অহংকার এক গোপন বিষের মত,
যা নিঃশব্দে বিস্তার ঘটায় মনের গহীনে।
প্রথমে আসে আত্মবিশ্বাসের মোড়কে,
কিন্তু আসলে সে আত্মবঞ্চনার সূক্ষ্ম প্রতিভূ।
অহংকারের অলিন্দে পদার্পণ মানেই
আত্মমুগ্ধতার অন্ধ গহ্বরে প্রবেশ,
যেখানে মানুষ নিজেকে ভাবে সর্বোচ্চ,
অপরকে ভাবে ক্ষীণ ছায়া।

এই গর্বিত বিভ্রম এক দুর্ভেদ্য পর্দা —
যা টেনে দেয় চেতনার দিগন্তে,
যা আর্তনাদে রূপ নেয় —
যখন সমস্ত সম্পর্ক নিঃশব্দে ছিন্ন হয়ে যায়।
সেই ছিন্ন সুতোয় গাঁথা থাকে
কেবল একাকীত্বের নির্মম দীর্ঘশ্বাস,
আর হৃদয়ের অলিন্দে জমে ওঠে শূন্যতার কাঁটাতার।

অহংকারী ভাবেন, তিনি জগতের কেন্দ্রস্থল,
তাঁরই ভাবনায় ঘোরে সময়ের চাকা,
অথচ বাস্তবতার অভিঘাতে—
একদিন চূর্ণ হয় সেই কল্পনার প্রাসাদ।
তখন বুঝি—এই অহংকার এক অন্তঃসারশূন্য প্রপঞ্চ,
যার উজ্জ্বল আবরণে লুকিয়ে থাকে অসীম অন্ধকার।

নিজস্ব ছায়ায় ডুবে যেতে যেতে,
অহংকারীর অন্তরালেও জাগে প্রশ্ন—
এই শ্রেষ্ঠত্ববোধ কি সত্যি, না কি কেবল এক অন্তর্মোহ?
তখনই সে মুখোমুখি হয় নিজের ক্ষুদ্রতার,
যেখানে সে আর কেউ নয়, কেবল এক বিন্দু ধূলি,
যা ধূলির মধ্যেই বিলীন হয়ে যায় নিরবে।

অহংকার শেষে পরিণত হয় এক গভীর উপলব্ধিতে—
জীবন অসীম, আর মানুষ তাতে ক্ষণস্থায়ী।
এই উপলব্ধিই জন্ম দেয় বিনয়,
যা অহংকারের বিপরীতে দাঁড়িয়ে—
সত্যের আলো বহন করে।
অহংকারের ছায়া সরিয়ে,
যখন আমরা দেখি নিজেকে ছাপহীন, নিরাভরণ,
তখনই হয় আত্মজয়!
হয় অহংকারহীন এক নির্মল সত্তার জন্ম।

========