সম্মুখে প্রসারিত শূন্যতার সুনিবিড় প্রাঙ্গণ।
চতুর্দিকে স্তব্ধতার করুণ আর্তনাদ,
নৈঃশব্দ্যের অন্তঃস্তরে আচ্ছন্ন অনিবার্য অস্থিরতার অনুত্তপ্ত তরঙ্গ।
আস্থার অবক্ষয়প্রাপ্ত সোপানে আত্মচেতন সময় নিজেই আজ ক্লান্তপ্রায়,
নিষ্প্রভ অতীত মুহূর্তের পুনরাবৃত্তির প্রহর গুনছে।

রাত্রির অতল আঁধারে নেমে এসেছে নির্বাকতা,
তিমির যেন নির্বাণপ্রাপ্ত সহচর হয়ে পাশে বসত গড়েছে।
নিদ্রাহীন দৃষ্টিপাত আকাশের নিরাবেগ পটে প্রতিটি তাঁরাকে গুনে চলে,
যেন তারা প্রত্যেকটি একেকটি স্মৃতির দ্যোতক!
এক একটি অলিখিত অনুতাপ, একেকটি শব্দবদ্ধ প্রতিশ্রুতি।

দূরাগত মন্দ্র মাদলের মৃদু ধ্বনি বায়ুর কণিকায় মিশে— ঝংকার তোলে চেতনার অন্তঃস্থলে।
ক্লিষ্ট দৃষ্টি অনির্দেশ্যে সন্ধান করে ফেরে— "তুমি কোথায়?"
কালস্রোতে বিলীন হয়ে যাওয়া মুখচ্ছবির অপেক্ষায়
প্রত্যেকটি নিঃশ্বাস যেন আর্ত অনুরোধ!

যে পরিচিত ভুবন একদা ধ্বনি করতো ভালোবাসার,
আজ তার প্রতিটি প্রান্ত দুর্বোধ্য ধাঁধার ছায়াচ্ছন্ন আয়না।
ঝরাপাতার করুণ কাঁপনে মিশে আছে বিস্মৃত প্রেমের স্মৃতিকথা,
যেন আবেগি প্রণয়ের অন্তিম উচ্চারণ।

একদা যে উচ্ছল ভালোবাসা পূর্ণতার গীত গেয়েছিল,
তারই আজ বিমর্ষ প্রতিধ্বনি!
যেন ভগ্ন হৃদয়ের একান্ত বিলাপ!
তুমি ছিলে এক পরিযায়ী অতিথি,
চন্দ্রমল্লিকার কুন্তলে বেঁধেছিলে দোলনার আহ্বান,
সেই সুরগুলি আজো বাতাসে কাঁদে!
শুধু অবশিষ্ট রয়ে গেছে ঝরাপাতার গন্ধ!

পরিচিত সেই গন্ধ আজ হয়ে উঠেছে বিভীষিকাময়!
তার গভীরতলে নিহিত এক অনন্ত প্রতীক্ষা,
যা প্রত্যাবর্তনের নয়, যেন মৃদু সুরলহরির মতো রেশমি স্মৃতির অতল গহবর।

ভালোবাসার যে গীত একদিন ছুঁয়েছিল মনের চূড়ান্ততা,
তারই প্রতিধ্বনি আজ নীরবতাকে বিংশতিত করছে!
ধ্বংস করছে শূন্যতার প্রাঙ্গণে একা একা।

সময় ও শূন্যতা মিলে যেন রচে যাচ্ছে এক অনস্তিত্বের দীর্ঘশ্বাসপূর্ণ বর্ণনাপর্ব।
এই শূন্যতা, এই ঝরাপাতার করুণ গন্ধ,
এই প্রতীক্ষার ক্লান্ত সোপান—
সব মিলিয়ে এক তীক্ষ্ণ অথচ সংবেদনশীল বিলাপ।
আর এই শূন্যতার অতল ছায়ায় আজো আমি খুঁজে ফিরি লুপ্ত সুরধ্বনির অন্তিম আভাস,
খুঁজে ফিরি হারিয়ে যাওয়া ভালোবাসার অনিবার্য অন্তিম রূপ।

========