কিছু জিনিস আর ফিরে আসে না,
যেমনি ফিরে আসে না শৈশব কৈশোর কিংবা যৌবন। ফিরে আসে না ভুল করে নেওয়া কিছু সিদ্ধান্তের সংশোধন।
ফিরে আসে না ছোট্টবেলার সেই মায়াবী মুখ।
ফিরে আসে না হারিয়ে যাওয়া সেই নিষ্পাপ কিছু সম্পর্কে জড়ানো মায়াময় স্মৃতি।
বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে যায় মায়ামমতা, শ্রদ্ধা, আবেগ আর বয়সভিত্তিক অনুভূতি।


সন্তান ভূমিষ্ঠ হবার পর যেমন মনে রাখে না
মায়ের গর্ভ,
তেমনিভাবে মনে রাখে না তিলে তিলে বেড়ে ওঠার গল্পটাও।
চাকচিক্যময় বর্তমানের যাঁতাকলে পড়ে বিস্মৃত হতে থাকে তার অস্তিত্ব আর অতীত ইতিহাস।
আসল ভুলে গিয়ে মেকি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে,
নষ্ট করে মহামূল্যবান সময় অবলীলায়!
ভুল একসময় হয়তো ভাঙে,
তবে ততক্ষণে খোলা থাকে না ফিরে আসার কোনো পথই।
হীরা ফেলে কাঁচ তুলে আত্মতৃপ্তিতে মশগুল থাকে কিছু অসুস্থ মানুষ।
বর্তমানকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে হারায় অতীত,
হারায় ভবিষ্যৎ, হারায় পরীক্ষিত আপনজন।
প্রাথমিকভাবে হেয়ালিপনা বা এসব টেস্ট হিসাবে নিলেও,
নারীর টানে ফিরে আসতে পারে না আর কখনো।
প্রত্যাশা আর প্রাপ্তীর হিসাব কষতে গিয়ে,
দায়িত্ব ও কর্তব্য থেকে গায়েব হয়ে যায় আশাতীতভাবে।


মানুষ নগদে বিশ্বাসী,
রক্তে কী আছে তার তা সে জানে না।
হাড় মাংস কী করে হলো তা সে জানে না,
জানতে চায়ও না।
বিদ্যালয়ে ভর্তি হবার পূর্বেই কীভাবে মাতৃভাষা আয়ত্ত করে ফেলল!
কীভাবে হাঁটি হাঁটি পা পা করে একসময় একাই চলতে শিখে গেল!
কীভাবে বর্ণমালা শিখে গেল-
এ সবকিছুই মানুষ সাময়িক তোষামোদির কাছে বিসর্জন দেয় ফলাফল চিন্তা না করেই।
বিসর্জন দেয় আত্মপরিচয় আর আত্মসম্মান।
রঙিন চশমায় রঙিন পৃথিবী দেখে আত্মতৃপ্তি লাভ করে।
একসময় কেটে যায় মোহ,
ধীরে ধীরে খোলশ ছেড়ে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করে রেশমপোকার মতো।
দিগ্বিদিকজ্ঞান শূন্য হয়ে পড়ে,
হয়ে পড়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ়,
সঠিকটা জেনেও মিথ্যে আর ভনীতার আশ্রয় নেয়।
শেখানো বুলি আর ঠুনকো যুক্তিতর্কের মাধ্যমে -
জিতে যেতে চায় আপনজনের সাথে।
জিতেও যায় তারা সাময়িকভাবে,
কারণ তার একান্ত আপনজনেরা ইচ্ছে করেই হেরে গিয়ে তাদের জিতিয়ে দেয়।
আপনজনের কাছে হেরে যাওয়াও যে দারুণ এক প্রশান্তির!


সাময়িকভাবে তারা সফল সার্থক আর সচ্চল মনে হলেও ,
এদের মনটা থাকে অত্যন্ত দুর্বল,
স্নায়ুচাপে ভোগে সারাক্ষণ।
তাই এরা পালিয়ে বেড়ায় সমাজ-সংসার থেকে,
রবি ঠাকুরের ছোটগল্প "আমার ছেলেবেলা" 'র ব্রজেশ্বর চরিত্রের মতো,
পৃথিবীটাকে এড়িয়ে চলতে চায়।
আর এভাবেই ক্রমান্বয়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে তারা গোটা পৃথিবী থেকে।


আপাতদৃষ্টিতে এদের সুখী মনে হলেও,  
ভিতরে ভিতরে এদের অপরাধবোধ কাজ করে চরমভাবে।
চেহারাতেই এর ছাপ স্পষ্ট হয়ে ওঠে।  
কিছুতেই তারা শান্তি পায় না।
ফেরারি আসামীর মতো বিনাকারণেই ছটফট করতে থাকে এরা,
অল্পতেই মেজাজ হয়ে যায় চরম খিটখিটে,
হয়ে পড়ে হিতাহিত জ্ঞানশূন্য।


কিছুদিন, ক'টা মাস, ক'টা বছর এরা ভালোই থাকে,
অথবা ভালো থাকার অভিনয় করে চলে মাত্র।
মূলত তাদের বিবেক বুদ্ধি স্বাভাবিক কাজ করে না।
স্বাধীন মত প্রকাশের যোগ্যতা বা সাহস হারায় তারা-
কোনো এক অদৃশ্য সূতোর টানে।


একসময় তারা তাদের সব ভুল বুঝতে পারে,
কিন্তু ততক্ষণে দেরি হয়ে যায় অনেক!
অনুশোচনা অবজ্ঞা অবহেলা আর অনুকম্পায় কাটে তাদের অবশিষ্ট জীবন!!


==========