একটা সময় ছিল যখন ভাবতাম
এত এত শোক বুকে চেপে বছরের পর বছর বাঁচে কীভাবে অগণিত মানুষ!
এখন দেখছি নিজেই দিব্যি
বেঁচে আছি আমি অন্য দশজনের মতোই!
বাহ্যিকভাবে আমাতে পরিবর্তনের
ছিঁটেফোঁটাও লক্ষ করা যায় না হয়তো,
কিন্তু ভেতরে ভেতরে কতখানি ভেঙে পড়েছি আমি,
কতকিছু যে হারিয়ে ফেলেছি এরই মাঝে-
তা কেবল আমিই জানি!


সবার কাছেই আজ আমি হয়ে গেছি অবোধ শিশু,
যে যেভাবে বুঝায়-
মাথা নেড়ে সায় দিয়ে সম্মতি জানাই,
কোনোরকম বাকবিতণ্ডায় জড়াই না নিজেকে।
কত কথা জমা পড়ে থাকে বুকের গোপন প্রকোষ্ঠে,
পাথর চাপা দিয়ে রাখি!
অথচ কারো একটুখানি মিষ্টি হাসির বিনিময়ে,
কলিজা ছিঁড়ে খাওয়াতে ইচ্ছে করে এখনও!
তবুও কিছুতেই কিছু হয় না,
কিছুই আর আগের পর্যায়ে ফিরে আসে না।
অনেক ভেবেচিন্তে কিছু কথা ভালো করে গুছিয়ে রাখি,
আপনজনদের বলব বলে,
কিন্তু কাউকেই কিছু গুছিয়ে বলা হয়ে ওঠে না।
আজকাল দোষের সীমা পরিসীমা নেই আমার,
ভুলের রাজ্যে বাস করছি উটপাখির মতো বালিতে মাথা গুঁজে থেকে।
সম্প্রতি কথা বলতে ইচ্ছেও করে না বড়োবেশি,
ফেটে পড়ি না আর অট্টহাসিতে কারণে অকারণে,
ভাঁড় সেজে বিনোদন দেওয়ার চেষ্টাও করি না কাউকে আর।


ইদানীং আমজনতা বাঁকা চোখে দেখতে শুরু করেছে আমাকে,
কী জানি, হয়তো তারা ভাবে-
আমি ভীষণরকম অহঙ্কারী হয়ে গেছি!
কিন্তু আমি যে কী হারিয়ে কী খুঁজছি
কী করে বুঝাই তাদের!


মাঝেমাঝেই আমার কাছের কিছু মানুষ
পাশে বসে জ্ঞান বিতরণ করে যায় অনর্গল,
আমি শুনি, মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনি,
তাদের জ্ঞানগর্ভ কথার ফল্গুধারা;
গভীর মনযোগ সহকারে শুনি যেন -
এমন দুর্লভ আর অমূল্য কথা কস্মিনকালেও
শুনিনি আমি,
কিংবা শুনেনি আমার চৌদ্দপুরুষ।
আমার কোনো গল্প নেই আজকাল,
নেই কোনো যুক্তি,
আমি কেবলই এক নিরীহ শ্রোতা।


এখন আর কিশোর যুবক কিংবা বৃদ্ধটিও নই আমি,
আমি আবারও শিশু হয়ে গেছি।
যে যেভাবে খুশি আমাকে শিশু সাজায়,
হাতে ধরিয়ে দেয় মোয়া, দেয় ললিপপ  কিংবা লজেন্স!
আমি গ্রহণ করি সাদরে দুহাত পেতে,
ইত্যাকার ছেলেভুলানো আরও কত কী!
সকল ইন্দ্রিয় বন্ধ করে উপভোগ করি এসব।
কোনো একদিন আমিও যুবক ছিলাম
কিংবা কিছু পড়াশোনাও হয়তো করেছিলাম কোনো কালে,
এসব নিমিষেই ভুলে গিয়ে মিশে যাই অবোধ শিশুদের কাতারে স্বেচ্ছায়।


কোনো অভিযোগ নেই আমার,
নেই কোনো অনুযোগ,
কারো কাছে কিছু পাওয়ার আশাও নেই আমার।
সম্মান দিতে শিখিনি আমি গুরুজনদের,
তাই সম্মান পাওয়ার আশাটাও আমার যে বড়ই অবান্তর!
নতুন করে শিখি কতশত রেফারেন্স!
পঞ্চাশ পেরিয়ে এসে এখন নতুন করে
শিখি কার্টেসি, নর্মস, এটিচ্যুড, ম্যানার, এন্টারটেইনমেন্ট ইত্যাদি!


আশেপাশের সম্মানীয় মানুষজন যেন অখুশী না হন, তাই তো বিনয়ী হতে শিখছি প্রতিনিয়ত।
পরিবারের প্রতি দায়িত্ব আর কর্তব্য সম্পর্কে শিখছি,
শিখছি দায়িত্বে অবহেলার জন্য কঠিন কিছু কথা হজম করাও!


সবকিছুর সাথেই হারিয়ে ফেলা সুখের
একটা যোগসূত্র খুঁজে ফিরি প্রতিনিয়ত,
কিন্তু কোথাও দেখা মিলে না তার
টিকিটিরও,
হয়তো সুখ ডিজার্ভ করি না আর আমি!
কিছুদিন আগেও মাথা উঁচু করে পথ চলতাম,
চাইতাম লোকজন আমাকে দেখুক,
একজন সফল মানুষ চলনে বলনে কেমন হয় তা স্বচক্ষে দেখে আফসোস করুক কিছু অসফল মানুষ!
আজ আর মাথা উঁচু করে চলার সাহস করি না,
এড়িয়ে চলি পরিচিত অপরিচিত সবাইকে।
কেউ যেন কোনোরকম প্রশ্ন করার সুযোগ না পায় আমাকে,
কেউ যেন সফলতার বুলি আওড়ানো
ব্যর্থ সেই মানুষটার সামনে এসে বিব্রত না হয়!


নিজস্ব পরিমণ্ডলে আমি আজ পরাজিত,
অযাচিত, অনাহুত, অবাঞ্চিত আর অচ্ছুৎ,
বিলাসবহুল প্রাসাদের প্রয়োজন ফুরনো
জরাজীর্ণ পুরনো কোনো পরিত্যক্ত ফার্নিচার!
আমি নির্বিষ, আমি নির্বিকার,
আমি নাম পরিচয়হীন অবোধ এক পথশিশু!!