নির্বাক প্রস্থানেও তুমি রেখে গেছো এক প্রলয়ান্ত ধ্বংসের অভিঘাত,
যা আমার অন্তঃসত্ত্ব আত্মজগতে অনবরত সংঘটিত হয়ে চলেছে—ধ্বংসপ্রবণ, অথচ শব্দহীন।
তোমার অনুপস্থিতি প্রতিদিন উচ্চারণ করি অবিচল ঠোঁটে,
যেন মৃতরা কবরের শূন্যতাকে নীরবতাই ভাবে বেঁচে থাকার শেষ সম্ভাবনা।
তবুও, প্রতিটি অসতর্ক মুহূর্তে,
যখন নিঃশ্বাস স্পর্শ করে বৃষ্টিভেজা জানালার কাচকে,
তখন তোমার স্মৃতি আবির্ভূত হয় এক নিষ্প্রাণ ছাইয়ের মতো,
যা আমার চুলের প্রতিটি সোনালি রেখায় বার্ধক্যের অকাল সাক্ষ্য হয়ে লেগে থাকে!
সমাজ যাকে ডাকে ‘অপ্রাসঙ্গিকতার সনদপত্র’ বলে।

তোমার প্রস্থানকে দুঃখহীনতা বলে চিহ্নিত করি,
হয়তো এ কারণেই প্রতিদিন ঠোঁটে প্রজ্জ্বলিত করি আগুন!
আর নিকোটিন-বিন্যস্ত ধোঁয়ার আবরণে আমার দেহ রূপ নেয় এক জৈবিক সমাধিক্ষেত্রে,
যেখানে প্রতিটি হাসি গলে পড়ে,
রূপ নেয় বিষাদাত্মক দ্রবণে।

এই ঠোঁট, যা একসময় পবিত্রতায় উচ্চারণ করতো তোমার নাম,
আজ সমাজের বিবেকহীন চোখে—
আজ তা এক পিশাচিনীর অপবিত্র প্রতিচ্ছবি মাত্র।

তোমার এক বিন্দু হাসির জন্য, অহেতুক অপবাদে নিজেকে কলুষিত করেছি অনায়াসে!
যা ধুয়ে যায় না—কোনো অনুশোচনাতেই নয়, কোনো সময়ে নয়।
ভালোবাসা যে এমন অমিতব্যয়ী হবে—
যেখানে পিতৃত্ব, আত্মসম্মান, এমনকি সামাজিক পরিচয়ের মৌল কাঠামো পর্যন্ত বন্ধক রাখতে হয়—
তা তো কল্পনাতেও আসেনি।

তুমি ছিলে আমার কাঁচা কবিতার প্রথম উচ্চারণ,
আমি ভেবেছিলাম ভালোবাসা মানেই অনুভূতির উদ্বেল তরঙ্গ।
এখন জানি—ভালোবাসা এক বিষবৃক্ষ,
যার মূল ছড়িয়ে পড়ে হৃদয়ের প্রত্যন্ত কুঠুরিতে,
আর তার ছায়ায় জন্ম নেয় আত্মপরিচয়ের ক্রমাবনতির এক ভয়ানক মহাকাব্য।

তোমার রেখে যাওয়া অনুপস্থিতি এক মহাশূন্য,
যা আমার অস্তিত্বকে প্রতিনিয়ত গ্রাস করে বিষাক্ত প্রশ্বাসে।
না, তোমার চলে যাওয়াতে এখন আর কোনো প্রতিক্রিয়া নেই;
আছে কেবল আমি নিজেই বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার এক দীর্ঘ, নিরবিচ্ছিন্ন প্রক্রিয়া।

তাই অনুরোধ—তুমি আর ফিরে এসো না।
কারণ আমি আর সেই "আমি" নেই,
যাকে তুমি ভালোবেসেছিলে।
সে আমি তো তোমার পদধ্বনির শেষ স্পন্দনের সঙ্গে মাটিচাপা পড়েছে কবেই।
আমি এখন শুধু এক নতুন শূন্যতা,
যেখানে তুমি আর বসবাস করতে পারবে না।

=========