নিসর্গের নিস্তব্ধ প্রান্তে দাঁড়িয়ে,  অন্তরে এক অমোঘ টান অনুভব করি।
নদী যেন নির্বাক ভাষায় আহ্বান জানায়।
ঠিক যেমন ঘুম ভাঙার পূর্ব মুহূর্তে কাচঘেরা জানালায় নিঃশব্দে পড়ে প্রভাতরশ্মির অপার্থিব আলোকস্পর্শ,
তেমনই নদীর আবেগময় স্বরহীন আহ্বান ছুঁয়ে যায় চেতনার গভীরতম স্তর।
তার জলের প্রবাহ, অলক্ষ্য অথচ অবিরাম, প্রবল অথচ প্রশান্ত!
যেন নেমে আসে হৃদয়ের অন্তঃস্থ অলিন্দে।

নদী শুধু ভূগোল নয়, সে এক অনর্গল গাথা!
এক চলমান জীবনপাঠ, যার প্রতিটি বাঁকে নিঃসৃত হয় অস্তিত্বের অন্বেষণ।
সে যেন আত্মার সঙ্গে নিঃশব্দ কথোপকথনে বলে- “আমি গন্তব্য নই, আমি গতি; আমি চিহ্ন নই, আমি চিরকালীন প্রবাহ।”
তার কূলে কূলে ধ্বনিত হয় অনাম্নী আখ্যান!
যেন সে আবেগঘন, বিচিত্র, প্রগাঢ়।
ভেসে আসা একটি নিঃসহায় পত্র যেন আত্মপরিচয়ের প্রতীক,
যেখানে প্রতিটি জীব একদিন নিজস্বতা হারিয়ে মিশে যাবে অনির্বচনীয় অনন্তে।

নদীর জলে ভেসে থাকে সভ্যতার শ্রুতি,
ভেসে থাকে নগরের কর্কশ আর্তনাদ, গ্রামের স্তব্ধতা, পাহাড়ের প্রগাঢ় নির্জনতা।
সূর্যাস্তের আলোকরেখা যখন তার বুকে পড়ে,
তখন সে হয়ে ওঠে অস্তিত্ব ও অনন্তের সংযোগসেতু। তেমনই জীবনও শেষ হয়ে নয়, পুনঃআবির্ভাবের সম্ভাবনায় পূর্ণ।
অথচ নদী স্থির নয়, সে নিজের ছন্দে, স্বতঃস্ফূর্ত রূপান্তরে বহমান।

তার কাছে দাঁড়িয়ে উপলব্ধি করি—
জীবনও নদীর ন্যায় এক অন্তহীন গতির অনুষঙ্গ।
জীবনও অনিয়ন্ত্রিত বাঁক নেয়, কখনো অনুচ্চ, কখনো উদ্দাম।
একেক সময় দিশাহীন;
আবার কোথাও খুঁজে পায় প্রজ্ঞার দিগন্ত।
সুখ-দুঃখের স্মৃতিমালার অনির্বাণ ধারা বয়ে চলে তার স্রোতে,
যেখানে বিরতি বলে কিছু নেই, আছে কেবল গমন, এবং গন্তব্যহীনতা।

এই নদী, এই জীবন—একই প্রবাহমান দর্শন,
যেখানে প্রতিটি কণা সময়ের সাক্ষী।
যেখানে থেমে থাকা মানে বিলুপ্তি, আর বহমানতা মানেই চিরন্তনতা।

==========