পরিবার এক বহুস্বরিক জৈব-সঙ্গতি,
যেখানে প্রত্যেকটি সত্তা একেকটি আন্তর্গত গ্রহপিণ্ড,
আবর্তিত হয় একে অপরের অভিকর্ষে,
তবু বিস্ময়করভাবে বজায় রাখে নিজস্ব কক্ষপথ।
এখানে সম্পর্ক নিছক সংজ্ঞা নয়,
বরং তা এক পরস্পরনির্ভর সংকেত-স্ফুটন—
যার অনুরণন ঘটে অভিব্যক্তিহীন সহমর্মিতায়,
আর স্পর্শহীন আদর্শে।

সংসারিক চৈতন্য এখানে কঠিন কাঠামো নয়,
বরং এক প্রবহমান তরল সমীকরণ,
যা পরিবর্তিত হয় প্রতিটি মানসিক ভূমিকম্পে,
কখনো হয়ে ওঠে প্রশান্তির ভূ-অভ্যন্তর,
আবার কখনো আত্মপরিচয়ের এক অদৃশ্য ছায়াকোষ।
পরিবার—এ যেন অন্তর্লীন আত্মপ্রবাহ,
যেখানে ভালোবাসা উচ্চারিত নয়,
বরং তা সঞ্চারিত হয় বেদনার বিনিময়ে বিনির্মিত আস্থার প্রবাহরেখায়।

মাতা এখানে এক নীরব গ্র্যাভিটেশনাল ফোর্স,
যার আকর্ষণ কোনো প্রদর্শনী নয়,
তবু সে-ই ধারণ করে সমগ্র বলয়কে;
পিতা এক মৌন অবকাঠামো—
ভিতরে লুকানো শক্তি, যার উপর দাঁড়িয়ে থাকে সংসারের সমগ্র ভারসাম্য।
সন্তানেরা হলো সেই অর্ধগঠিত ভবিষ্যৎ,
যাদের প্রতিটি অভিজ্ঞতা রচে এই বলয়ের পরবর্তী অধ্যায়।

যান্ত্রিকতার সংজ্ঞায় পরিবারকে খণ্ডিত করা যায় না,
কারণ এর শিকড় প্রোথিত থাকে চেতনার গহ্বরে,
আর ফলাফল ধরা দেয় আত্মিক পরিতৃপ্তির অনির্বচনীয় আলোকে।
যেখানে পরিবার নেই, সেখানে প্রাপ্তি এক নির্বাসিত গর্ব,
আর ক্লান্তি—নির্বোধ একাকিত্বের অনুরণিত অভিশাপ।

পরিবার একমাত্র সেই অন্তঃস্থ সংলাপ,
যেখানে ‘আমি’ আর ‘তুমি’ বিলীন হয়ে গড়ে ওঠে এক সম্মিলিত চেতনার প্রতিধ্বনি।
এ এক আত্মিক আশ্রয়স্থল,
যেখানে শব্দ নয়, সহনশীলতাই হয়ে ওঠে মৌলিক ভাষা,
আর ভালোবাসা—তাত্ত্বিক নয়, অস্তিত্বগত।

=========