যেন দুটি ভিন মাস, জানুয়ারি আর সেই তো ডিসেম্বর,
কাছে থেকেও বহু দূরে, নিয়তির কঠিন নিঝুম্বর।
ফিসফিসিয়ে কয় সে, "কাছে আসা নাহি আর হবে কভু,
তুমি তো রয়েছ দূরে, দশ মাসের দীর্ঘ ব্যবধান লভু।"
হেসে কয় সেও ধীরে, "ঠিক পিছেই আমি তো রয়েছি দাঁড়ি,
অত দূরে ভাবো কেন, এই তো আমি তোমারই সারি।"
এক মাস তো কাছে বাঁধা, তবু যেন বর্ষ-পরম্পরা,
হয়তো কখনো গাঁথা হবে না তো কোনো নতুন ইশারা।
তবুও তাহার মনে চিরদিন রবে সেই প্রিয় অধ্যায়,
আর সে তো এমন ভাষা, বোঝে না সে এখন আর হায়।
তবুও অক্ষরগুলি যেন তার চেনা চেনা লাগে ফের,
স্মৃতিরা ধূসর হলেও, পড়া যায় যেন অস্ফুট স্বরের রের।
তাহার নয়ন দেখেছিলো প্রেমেরি উজ্জ্বল কিরণখানি,
অথচ তাহার মুঠো ভরে ছিলো শুধু ব্যথারই কাহিনী।
কহে সে তখন, "আমায় খুঁজো সেই ভিড়ে যেখানে লোক কম,
আকাশ যেখানে নীল, আর বাতাস বহে অবাধ, মনোরম।"
সেও কহে ব্যাকুলিয়া, "খুঁজো মোরে বিস্মৃতির মাঝে তুমি,
যে জন আমারে খোঁজে, সেই পথেই পাবে ওগো অমি।
অদেখা লোকের সাথে পাবে মোর নীরব সঙ্গোপন।"
যেন ধীরে ধীরে খোলে কবিতার কোনো পুরাতন স্তব-
সে ছিলো প্রভাত-রবি, আর সে তো গভীর রাতের নীরব।
যেন এক তীব্র ঢেউ, আঘাত হানিত তার হৃদয়-তীরে অনিবার,
আর সেই গভীর কালো আঁখি যেন কৃষ্ণগহ্বর সুবিশাল তার।
টানিয়া লইত কাছে, যেন মহাকর্ষেরই প্রবল আহ্বান।
অবশেষে হয়তো তারা হবে যেন আকাশ আর সিন্ধু জল-
সে চেয়ে রবে সতত, আর সে তো দেখাবে প্রতিচ্ছবি অবিকল।
কাঁদিলে যখন সে, বেদনারা ঝরিতো বারিধারা সম,
সে খুলিত হৃদয় তার, রাখিবে অনন্তকাল সেই ব্যথা মম।
হয়তো কখনো তারা পৌঁছাবে না একে অপরের কাছে-
তাইতো সে শুধালো তবে, "আমরা কি ছিলাম না তারকার ঝাঁঝে?"
সে মৃদু হাসিয়া কহে, "আমরা কি ছিলাম না সমুদ্রের লবণ-মাঝে?"
"একটি লম্ফ দাও তবে," ফিসফিসিয়ে কহিল সে ধীরে,
"ধরা কি পড়িবে কভু?" দ্বিধা ভরে শুধালো সে ফিরে।
তারপরে ঝাঁপালো সে, আর সে তো ধরিয়াছিলো তারে আঁখি-
মিলন ঘটিল তবে, আর ঝরিল অঝোর বারিধারা ডাকি।