নির্জনতার জ্যোৎস্নাময় এ রাত্রি যেন অনার্দ্র বিষণ্ণতার মহাকাব্য,
যেখানে আকাশ নিজেকে মেলে ধরে রূপালি শোকে স্নাত এক নীরব সমুদ্ররূপে।
চাঁদের অস্ফুট দীপ্তি যেন এক অন্তর্নিহিত বিলাপ,
যা মেঘের স্নিগ্ধ আবরণে আড়াল হয়ে, নিঃশব্দতার ক্ষীণ কণাগুলোকে ছড়িয়ে দেয় জগতের গহনে।
প্রতিটি নিঃশ্বাসে মিশে থাকা অতীতের অপ্রকাশিত ব্যথারা এ রাতে যেন পায় —
এক শব্দহীন উচ্চারণ, এক ছন্দহীন সংগীত।

নিস্পন্দ বাতাসে ঝুলে থাকে এক অব্যক্ত আকুলতা,  
গাছের স্তব্ধ পত্ররাশি যেন এক নিষ্ক্রিয় শ্রোতা,
যারা চাঁদের নিঃশব্দ ভাষায় শুনে চলে অতীতের অলিখিত গীতলতা।
সে গান—যা উচ্চারিত হয় না,
তবু বেজে ওঠে হৃদয়ের অন্তর্গহনে।
প্রাচীন কালের নির্বাক সাক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ভগ্নপ্রায় স্থাপত্যেরা তাদের গাত্রে বয়ে বেড়ায় আলো ও অন্ধকারের অনাদি খেলা!
প্রতিটি ছায়ায় লুকিয়ে থাকে এক পরিত্যক্ত অপেক্ষা, এক নিঃশেষ অভিমান।

এই চাঁদ, এই রাত—তারা শুধু প্রকৃতির অঙ্গ নয়,
তারা এক অমর অনুষঙ্গ, এক দ্রষ্টা,
যারা লক্ষ করেছে অসংখ্য নিঃশব্দ দীর্ঘশ্বাসের অন্তরাত্মা।
তারা জানে, কিভাবে শব্দহীন বেদনা ভাষার কাঠামো পেরিয়ে, কঠিন শব্দে রূপ নেয় এক গভীর ছন্দে। হৃদয়ের অন্তর্গৃহে, যেখানে আলো পৌঁছায় না,
সেখানে জ্যোৎস্না নেমে আসে এক নীরব কান্নার আর্তনাদ হয়ে—
এক নির্মোহ অনুধ্যান, যা শুধুই অনুভবে ধরা দেয়।

রাত যত গভীর হয়, সময়ের ভার তত গাঢ় হয়ে ওঠে।  
শব্দ পরিণত হয় পাথরের মতো কঠোর ব্যঞ্জনায়,
ভাষা হয়ে যায় জড় ও বিপর্যস্ত।
হৃদয় স্তব্ধ হয়ে পড়ে নিজের নিঃসঙ্গ আর্তিতে,
যেখানে এক শোকসিক্ত দেবীর মতো জ্যোৎস্না নিজেকে অশ্রুতে শুদ্ধ করে চলে—এক অনবদ্য নিঃশব্দতায়। সময় থেমে যায়, জীবনের সকল উন্মাদনা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে,
এক গূঢ় সত্যের সামনে, যা এই রাত্রির জ্যোৎস্নায় অন্বিত হয়:
নির্বাকতা নিজেই এক অনন্ত উচ্চারণ।

========