ভাল না থাকার জন্য
সহস্র কারণ বের করতে পারি  আমি, কিন্তু
ভাল থাকার একটি কারণও সাহস করে
উচ্চারন করতে পারি না;
আমার সাহস নেই, আমার কৃতজ্ঞতা বোধ নেই
আমি কেবল হতাশ হতে জানি
আমি ভীতু প্রকৃতির মানুষ
সাহস করে, একটি দিনও বলিনি, আমি ভাল আছি,
অনেকের চেয়ে অ-নে-ক, অ-নে-ক বেশী ভাল আছি।


দামী বিছানায় শুয়ে, এসি চালিয়ে প্রিয় মানুষকে যখন অপূর্ণতার
কথা শোনাতে  থাকি;
তখন একজন বার বনিতা ব্রা’র হুক খুলে
সংসার চালানোর কথা, অসুস্থ বাবার চিকিৎসার
কথা ভাবতে থাকে ।


ফেসবুকে যখন হা হুতাশ করে
নিজের অপূর্ণতার কথা লিখতে থাকি
আই ফোনের জন্য মায়ের সাথে উচ্চ গলায় কথা বলতে থাকি;
তখন কোন এক মা সন্তানের ছিঁড়ে যাওয়া জামা
সেলাই করার টাকার চিন্তায় অস্থির থাকে ।


নুতন মডেল এর গাড়ি কিনতে না পেরে
বাবা’কে যখন ‘ছোটলোক’, ‘হাড় কিপটে’ গালি দিতে থাকি;
তখন মনু মিয়া, পা না থাকায়
ক্রাচে ভর করে, মানুষের কাছে হাত পাতে
পেট ভরে এক বেলা খাবার জন্য।


খাবার টেবিলে একদিন, মাত্র একদিন
ডাল, সবজি আর আলু ভর্তা দেখে
যখন আমার মাথায় রক্ত চড়ে যায়;
ঠিক তখন, রাস্তায় ফেলে দেয়া প্লাস্তিকের বোতল জড় করে
বস্তির ঐ পাঁচ বছরের ছেলেটি, এক প্লেট ভাত লবণ আর কাঁচা মরিচের বন্দবস্তের জন্য।


ব্রান্ডের শার্ট ছাড়া যখন আমি
বাইরে বেরোতে পারি না, প্রেস্টিজ থাকে না বলে;
তখন এক বাবা, মাথার ঘাম পায়ে ফেলে, রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে
বাড়ি বাড়ি পুরনো কাপড় কিনে ফেরি করে।
সন্তানের মুখে ভাত তুলে দেবার জন্য।


কমদামী ল্যাপটপের কিবোর্ডে
যখন আমার আঙ্গুল চলে না,
টাচ স্ক্রিন ছাড়া অন্য ভাবনা আসে না
বন্ধুদের সামনে নিজেকে ‘ছোট ভাবতে থাকি’
তখন, দু’হাত বিহীন মানুষটি একটু সাহায্যের জন্য
অপেক্ষা করে, বাথরুমে যাবে বলে ।


আমি কেবল আমারটাই ভাবতে থাকি
অন্যের কষ্টগুলো মনে হত, সবই মেকী;
সবই ছিল আমার, শুধু জীবন দর্শন টা ছিল বাকী
নিজেকে নিজে দিয়েছিলাম অনেক ফাঁকি ।


আজ আমি বার বার নিজেকে দেখি
বাইক এক্সিডেন্ট করে সারাদিন হাসপাতালে শুয়ে থাকি;
এখন আর বুঝতে নেই একটুও বাকি
চিরতরে হারানো, দুপা বিহীন নিজের শরীরটাকে নিয়ে বাকী জীবনটা আঁকি
এবার কি তবে মানুষ হব? ভাল থাকার সাহস কি পাব? শুধুই ভাবি .........


জুন ২৮, ২০১৮
মিরপুর, ঢাকা