কবিতা-৯ এর পেছনের গল্প


নিজের জীবনের উপলব্ধিই মুলত এই কবিতার পেছনের গল্প।গত বিশ বছর অনেকগুলো আন্তর্জাতিক সংস্থায়, মালটিন্যাশানাল কোম্পানি এবং দাতা সংস্থায় কাজ করেছি আবার কখনো কখন ফ্রি লেন্স কনসালটেন্সি করেছি। ভিন্ন ভিন্ন সময়ে চাকরিতে আমার অবস্থান, সংস্থার মান (দাতা সংস্থা, বিদেশি, নাকি দেশি সংস্থা), আমার বেতন স্কেল ইত্যাদি সুচকগুলো দ্বারাই চারপাশের মানুষগুলো আমাকে মুল্যায়ন করতো এবং আমার সাথে সম্পর্কের গতিপ্রকৃতি নির্ধারণ করতো। যখন আমি ভাল অবস্থানে থাকতাম তখন তদ্বির আর আমাকে খুশী রাখার আয়োজনে ব্যতিব্যস্ত মানুষের ফোনের যন্ত্রণায় হাপিয়ে উঠতাম, মানুষগুলোকে চেনা তখন আমার পক্ষে খুব কঠিন হয়ে পড়তো, মুখ ও মুখশের মধ্যে পার্থক্য করতে পারতাম না। আবার আমার অবস্থানের সাথে সাথে পরিবর্তন হয়ে যেত সব কিছু নিমিষেই। আমার খোজ নেয়ার আর কারো প্রয়োজন হত না। সারাদিন একটি ইমেইলও আসতো না, একটি ফোনও বেজে উঠতো না, আমি নিঃস্ব একা হয়ে যেতাম, সারাদিন তীর্থের কাকের মত একটি ফোন কিংবা ইমেইল এর অপেক্ষায় থাকতাম। এমনকি খুব কাছের বন্ধুরা ফোন রিসিভ করতো না, আত্মীয়স্বজন পারতো পক্ষে কোন অনুষ্ঠানে আমন্ত্রন জানাতো না।


আসলে ‘সম্পর্ক’ বলে কিছুর অস্তিত্ব আছে কিনা তাই নিয়ে চিন্তিত হয়ে পরতাম, মাঝে মাঝে মনে হতো, ‘সম্পর্ক’ পুরোটাই একটি ইউটোপিয়া ধারণা মাত্র, বাস্তবে এর কোন অস্তিত্ব নেই। পৃথিবীর সবাই যখন এই নিয়মে চলছে তখন নিশ্চই আমারই কোথাও ভুল হচ্ছে, সম্পর্ককে আঁকড়ে থেকে আমিই ভুল করছি। ভাবনাগুলো খুব যন্ত্রণা দিচ্ছিল, হয়তো সবাই বিষয়টি অনেক আগেই বুঝে গিয়েছিল, আমিই বুঝলাম অনেক দেরী করে।মুলত এই কবিতার পেছনের গল্প আমার নিজের‘ ভাবনা যন্ত্রণা’কে কেন্দ্র করেই।


এ ঘটনা থেকেই জন্ম  হলো এই কবিতার


এ ঘটনা থেকেই জন্ম  হলো এই কবিতার


একটি চেয়ার এবং আমি
- সরদার আরিফ উদ্দিন


যখন চেয়ারে বসি
সেল ফোনের অত্যাচার সহ্য হয় না;
চেয়ার ছেড়ে দিলে
সেল ফোনের রিং টোন আর বাজে না।


চেয়ারে বসলে
মানুষ দেখি, চিনতে পারি না;
চেয়ার ছেড়ে দিলে
চিনতে পারি, মানুষ দেখি না ।


চেয়ারে বসলে
সময় থাকে না;
চেয়ার ছেড়ে দিলে
সময় কাটে না ।


যখন চেয়ারে বসি
জীবনকে কাছে পাই না;
চেয়ার ছেড়ে দিলে
কাছে পাই, জীবন থাকে না ।


একটি চেয়ারের ওজন
যন্ত্রে মাপা যায় না;
সমাজের আয়োজনে
চেয়ারকে ভোলা যায় না ।


অগাস্ট ২৫, ২০১৮
মিরপুর, ঢাকা