বিশ্বাস এক অলঙ্ঘ্য অন্তর্লোকের অপরূপ মর্মবস্তু,
এক স্বপ্নময় অনুপম অন্তঃস্থ সৌধ,
যার প্রতিটি ইট নির্মিত আত্মার নির্ভার সংলাপে,
যার প্রতিটি স্তম্ভ ভর করে ভালোবাসার প্রজ্ঞালোকিত নিরবধি অঙ্গীকারে।
অথচ সেই শ্বেতশুভ্র প্রাসাদের নির্জন অঙ্গনেই— একদিন জমাট বাঁধতে থাকে অবিশ্বাসের নিকষ, অনিঃশেষ কালিমা।
সে কালিমা কেবল অন্ধকার নয়,
সে এক অতল, এক ধ্বংসাত্মক নৈঃশেষ্যের মহাকাশ,
যার গর্ভে প্রতিটি শব্দ, প্রতিটি অঙ্গীকার আত্মহত্যা করে।

'সন্দেহ' নিস্তব্ধতার ক্যানভাসে আঁকা এক অতিসূক্ষ্ম বিষরেখা, যেখান থেকে জন্ম নেয় অসীম বিষাদবৃক্ষের শাখাপ্রশাখা।
সেই বৃক্ষের পাতায় পাতায় ঝরে পড়ে নিঃশব্দ বিষফোঁটা, প্রতিশ্রুতিগুলো হয়ে ওঠে মৃত ভাষ্যের নির্বাক প্রতিচ্ছবি।
বাক্যেরা তখন কেবল শব্দ নয়,
তারা হয় ছদ্মবেশী বিষক্রিয়া,
প্রতিটি উচ্চারণে লুকিয়ে থাকে অভিসপ্ত বিভ্রান্তির বিষাক্ত দংশন।
মৌনতাও আর নিস্তরঙ্গ থাকে না;
প্রতিটি নিঃশ্বাস হয় একেকটি অব্যক্ত অভিযোগের অজানা স্তব্ধতা।

সম্পর্কের মৃন্ময় মূর্তি তখন হয় এক পরিণত ধ্বংসস্তূপ,
স্পর্শেরা হয়ে ওঠে ঠাণ্ডা শবের মতো,
বাক্যের অন্তঃসুর হয় ছিন্নভিন্ন বিভ্রম।
একসময় যে ভরসার ডালপালায় বাসা বেঁধেছিল স্বপ্নেরা, সেখানে আজ জড়ো হয় অনিঃশেষ নির্জনতার হাহাকার,
যেন শব্দহীন শ্মশানের মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকা একা কোনো যাত্রী, যার পেছনে শুধু ছায়া, আর সামনে শুধু ধ্বংসস্তব্ধ অনিশ্চয়তা।

অবিশ্বাস কখনো ঘোষিত যুদ্ধ নয়,
বরং নিঃশব্দ বিষক্রিয়ার মতো ছড়িয়ে পড়া এক অন্তঃসলিলা মৃত্যুঘণ্টা।
সে ধীরে ধীরে, নিরবধি, নিঃশব্দে আত্মসাৎ করে সমস্ত উষ্ণতা, সমস্ত নীরব সংলাপ, সমস্ত ভালোবাসার দ্যুতি।
হৃদয়ের মহামঞ্চে তখন শুধু বাজতে থাকে একটিমাত্র অপার্থিব রাগ— বেদনাবিধুর নিঃসঙ্গতা,
বাজতে থাকে এক অনিবার্য অন্তর্সূত্রের শূন্য-মিছিল,
যার কোনো অবসান নেই,
আছে কেবল প্রসারমান ব্যথার অনবসর ধ্বনি।

=========