বিপ্লবের মূর্তিমান প্রতীক, বিদ্রোহের মহাজাগতিক স্পন্দনে অনুপ্রাণিত এক অন্তর্লীন অগ্নিসূর্য।
আলোকবর্তিকারূপে অন্ধকারাচ্ছন্ন সামন্তবাদী নৈরাজ্যের বুকে নিক্ষেপ করেছিলেন বাণীর বজ্রকণ্ঠ।
অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রজ্ঞার প্রতিমূর্তি হয়ে ঝড় তুলেছিলেন শব্দের অভ্যন্তরে।
ধর্মীয় গোঁড়ামি ও বৈষম্যের বিভীষিকা ভেদ করে মানবতার বৈদ্যুতিক ঝলক ছড়িয়ে দিয়েছিলেন শতধা।
তার কলম ছিল অস্ত্র, তার ছন্দ ছিল প্রলয়,
তার ভাষা ছিল জাগরণের উদ্দীপক।
উপনিবেশবাদী দাসত্বের বিরুদ্ধে উচ্চারিত প্রতিটি বাক্য ছিল যেন নৈতিক বিস্ফোরণ।
নিখণ্ড দেশচেতনায় তিনি গেঁথেছিলেন হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের অনপোনীয় অলঙ্কার।
জীবনবোধের উল্লম্ফনে, ব্যথার অভিঘাতে, প্রেমের উদ্দীপ্ত স্পর্শে—নির্মাণ করেছিলেন শব্দের সমরাঙ্গণ।
দারিদ্র্য ও রোগের নির্মম কশাঘাত তাঁকে করেছিল শারীরিকভাবে স্তব্ধ, কিন্তু মানসিকভাবে ছিলেন অক্ষয়।
তার উচ্চারণে ছিল দ্রোহ, তার নীরবতাতেও ছিল দীপ্ত প্রতিরোধের চিহ্ন।
বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতির শ্রেষ্ঠ পরিসরে—তিনি অমর এক অনির্বচনীয় প্রজ্ঞাপুঞ্জ।
গানের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত করেছেন চেতনার আবহমান প্রতিধ্বনি।
দেহে বৈরাগ্য, হৃদয়ে দহন—এই দ্বৈত আবরণেই গড়েছিলেন আত্মার জাগরণ।
কালোত্তীর্ণ চিন্তাধারায় তিনি হয়ে উঠেছেন প্রজন্মদ্রোহের মহাশিল্পী।
নারীর মুক্তিস্বরূপে, শ্রমিকের সুরে, নিপীড়িতের চিৎকারে তাঁর কণ্ঠ শোনা যায় এখনও।
নির্জনতায় ডুবে থেকেও ছিলেন বিপ্লবের অনির্বাণ আলোকস্তম্ভ।
ভবিষ্যতের বুকে লিখে গেছেন এক অনবদ্য প্রতিজ্ঞার পঙ্ক্তিমালা।
তার প্রতিটি রচনায় ঘনিয়ে এসেছে সময়ের গর্ভজাত অগ্নিগর্ভ প্রশ্ন।
তিনি শুধুই কবি নন—তিনি এক অবিনাশী প্রতিরোধের নিরালম্ব ভাষ্যকার।
নজরুল ছিলেন না শুধু বিদ্রোহী—তিনি ছিলেন এক বিশুদ্ধ মানবতার বহ্নিশিখা।
========