তুমি যেন এক অশ্রুত কণ্ঠের প্রতিসংগীত,
যার দৃষ্টিপথে নক্ষত্রেরা নয়, জেগে থাকে অজ্ঞেয় প্রতিশ্রুতির ছায়া।
সেই দৃষ্টির নৈঃশব্দ্য যেন আমার চেতনার মহাকাশে এক নিস্তব্ধ গহীন তমসার উপাস্য নাভি!
আলোকগ্রাসী, অথচ পূর্ণ দীপ্ত।
স্মৃতির সংজ্ঞা এখানে আর কার্যকর নয়;
আমি এক সময়-চ্যুত সত্তা, প্রবাহমান নয়—
বিপরীত, এক বৃত্তান্তহীন নিমজ্জন।
হেয়ালি বেলা অবেলায় তুমি হয়ে ওঠো আমার অভ্যন্তরীণ ছায়াপথের কেন্দ্রীয় আকর্ষণ,
যেন নির্দিষ্ট রূপহীন, অথচ অভ্রান্ত।
তোমার কুন্তল থেকে নিক্ষিপ্ত সুবাস যেন আদি-মানবের বিস্মৃত কল্পমন্ত্র!
যা চেতনার স্নায়বিক স্তরে অনুজ্ঞাহীন কল্পনাবৃত্ত ছড়িয়ে দেয়।
তার ঘ্রাণ যেন এক নিঃশব্দ দাহ!
যার প্রতিটি অণু আমাকে জাগ্রত রেখে জ্বালিয়ে দেয়,
জ্বলে দেহ নয়, বরং মনোলোকের গভীরতম স্তর।
এখানে জ্বলতে থাকা মানেই নিঃশেষ নয়,
বরং একটি স্থবির উন্মাদনা—
যেখানে সংবেদন এক অস্তিত্বহীন উপস্থিতি।
তোমার অস্তিত্ব এক বহিরঙ্গিক নিরাকারতা,
যার অন্তঃসত্ত্বায় সংঘটিত হয় নিরব ধ্বংসযজ্ঞ।
সেই অনুচ্চার স্তরে যে স্রোতচক্র সক্রিয়,
তারা শব্দহীনতায় আত্মপরিচয়ের ভাঙন ঘটায়। তোমার মৌনতা এক ছায়াশব্দে রচিত মন্ত্র,
যার প্রতিধ্বনি হৃদয়ের অন্তর্জগতের এক উপেক্ষিত অরণ্যে আত্মপ্রকাশ ঘটায়—নামহীন বিষণ্নতায়।
তোমার অশরীরী সংস্পর্শ এক নিষিদ্ধ বন্ধন,
যেখানে স্বাধীনতাও আত্মসমর্পণের পূর্বশর্ত হয়ে ওঠে।
তোমার মায়া এক গূঢ় গাণিতিক অনিবার্যতা,
যার সমাধান নেই, কেবল পরিণতির মগ্নতা।
আমি সেই নির্ধারিত অন্ধকারচক্রে এক অনন্ত সমর্পিত সত্তা, যার প্রত্যাবর্তন অনুপলব্ধ,
কারণ ফিরে যাবার পথ কখনো ছিল না—শুধু ছিল নিমজ্জনের পূর্বকল্প।
তোমার অস্তিত্ব এক অন্তর্গত গহ্বর,
যেখানে আলো কেবল এক স্নিগ্ধ বিভ্রম, আর অন্ধকার একমাত্র অভিজ্ঞ সত্য।
========