অচেতন চেতনার অন্তস্তলে নিঃশব্দ প্রলেপে যে অতীন্দ্রিয় ধ্বনি প্রতিধ্বনিত হয়,
তার ব্যাখ্যা নেই কোনো ভাষায়!
সে এক অপার্থিব প্রণব, অন্তর্মুখী আকুলতা।
স্বপ্নচিত্রের পটভূমিতে মৃদুমন্দ ছায়াচ্ছন্না রূপসী যেমনি ঘোর বাস্তবতা ছুঁয়ে যায়,
তেমনিই অজ্ঞেয় অনুভব এক মুহূর্তে হৃদয়ের সমগ্র অভিধানকে ব্যর্থ করে তোলে।

অচেতন চেতনার অন্তর্গত নীরব আলোকে
সারাক্ষণ এক অতীন্দ্রিয় প্রতিধ্বনি জাগে—
না সে শব্দ, না সুর,
তবুও তার স্পন্দনে বেঁধে যায় হৃদয়ের অন্তঃস্থ ধমনী,
যেন আত্মা নিজেই নিজের গভীরে শ্রুত হয়
অব্যক্ত এক প্রণবের গূঢ় তরঙ্গ।

সেই ধ্বনির নেই কোনো ভাষা,
নেই কোনো উচ্চারণযোগ্য অনুবাদ!
সে ধরা পড়ে না ব্যাকরণে, বোঝা যায় না যুক্তিতে।
তবুও, এক অভিজ্ঞানরূপে সে ছুঁয়ে যায় অস্তিত্বের নিরাভরণ আঙ্গিনা,
যেখানে সংজ্ঞাহীন অনুভবেরা
ধরা দেয় এক নিষ্প্রশ্ন বোধের মৌনতায়।

স্বপ্নচিত্রের স্নিগ্ধ পটভূমিতে
আস্তে আস্তে উদ্ভাসিত হয় এক ছায়ারূপা রূপসী—
তার চোখে নিরবতার কালো জ্যোৎস্না,
তার চরণে ধ্বনিহীন গতির অলীক ধ্বনি।
সে যেন এক নিঃশব্দ আলোর মূর্ত প্রতীক,
যার সংস্পর্শে বাস্তবতা মরে গিয়ে জন্ম নেয়
এক অস্পষ্ট, অথচ অমোঘ সত্য।

সে সত্য নয় জ্ঞানের, নয় কোনো বুদ্ধির উপপাদ্য—
বরং এক অনুভব, যা হৃদয়ের নিজস্ব ভাষাকেও ব্যর্থ করে,
সমস্ত অভিধান, সমস্ত শব্দভাণ্ডার
তার সামনে নিঃসহায় হয়ে পড়ে থাকে
নিভৃতে, কৃতজ্ঞতায়, অব্যক্ত বিস্ময়ে।

তখন সমস্ত যুক্তি, দর্শন, চেতনা
মিশে যায় সেই নিঃশব্দ প্রণবের ছায়ায়—
যা একান্তই নিজের, একান্তই অন্তর্মুখী,
যা প্রতিধ্বনিত হয় হৃদয়ের গহীন কুঠুরিতে—
অদৃশ্য, অথচ অনিবার্য এক আকুলতায়।

=========