ধ্বংসের অনিবার্য অভিঘাতে দণ্ডায়মান সভ্যতা আজ এক ক্লান্ত, কঙ্কালসার প্রতিমূর্তি।
মিথ্যাচারের প্রাসাদ ভস্মীভূত!
সেই ছাইরাশির অন্তর্লোকে এখনও ক্রিয়াশীল এক অদৃশ্য, বিষাক্ত নিঃশ্বাস।
বিবেকের ভগ্নাবশেষে জ্বলে উঠে নিয়তির অগ্নিসঞ্চার,
যেখানে মানবতা পরিণত হয়েছে অনুশোচনার দগ্ধ ছায়াচরিত্রে।

শাসনযন্ত্রের শীতল নির্মমতায় ন্যায়বোধ আজ এক অন্তঃসারশূন্য ছাইরাশি মাত্র,
নির্বিকার সময় সেখানে রুদ্ররূপে আবির্ভূত!
দুর্যোগের ঘূর্ণাবর্তে আকুল আত্মার শ্বাসরুদ্ধ হাহাকার প্রতিধ্বনিত হয় প্রতিটি নিঃশব্দ প্রাচীরে।
অনিশ্চয়তার বেদনাক্লিষ্ট প্রতিচ্ছবি, বিপন্ন আশার আত্মসমর্পণে নির্মিত হচ্ছে এক নতুন, নির্দয় ইতিহাস।

তৃষ্ণার্ত হৃদয় শান্তির একবিন্দু জলের তৃষায় দিগ্বিদিক ছুটে চলে—
অথচ দিগন্ত সেখানে নিষ্প্রভ, নিস্তব্ধ, নিষ্ফলা।
অসীম শূন্যতার অলঙ্কারহীন সিংহাসনে অধিষ্ঠিত ইতিহাস!
এ যেন এক করুণ, পরিহাসপ্রবণ মহাকাব্য।
প্রতারণার অগ্নিপরিধিতে চূর্ণ বিশ্বাসের প্রাচীর,
তবুও বিবেক তার ছাইস্তূপে নিঃশ্বাস হারায়।
সত্য আজ ধ্বংসস্তুপের অন্ধকূপে,
তার দীপ্ত শেষ শিখা সময়ের নিঃসীম নির্যাতনে ক্রমশ নিভে যাচ্ছে।

প্রতিকূলতার প্রলয়ধ্বনি, ন্যায়বোধের মৃতদেহ—
মানুষ্যত্ব তার দিকবিচ্যুত গতিপথে বিস্মৃত।
চারপাশে প্রতিধ্বনিত হয় নিঃসঙ্গতা আর নীরব ক্রন্দন,
মানবতার অব্যক্ত আর্তনাদ রূপ নেয় এক গূঢ় শোকসংগীতে।
শাসনের নিষ্ঠুর ছায়াপটে অবদমিত হয় সুবিচারের নশ্বর কণ্ঠ,
অধিকার শৃঙ্খলে আবদ্ধ, আর অবিচার তার পাদচিহ্ন আঁকে সংকীর্ণ রাজপথে,
আঁকে অভ্যুদয়ের ছদ্মবেশে।

শান্তির মরীচিকায় বিভ্রান্ত আত্মা ছুটে চলে বারংবার,
আর প্রত্যাবর্তন হয় নিষ্ফল আকাঙ্ক্ষায়।
দুঃশাসনের কুটিল শিখরে প্রতিষ্ঠিত শূন্যতার অহংময় সিংহাসন,
যার প্রতিধ্বনি শুধুই ব্যঙ্গ, তিরস্কার ও অভিজাত অবজ্ঞা।

আজকের এই সভ্যতা—পিষে যাওয়া নিয়তির নির্মম যাঁতাকলে পিষ্ট,
যেখানে সত্যের শবদেহের পাশে উদযাপিত হয় মিথ্যার ঔদ্ধত্যময় বিজয়োৎসব!
এ এক নৈঃশব্দ্যের মহাকাব্য,
যেখানে প্রতিটি পঙ্‌ক্তি বিষণ্ণতা আর প্রতিহিংসার অনুপম গীতিমালা হয়ে বয়ে যায়,
বয়ে যায় মানবতার অন্তিম পরিণতি হিসেবে।

==========