যুদ্ধ এক আত্মম্ভরিতার রক্তাক্ত অভিধান,
যেখানে অহংকারের ব্যাকরণে মুদ্রিত থাকে মৃত্যুর পদ্য-পঙক্তি।
সভ্যতার অলিন্দে যুদ্ধের অগ্নিশিখা কেবলই পুড়িয়ে দেয় নিস্পাপ শরীরের উপাখ্যান,
বিনাশ করে স্বপ্নের জ্যামিতি।
তবু বিজয়ের মদিরায় বুঁদ থাকা শাসকগোষ্ঠী যুদ্ধকে বলে ‘সুদ্ধ’
এ যেন ধ্বংসই পরিশুদ্ধির একমাত্র অবতারণা।
রক্তমেখে বিজয় নয়, বরং বঞ্চিতের করুণ আর্তনাদ—যা প্রতিধ্বনি হয়ে ফিরে আসে ধূসর গলিতে,
আর ইতিহাসের কালিতে লেখা থাকে কেবলই পরাজয়ের নামফলক।
যুদ্ধ মানে মানবতার জরাজীর্ণ শবদেহের ওপর ছড়ানো ক্ষমতার কৃত্রিম অলংকার।
যুদ্ধ মানে উন্মত্ততার মহারণ্যে জেগে থাকা এক বিভ্রমীয় সংকেত,
যেখানে বিজয়ের অভিজ্ঞান আসলে লালশিরায় বয়ে যাওয়া পরাজয়ের গোপন প্রতিলিপি।
প্রতিটি গুলির অনুপ্রাসে মিশে থাকে সভ্যতার অপমৃত্যু,
প্রতিটি শিরদাঁড়ায় লেখা থাকে রাষ্ট্রীয় মিথ্যের অভিধান।
অহংকারের জ্যামিতিতে বাঁক নেয় অস্তিত্বের স্বরলিপি!
মানবতা সেখানে হয়ে ওঠে কেবল বর্জ্যকোষের অনাকাঙ্ক্ষিত ত্রাস।
শাসকের রক্তিম অলংকারে যুদ্ধের নামে যে শুদ্ধতার আরাধনা চলে,
তা মূলত শবস্তূপের উপরে স্থাপিত বিকারগ্রস্ত অভিজাত্যের সমাধিস্তম্ভ।
বঞ্চিতের আর্তনাদ ছদ্মপ্রতিরোধের ছায়ায় প্রতিধ্বনিত হয় ধূসর ইতিকথায়,
যেখানে ইতিহাস নয়, লিপিবদ্ধ হয় কেবল চক্রান্তের নীল নকশা।
যুদ্ধ কখনো শুদ্ধ নয়;
যুদ্ধ মানে শিরস্তব্ধ মানবতার অপরিচিত সমাধিক্ষেত্রে ক্ষমতার চূর্ণবিচূর্ণ প্রতিমা প্রতিষ্ঠা।
==========