মানসিক প্রশান্তির অনুপস্থিতিতে দেহযন্ত্র কেবলই প্রাত্যহিক শ্বাস-প্রশ্বাসের প্রক্রিয়ায় প্রবৃত্ত,
অথচ প্রাণের দ্যুতি সেখানে নিস্প্রভ।
একে বলা চলে অবচেতনের ভারে ক্লিষ্ট, অনুপ্রাণহীন এক পাথুরে অবয়ব!
যা সময়ের অদৃশ্য করালগ্রাসে নুয়ে পড়েছে অস্তিত্বহীনতার গহ্বরে।
শান্তি কোনো পার্থিব প্রাপ্তি নয়,
নয় কোনো গ্রাহ্য বস্তুর অভিজ্ঞান।
এটি এক অন্তর্লীন ভাবাবেগ—মনের প্রাচীনতম স্তরে নিহিত, আত্মার অন্তর্গত প্রাচীরে অলক্ষ্য ও অলঙ্ঘ্য।

শরীর সচল, অথচ চেতনা নির্বিষ।
মন পরিপূর্ণ অথচ শুন্যতায় বিপর্যস্ত।
এই শূন্যতা যেন এক প্রাগৈতিহাসিক ক্লান্তি,
যা হ্রাস করে জীবনের গতি,
নিঃশেষ করে তার সৌন্দর্যবোধ।
এমন এক অন্তরালিক কাঠামো—যা বহিরঙ্গে জীবিত, কিন্তু অন্তর্দহন অনুপস্থিত;
যেন নিছক গতিশীল শবদেহ।
মানুষের মুখাবয়বে নেই প্রাণের দীপ্তি,
শুধু এক নির্বাক শূন্যতা, যা অনুশোচনার অন্তঃসত্ত্বা হয়ে প্রতিফলিত হয় প্রতিটি চাহনিতে।

শহর, যে নিজেই এখন শ্রবণহীন, অনুভূতিহীন এক বস্তুপ্রধান কাঠামো।
মানুষের অন্তঃকাতরতা সেখানে প্রতিনিয়ত চাপা পড়ে যায় যান্ত্রিক শব্দপ্রবাহে।
জীবন ও মৃত্যুর মধ্যে বিভেদরেখা আজ অস্পষ্ট!
দু’টি এক অপূর্ব অথচ ভীতিকর ছন্দে মিশে গেছে। প্রতিটি ব্যক্তি যেন স্থবিরতায় আবদ্ধ এক জীবন্ত মৃতদেহ,
যেন চলমান এক নির্বাক ব্যথা।

তবু, হয়তো শেষ নয়।
অন্তর্জগতের অন্বেষায় যদি পুনর্জাগরণ ঘটে,
যদি চৈতন্যের গহন প্রকোষ্ঠে আবারও উদ্বেলিত হয় জীবনের মৃদু মূর্ছনা,
তবে হয়তো শূন্য নয়নে প্রতিফলিত হবে জীবনের নবআলোক।
হৃদয়ের বৃন্দাবনে পুনরায় প্রস্ফুটিত হবে রক্তিম পুষ্প,  
জীবন পাবে রঙের নব ব্যঞ্জনা।
তখন এ মৃতপ্রায় দেহাবয়বগুলো ফিরে পাবে প্রাণের পূর্ণতা,
ফিরে পাবে অন্তর্লীন রসধারা।

মানসিক শান্তির নিরবচ্ছিন্ন অনুসন্ধানই হতে পারে একমাত্র মন্ত্র,
যা এই স্তব্ধতা-আবদ্ধ শহরে আবারও বপন করবে চেতনার বীজ,
পুনঃপ্রতিষ্ঠা করবে জীবনের মহিমা।
নিঃসন্দেহে, এই নির্জীব প্রলেপের অন্তরালে,
আজও এক নবজীবনের সম্ভাবনা অপেক্ষমাণ।

==========