বৃষ্টি যখন নামে, মনে হয় আকাশের গহীন বিষাদ অশ্রুরূপে ঝরে পড়ে পৃথিবীর বুকে।
যেন এক শোকাভিভূত দেবতার দীর্ঘশ্বাস!
যে তার হারানো স্মৃতির ভার আর সহ্য করতে পারে না।
শহরের গলিগুলো জলে ভিজে ক্লান্ত হয়ে পড়ে, রাস্তাগুলো অবনত মস্তকে সয়ে নেয় আকাশের কান্না।
নিঃসঙ্গ অলিগলিতে পুঞ্জীভূত হয় এক অব্যক্ত বেদনা,
ঠিক তেমনি যেমন হৃদয়ের গোপন কুঠুরিতে জমতে থাকে অতীতের পোড়া দাগ।

প্রতিটি বৃষ্টির ফোঁটা যেন নীরব দীর্ঘশ্বাস, যা মাটিতে আছড়ে পড়ে বিলীন হয়ে যায়!
তবু তার আর্তনাদ থেকে যায় বাতাসে মিশে।
বৃষ্টির একঘেয়ে শব্দে লুকিয়ে থাকে বিষাদের মৃদু গুঞ্জন,
জানালার কাচে জমে ওঠা জলকণাগুলোর মতোই জমে থাকে হাহাকারের স্মৃতি।
দেয়ালের আঁচড়ে ফিরে আসে ব্যথাতুর বিকেল,
ফিরে আসে সেই অসমাপ্ত গল্প, সেই অধরা সঙ্গী—
যার পায়ের শব্দ একসময় আশার দোলা দিত,
আর এখন শুধু শূন্যতার প্রতিধ্বনি হয়ে ফিরে আসে।

বৃষ্টির স্পর্শে বিষাদ নতুন রূপ পায়—
সে রঙিন হয়ে ওঠে ধূসরতায়, সে শব্দ হয়ে ওঠে নিস্তব্ধতায়, সে গন্ধ হয়ে ওঠে সিক্ত মৃত্তিকার দগদগে স্মৃতিতে।
ভিজে মাটির সোঁদা গন্ধ যেন পুঞ্জীভূত আবেগের এক নিঃশব্দ সাক্ষী,
আর বাতাসে ভাসতে থাকে এক অব্যক্ত আকুতি, যার ভার কান্নাকেও ম্লান করে দেয়।

বৃষ্টি আসে, চলে যায়, কিন্তু বুকের গহীনে জমানো শূন্যতা শুকিয়ে যায় না।
সূর্য উঠে, আকাশ উজ্জ্বল হয়, তবু হৃদয়ের মেঘ গাঢ়তর হয়, গভীরতর হয়,
এক নিঃসীম বিষাদে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে অস্তিত্ব।
বৃষ্টি থামে, কিন্তু মনোজগতের নিরবধি ঝড় থামে না,
স্মৃতির গহ্বরজুড়ে সে ঝড় বয়ে চলে অনন্তকাল…

========