মানবমন এক অন্তহীন প্রান্তর, যেখানে প্রতিটি মুহূর্তে আলো ও অন্ধকারের এক নীরব দ্বন্দ্ব চলমান।
চেতনাজগতের অদৃশ্য প্রান্তর হতে নেমে আসে এক অবিনাশী ছায়া!
এমন এক ছায়া, যা কেবল দৃষ্টিকে আচ্ছন্ন করে না,
গ্রাস করে আত্মার পরম্পরাগত স্বরূপকেও।
হিংসার আগুনে দগ্ধ অহংকারের কৃত্রিম মঞ্চ,
যেখানে ‘আমি’ নামক মায়াজালের জটিল প্রতিসরণে গঠিত হয় আত্মপ্রতারণার অলীক ভুবন।
আত্মতৃপ্তির মিথ্যা নিরাময় হৃদয়ের গভীরে এক অনুচ্চারিত অসারতা সৃষ্টি করে,
যার উৎস অনুসন্ধান করলে পাওয়া যায় এক লুপ্তপ্রায় আত্মবিস্মৃত মানবতা।
এই মানবতা আজ আর বাহ্যিক রূপরেখায় ধরা পড়ে না;
সে লুকিয়ে থাকে চেতনার গোপনতম দ্বারে,
যেখানে প্রবেশ করতে হলে প্রয়োজন বিশুদ্ধ দার্শনিক অন্বেষা,
প্রয়োজন অন্তর্দর্শনের সূক্ষ্ম আলো।
ভোগের মদিরা পান করে হৃদয়ের খেয়া যখন নিজেরই দিকচক্রবাল ভুলে বসে,
তখনই আমাদের অস্তিত্ব, সময় ও মূল্যবোধের সরল রেখা থেকে বিচ্যুত হয়।
আমরা ক্রমে প্রবেশ করি এক টানেলে,
যেখানে আলোর সংজ্ঞা মুছে যায়,
অন্তরজগৎ হয়ে পড়ে তমসাচ্ছন্ন।
সুখ নামের মায়াবী প্রতিশ্রুতি আমাদেরকে টেনে নিয়ে যায় এক নিরর্থক গতিময়তায়!
যেখানে প্রতিটি পদক্ষেপের পেছনে থাকে অর্থহীন প্রাপ্তির আকুলতা।
আমরা ভুলে যাই—চেতনার প্রকৃত সোপান কখনো বাহ্যরসে গঠিত নয়,
তা নিহিত থাকে জাগতিক লোভ ও মোহের ঊর্ধ্বে,
থাকে এক অনন্ত বোধে।
সততা, এক অদৃশ্য অথচ বিপুল শক্তির আধার;
সে আজ চারপাশের দ্বন্দ্ব, প্রতিযোগিতা ও ক্ষুদ্র স্বার্থের মাঝে হারিয়ে যেতে বসেছে।
কিন্তু তা কি সত্যিই হারায়?
নাকি, আমরা কেবল হারিয়ে ফেলি তা অনুভব করার যোগ্যতা?
তবুও, অস্তিত্বের অন্তঃস্থলে এক ক্ষীণ আলোকরেখা জ্বলজ্বল করে।
জীবনের প্রবাহ মাঝে মাঝে স্থির হয়,
আর সেই থেমে যাওয়ার নীরবতায়,
উঁকি দেয় এক বিপ্লবী বোধ!
যা বলতে চায়, ‘সব হারালেও, আশাবাদকে হারানো যাবে না।’
আলোকস্পর্শ হয়তো সাময়িক, ক্ষণজন্মা,
তবুও তার প্রতিটি চুম্বন আত্মাকে মনে করিয়ে দেয় তার চিরন্তন পরিচয়।
অন্ধকার যত গভীর, তার তলেই থাকে আলো জন্মানোর ভূমি।
থাকে এই বিশ্বাস, এই প্রতীক্ষা,
তাই শুধু কোনো ধর্ম, মত বা ভাবনা নয়,
বরং মানুষের অস্তিত্বের মৌলিক ভাবনা'ই সত্য।
কারণ, আলোর জন্য আকুল হওয়াই তো মানুষ হওয়ার প্রকৃত অর্থ।
এমন আকুলতা, যা যুক্তি ছাপিয়ে চলে যায়,
আর ধ্যানের গভীরে জন্ম দেয় এক অনন্ত আলো-আত্মার সংলাপ।
==========