা অ-ধার্মিক, কোন কিছুতে সন্দেহ রাখলে শান্তি পাওয়া যাবে না। আল্লাহ আছে বা নাই, যে কোন একটা হবে, থাকতেও পারে আবার নাও থাকতে পারে-এমন ভাবনা বেশি খারাপ, ইহকালেও শান্তি নেই, পরকালে তো নেইই। এরকম আরো অনেক কথাই বলেছিলেন। অবাক!! বিস্ময়!! তারপর থেকে এবং আরো কিছু ঘটোনার পর থেকেই ভাবনায় একটা সুক্ষ্ম পরিবর্তন হচ্ছিল আমার।


এ ঘটনা থেকেই জন্ম  হলো এই কবিতার


কাফনে পকেট থাকে না
-সরদার আরিফ উদ্দিন


কাফনে কেন পকেট থাকে না
একটি প্রশ্নের
হাজারো উত্তর
লক্ষ কোটি সমাধান
ঘুচে শ্রেনী বৈষম্যের ব্যবধান
বাড়ে মানবতায় অবদান
কমে অনৈতিক আদান প্রদান
সেচ্ছাচারিতার অবসান
যুগে যুগে জন্ম নেয় মহৎ প্রান
মনোযোগ বাড়ে সুললিত কন্ঠের আযান


কাফনে কেন পকেট থাকে না
একটি দর্শন
হাজারো তত্ত্বের বিনির্মান
অসুস্থ প্রতিযোগীতার অবসান
ভেতরের পশুকে কোরবান
প্রতিনিয়্ত আত্মশুদ্ধির নির্মান
প্রয়োজন থাকে না যুদ্ধেবাজদের গোলাবারুদ, কামান
বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রায় জ্ঞানের চর্চা সুমহান
অন্ধ নাস্তিকতায় জীবন বোহেমিয়ান
সব প্রশ্নের উত্তরে হাজির কোরআন


কাফনে কেন পকেট থাকে না
নানা তর্ক বিতর্ক
আস্তিক, নাস্তিক, সন্দেহবাদ, নির্বাকারবাদ
হালের ফ্যাশন নারীবাদ
বাদে বাদে বাদানুবাদ
সামন্তবাদ অতিক্রম করে মার্ক্সসবাদ
সাম্রাজ্যবাদের গর্ভে লালিত পুজিবাদ
অহংকারের সুউচ্চ কন্ঠে পরাশক্তির যুদ্ধবাজ
উত্তর লুকানো থাকে যেখানে জায়নামাজ
দ্বিধাহীন প্রশ্নে শুরুটা হউক আজ।


মিরপুর, ঢাকা
ফেব্রুয়ারী  ২১, ২০২২, সকাল ৭টা